আইন হাতে তুলে নেয়ার অশুভ চর্চা
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১৮ জুন, ২০১৬, ০৯:৪৩:৫৩ রাত
আইন প্রনয়ন ও প্রয়োগের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আর রাষ্ট্র আইন প্রয়োগ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থারও স্তর বিন্যাস রয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরও স্বেচ্চাচারিতার কোন সুযোগ নেই। মূলত রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো দুষ্টের দমন আর শিষ্টের লালন করা। কিন্তু রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালন করতে পুরোপুরি সফল হচ্ছে বলে মনে হয় না বরং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই অনাকাঙ্খিতভাবে আইন হাতে তুলে নেয়ার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। যা শুধু অনাকাঙ্খিত নয় বরং আমাদের জন্য দুর্ভাগেরও।
হালে রাষ্ট্রের আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। শুধু আইন হাতে তুলে নেয়া নয় বরং রাষ্ট্রের পক্ষে আইনভঙ্গেরও মহোৎসব চলছে। বিনা পরওয়ানায় গ্রেফতার আইন বিরুদ্ধ হলেও সাম্প্রতিক সময়ে সাঁড়াশি অভিযানে তা মোটেই মানা হয়নি। ফলে দেশে আইনের শাসন এখন রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ। এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, মানবাধিকার সংগঠন ও বুদ্ধিজীবীমহল বেশ সোচ্চার হলেও সরকার তা আমলে নিচ্ছে বলে মনে হয় না। ফলে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। নাগরিক হচ্ছে অধিকার বঞ্চিত। কিন্তু ভুক্তভোগীরা এর কোন প্রতিকার পাচ্ছে না।
সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির পক্ষে সভাপতি সুলতানা কামাল বলেছেন, “রাষ্ট্র কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে”। ‘সুশাসনের অভাব থাকলে পদে পদে মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঘটতে থাকে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।’
‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশ’ নামের একটি উদ্যোগের আত্মপ্রকাশ নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ আমাদের বলছে, ক্রসফায়ার হওয়ার পরে আপনারা কথা বলছেন কেন? যাদের ক্রসফায়ারে দেওয়া হচ্ছে, তারা অন্যের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। অতএব তাদের মানবাধিকার নেই। এই যে একটা বোধ সমাজে চলে আসে, যেনতেনভাবে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে এটা কোনো আধুনিক, গণতান্ত্রিক, সুশাসনসম্পন্ন রাষ্ট্রের লক্ষ্য নয়।’
সুশাসনের অভাবের একপর্যায়ে সমাজে হতাশা তৈরি হয় উল্লেখ করে সুলতানা কামাল আরও বলেন, ‘হতাশা থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাষ্ট্র নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে। কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। কোনো সমস্যা সমাধান করতে গেলে ছোটখাটো পথ খুঁজছে। অন্যদিকে মানুষ মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে।
টিআইবি সভাপতির সাম্প্রতিক অভিযোগ বেশ ভয়াবহ বলেই মনে হচ্ছে। তিনি আইন হাতে তুলে নেয়ার জন্য রাষ্ট্রকেই অভিযুক্ত করছে যা মোটেই কাঙ্খিত নয়। মূলত দেশের আইনশঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। দেশে গুপ্ত হত্যা চলছে অপ্রতিরোধ্যভাবে। বিচারবিহির্ভূত হত্যাকান্ডও চলছে সমান তালে। সম্প্রতি মাদারীপুরে শিক্ষকের উপর হামলায় গ্রেপ্তার গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম রিমান্ডে থাকা অবস্থায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। যা দেশের সচেতন মানুষকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।
১৮ জুন সকালে ফাহিমের লাশ মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেছেন, ভোররাতে সদর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মিয়ারচরে এই ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়। নিহত ফাহিমের হাতে হাতকড়া ছিলো বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। তার বুকের বাম পাশে রক্তাক্ত জখম রয়েছে।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ফাহিমের নিহত হওয়ার ঘটনাকে রহস্যজনক হিসাবেই মনে করছে। কারণ, ফাহিম ছিল পুলিশি হেফাজতে। তাই তার পক্ষে বন্দুক যুদ্ধে অবর্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ। আর টিআইবির সভাপতি এ ধরনের ঘটনাকে রাষ্ট্রের আইন হাতে তুলে নেয়া বলে আখ্যা দিয়েছেন। দুর্ভাগ্যজনক হলে সত্য যে রাষ্ট্রই যদি আইন হাতে তুলে নেয় তাহলে আইন মান্য করবে কারা ? দেশে সুশাসনই বা কী করে প্রতিষ্ঠিত হবে ? এ প্রশ্ন এখন সচেতন মানুষের মুখে মুখে।
বিষয়: বিবিধ
৮১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন