সাঁরাশি অভিযানের কথকথা

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১৭ জুন, ২০১৬, ০৬:৪১:১০ সন্ধ্যা

সারাদেশে চলমান গুপ্তহত্যা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির প্রেক্ষাপটে সরকার জঙ্গী পাকরাওয়ের ঘোষণা দিয়ে পরিচালনা করলো সাঁরাশি অভিযান। কিন্তু এই অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্কের কোন শেষ নেই। সরকার পক্ষ এ অভিযানকে সম্পূর্ণ দলনিরপেক্ষ ও অপরাধী ধৃত করার অভিযান বললেও পর্যবেক্ষক মহল বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছেন শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করার জন্যই পবিত্র রমজান তথা ইবাদাত-বন্দেগীর মাসে কথিত এই অভিযান চালানো হয়েছে। যা দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

এই অভিযানে যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা প্রায় সকলেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। পুলিশ কিছু সংখ্যক জঙ্গী ধরার বললেও তা নিয়ে বাজারে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অনুরূপ অভিযোগই করছেন। এমনকি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এ অভিযানের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানও এ নিয়ে প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতও এই অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একমাত্র সরকার পক্ষ ছাড়া এই অভিযান কেউই সমর্থন করছে না। ফলে বিতর্কটা বেশ জমে উঠেছে।

পুলিশের সাঁরাশি অভিযানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জনা গেছে। কোন প্রকার পরওয়ানা ছাড়া গ্রেফতার না করার ব্যপারে দেশের উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকতেও এই অভিযানে তা মানা হয়নি বলে অভিযোগ আছে এবং ভুক্তভোগীরাও সে অভিযোগই করছেন। অভিজ্ঞজনরা বলছেন, রাষ্ট্রই যদি আইন ভঙ্গ করে তাহলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে কীভাবে ? কিন্তু এটিই বাস্তবতা বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ বেশ সোচ্চার হলেও সরকারকে তা আমলে নিতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে জনমনে একটা চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। যা এক সময় গণঅসন্তোষের সৃষ্টি করতে পারে।

এদিকে সাঁড়াশি অভিযানের নামে সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে জঙ্গি বানানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদপত্রের কালো দিবস পালন উপলক্ষে 'গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও আজকের বাস্তবতা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, আন্দোলনরত বিরোধী দলের নিরপরাধ, নিরীহ কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। প্রকৃত কোনো জঙ্গিকে ধরা হয়নি। সন্দেহভাজন বলে যে ১৪৫ জনকে ধরা হয়েছে তাদের পরিচয় নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিরোধী দলের যেসব নেতাকর্মীকে ধরা হয়েছে তাদের কাছ থেকে এখন জঙ্গি বলে স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেভাবেই হোক বিরোধী দলকে জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করাই তাদের লক্ষ্য।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকােেন্ডর খবর গণমাধ্যমে সঠিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে না মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, অধিকাংশ মিডিয়ার মালিক হয় সরকারের পক্ষের, না হয় ভয়ে মুখ খুলছেন না। কিন্তু এর পরিণাম ভালো হবে না। আপনারাও এই সরকারের হাত থেকে রেহাই পাবেন না।

ভারতের কাছে সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়া হচ্ছে দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনার বক্তব্য হলো তোদের যত লাগে নাও, শুধু আমার সিংহাসন আর মুকুটটি যেন ঠিক থাকে। আর তারা বলছে হাসিনা অকৃত্রিম বন্ধু। তিনি বলে, বন্ধু আপনাদের হতে পারে, দেশের মানুষের না।

বিএনপির পক্ষে যে সব অভিযোগ করা হয়েছে তা রীতিমত গুরতর। দাবি করা হয়েছে যে, সরকার রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের জঙ্গী বানানোর ষড়যন্ত্র করছে এবং যাদেরকে জঙ্গী তকমা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের পরিচয় নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে। এমনকি সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি দেশ বিক্রির অভিযোগ তুলেছে। যা বেশ গুরুতর। তাই সদ্য সমাপ্ত সাঁরাশি অভিযান নিয়ে যেসব প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনের দায়িত্ব সরকারেরই। দেশের মানুষ সরকারের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে।

বিষয়: বিবিধ

১০৩৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

372358
১৮ জুন ২০১৬ সকাল ১১:১৪
হতভাগা লিখেছেন : এই অভিযানে পুলিশভায়াদের ভালই ইনকাম হয়েছে
372407
১৮ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:৩৭
সৈয়দ মাসুদ লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File