মাহে রমজান ও মাগফিরাত
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১৬ জুন, ২০১৬, ০৬:০৭:২৩ সন্ধ্যা
ফারসি শব্দ রোজার আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘সাওম’। যার বহুবচনে হচ্ছে ‘সিয়াম’। ‘সাওম’ বা ‘সিয়াম’ এর অর্থ বিরত থাকা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ‘সাওম’ হল আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে ও তার সন্তষ্টি অর্জন করে পরকালীন পুরুষ্কার লাভের আশায় নিয়তসহ সুবহে সাদিকের শুরু থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকা। মূলত পবিত্র মাহে রমজান মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিছু বৈধ উপকরণের সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকেন। আর যারা আল্লাহ নির্দেশিত ও রাসুল (স.) অনুসৃত পথে যথাযথভাবে সিয়াম পালন করেন, তাদের জন্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মহাপুরুষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। মূলত ২য় হিজরীর শাবান মাসে মদীনায় রোজা ফরজ সংক্রান্ত আয়াত নাজিল হয়। এতে বলা হয়, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো, যেভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো”। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)। সূরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সেই মাসকে পায় সে যেন রোজা রাখে’।
পবিত্র কালামে পাকের ঘোষণা মতে রোজা শুরু আমাদের উপর ফরজ করা হয়নি বরং আমাদের পূর্বেকার বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর ওপরও রোজা ফরজ করা হয়েছিল। মানবজাতি যাতে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আত্মগঠন করতে পারে এই জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এই বিধান মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে দিয়েছে। রোজা যে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর উপরও ফরজ ছিল তা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়। ঈসা (আ.)-এর অনুসারীদের (খ্রিস্টান) মধ্যেও রোযা রাখার নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল বা New Testament-এ উল্লেখ আছে : অর্থাৎ ঈসা (আ.) চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত্রি রোযা রেখে তারপর রোযা ভঙ্গ বা ইফতার করতেন। রোযাদারদের সম্পর্কে বাইবেলে: “And when he (Jesus) had fasted forty days and forty nights, he was afterward unhungered” (Mathew- 4: 2).
ঈসা (আ.)-এর উক্তি এভাবে উল্লেখিত হয়েছে : “Blessed are they which do hunger and thirst after righteousness : for they shall be filled” (Mathew-5 : 6). অর্থাৎ তারাই ভাগ্যবান যারা সৎকর্ম সাধনের পর রোযা রেখে ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কষ্ট ভোগ করে। তাদেরকে অবশ্যই (পরকালে) তৃপ্তি সহকারে আহার ও তৃষ্ণা নিবারণের ব্যবস্থা করা হবে। রোযা রাখা সম্পর্কে ঈসা (আ.) যে ধরনের নির্দেশ দিয়েছেন, ইসলামের রীতি-নীতির সাথে তা বহুলাংশে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাইবেলের বর্ণনা :
"Moreover when ye fast, be not, as the hypocrites, of a sad contenance : for they disfigure their faces, that they appear unto men to fast. Verily I say unto you, They have their reward. But thou, when thou fastest, anoint thy head, and wash thy face” (Mathew- 6:26-27).
ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের মধ্যে রোজাও একটি। হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ইসলাম ৫টি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। সেগুলো হলো- একথায় স্বাক্ষ্য দেয়া যে, এক আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল। সর্বোপরি নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা, হজ্জ পালন করা এবং রমজান মাসে রোজা রাখা। ( সহীহ্ আল বুখারী)
পবিত্র আল কুরআনের নির্দেশনা ও হাসিদের ভাষ্যমতে সিয়াম পালন করা আমাদের উপর অত্যাবশ্যকীয় করে দেয়া হয়েছে। মানুষ যাতে আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠন করে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জন করতে পারে সেই জন্য আল্লাহর এই বিধান। আসলে আল্লাহ মানুষকে দুনিয়াতে খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন। খলিফা শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘প্রতিনিধি’। ইংরেজীতে বলা হয়েছে ‘Ô Representative’ আর খলিফা বা প্রতিনিধির দায়িত্ব হলো তাকে যেভাবে যা করার আদেশ করা হয় তা যথাযথাভাবে পালন করা। আর আল্লাহ আমাদেরকে দুনিয়াতে খলিফা প্রেরণ করে আমাদের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। আর এই নির্দেশনার পূর্ণাঙ্গ রূপই হচ্ছে মহাগ্রন্থ আল কুরআন। রাসুল (সা.) তার বিদায় হচ্ছের ভাষণে বলেন, ‘আমার অবর্তমানে তোমরা যদি দু’টি জিনিষ আঁকড়ে ধরতে পার তাহলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ঠ হবে না। আর তা হচ্ছে, কিতাবুল্লাহ বা আল কুরআন আর অপরটি রাসুল (সা.)এর সুন্নাহ। মানুষ যাতে সেসব নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করে সে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর খলিফা হিসাবে তা আমাদের জন্য অবশ্য পালনীয়।
মূলত রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির মাস পবিত্র মাহে রমযান। এ মাসেই বিশ্বমানবতার মুক্তির সনদ পবিত্র আল কুরআন নাযিল হয়েছিল। আর কুরআন নাজিল হওয়ার হওয়ার কারণেই রমজান মাস অধিক মহিমান্বিত। আর এ মাসেই এক মহামহিমান্বিত মাস রয়েছে। যা হাজার রাতের চেয়ে উত্তম। পবিত্র কুরআনে রাতকে ‘লায়লাতুল ক্বদর’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আসলে কুরআন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত ও ম’ুজেজা। মূলত কুরআন হচ্ছে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী এক মহা ঐশী গ্রন্থ। আল কুরআনেই মানুষের সকল সমস্যার যৌক্তিক ও কাঙ্খিত সমাধান রয়েছে। তাই আর্ত-মানবতার মুক্তির জন্য আমাদেরকে কুরআনের আদর্শের দিকেই ফিরে আসতে হবে। আর ওহীর আদর্শ সমাজের সকল ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠার মধ্যেই রয়েছে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়সহ সকল সমস্যার সমাধান। তাই দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির জন্য কুরআনের আদর্শ অনুসরণের কোন বিকল্প নেই।
কুরআন ও রমজান সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ রোযার মাস (এমন একটি মাস)-যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, আর এ (কুরআন হচ্ছে) মানব জাতির জন্য পথপ্রদর্শক, সৎপথের সুষ্পষ্ট নিদর্শন, ( সত্য-মিথ্যার) পার্থক্যকারী। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে এতে রোজা রাখবে; (তবে) যদি সে অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা সফরে থাকে, সে পরবর্তী ( কোনো সময়ে) গুনে গুনে সেই সংখ্যক দিন পূরণ করে নেবে; ( এ সুযোগ দিয়ে) আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সাথে ( তোমাদের কাজকর্মকে) সহজতর করে দিতে চান, আল্লাহ তায়ালা কখনোই তোমাদের (সৎকর্মকে) কঠোর করে দিতে চান না। আল্লাহর উদ্দেশ্য হচ্ছে তোমরা যেন গুনে গুনে ( রোজার ) সংখ্যাগুলো পুরণ করতে পার, আল্লাহ তোমাদের (কুরআনের মাধ্যমে জীবন যাপনের) যে পদ্ধতি শিখিয়েছেন তার জন্য তোমরা তার মহাত্ম বর্ণনা করতে এবং তার কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পার। ( সুরা আল বাকারা-১৮৫)
আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনের মাস পবিত্র মাহে রমজান। শুধু পানাহার ও কামাচার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম সাধনা নয় বরং যাবতীয় পাপাচার থেকে নিজের নফস ও প্রবৃত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে দুনিয়াবি সকল লোভ-লালসা ও ইন্দ্রিয়পরায়নতার উর্দ্ধে থেকে ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠার স্¦প্ন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালানোয় রমজানের প্রকৃত শিক্ষা। হাদিস শরীফে উল্লেখিত হয়েছে, নবী করীম (সা.) বলেছেন, কেউ যদি (রোজা রেখেও) মিথ্যা কথা বলা ও খারাপ কাজ পরিত্যাগ না করে তবে তার শুধু পানাহার ত্যাগ করা (অর্থাৎ উপবাস ও তৃষ্ণার্ত থাকা) আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (সহীহ আল বুখারী)
পবিত্র মাহে রমজানের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে-
১.প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলিম)
২. হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম)
৩. সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের লাভের আশায় রমযান মাসের রাতে এবাদত করে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করে কাটাবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম)
৪. রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেকটি কাজই তার নিজের জন্য। তবে রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। রোজা (জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচার জন্য) ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ রোজা রেখে অশ্লীল কথাবার্তায় ও ঝগড়া বিবাদে যেন লিপ্ত না হয়। কেউ তার সঙ্গে গালমন্দ বা ঝগড়া বিবাদ করলে শুধু বলবে, আমি রোজাদার। সেই মহান সত্তার কসম যার করতলগত মুহাম্মদের জীবন, আল্লাহর কাছে রোজাদারের মুখের গন্ধ কস্তুরীর সুঘ্রানের চেয়েও উওম। রোজাদারের খুশির বিষয় ২টি- যখন সে ইফতার করে তখন একবার খুশির কারণ হয়। আর একবার যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রোজার বিনিময় লাভ করবে তখন খুশির কারণ হবে। ( সহীহ আল বুখারী)।
৫. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, রাসুলে পাক (সা.) বলেছেন, রোজা এবং কোরআন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি তাকে (রমজানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুণ। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন। অতএব, উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে (এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে)। (বায়হাকী)
৬. হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন রমজানের প্রথম রাত আসে শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই খোলা হয় না। বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই বন্ধ করা হয় না। এ মাসে এক আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, হে ভালোর অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে মন্দের অন্বেষণকারী! থামো। আল্লাহ তায়ালা এ মাসে বহু ব্যক্তিকে দোযখ থেকে মুক্তি দেন। আর এটা এ মাসের প্রতি রাতেই হয়ে থাকে। (তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)।
পবিত্র মাহে রমজান সবর ও পরস্পরের প্রতি সহানুভূতির মাস। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষুন্নিবৃত্তির কষ্ট যাতে সকল শ্রেণির মানুষ উপলব্ধি করতে পারেন, এই জন্যই সকলের জন্যই সিয়াম পালন ফরজ করা হয়েছে । যাতে তারা প্রান্তিক ও অভাবগ্রস্থ মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারে। কিন্তু আমরা রমজান থেকে সে শিক্ষা পুরোপুরি গস্খহণ করতে পারছি বলে মনে হয় না। আসলে পবিত্র মাহে রমজানের সম্মানে এবং রোজাদারদের সুবিধার্থে দ্রব্যমূল্য কমানো যৌক্তিক হলেও আমাদের দেশের এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় রমজানে মাসে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেন যা কখনো কাঙ্খিত নয়। এ ব্যাপারে সরকারকেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায় না। তাই রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সিয়াম সাধনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। যা কাম্য নয়।
রমযানের পবিত্রতা রক্ষা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও নগ্নতা বন্ধ এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রেখে ও দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করে মানুষের জানমাল-ইজ্জতের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বও সরকারের। কিন্তু এসব বিষয়ে সরকারের উদাসীনতাও লক্ষনীয়। মূলত পবিত্র মাহে রমজানের সম্মানার্থে ও রোজাদারদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব সরকারের। বাংলাদেশের মত মুসলিম প্রধান দেশের জনগণ সরকারের কাছে সে প্রত্যাশা করতেই পারে।
মূলত রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র মাহে রমজান। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমত, মধ্য ১০ মাগফিরাত ও শেষ ১০ দিন জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি সময়। হযরত আবু ওবায়দা (রা.) রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুল (স.) (সা.) এরশাদ করেছেন, রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ যতক্ষণ পর্যন্ত তা ফেড়ে না ফেলা হয় (অর্থাৎ রোজা মানুষের জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তা নিয়ম অনুযায়ী পালন করা হয়)। (ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)
হাদিসের আরেক বর্ণনায় দেখা যায়, রাসুল (স.) একদিন খুৎবা দানের জন্য মসজিদের মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে ওঠে বললেন, ‘আমীন’, দ্বিতীয় সিঁড়িতে ওঠে বললেন, ‘ আমীন’ এবং তৃতীয় সিঁড়িতে ওঠে বললেন ‘ আমীন’। উপস্থিত সাহাবীরা এর কারণ জিজ্ঞাসার প্রত্যুত্তরে রাসুল (স.) বলেন, এই মাত্র জিবরিল আমীন আমার কাছে এসে বললেন, যে ব্যক্তির সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হলো অথচ সে আপনার উপর দরূদ পড়লো সে ধ্বংস হোক। আমি তার সাথে একাত্ব হয়ে বললাম ‘আমিন’। আবার বলা হলো যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার উভয়েই বা কোন একজনকে পেল অথচ (তাদের হক আদায় করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলো না সে ধ্বংস হোক, আমি তাতে সম্মতি দিয়ে বললাম ‘আমিন’। আবারও বলা হলো যে ব্যক্তি তার জীবনে রমজান মাস পেল অথচ গোনাহ্ মাফ করে নিতে পারলো না সে ধবংস হোক। আমি তার সাথে একাত্ব হয়ে বললাম ‘আমীন’।
মূলত এই হাদিসের ভাষ্য খুবই ষ্পষ্ট। পবিত্র মহে রমজানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আত্মশুদ্ধি ও গোনাহ মাফের অপূর্ব সুযোগ করে দিয়েছেন। মূলত এ মাস মু’মিনের জন্য একটি প্রশিক্ষণের মাস। মানুষ যাতে দীর্ঘ একমাস কঠোর অনুশীলন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আগামী ১১ মাসের জন্য করণীয় নির্ধরণ আল্লাহ নির্দেশিত ও রাসুল (সা.) অনুসৃত পথে চলতে পারে এজন্যই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের উপর রোজাকে অত্যাবশ্যকীয় বা ফরজ করে দিয়েছেন। এ মাসের হক আদায় করে যারা যথাযথভাবে সিয়াম পালন করতে পারেন তাদের জন্য রয়েছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে অফুরন্ত মাগফিরাত ও পুরস্কার। আর যারা তা করতে পারে না তারা অব্যশ্যই ভাগ্যবিড়ম্বিত। আল্লাহ আমাদের সকলকেই পবিত্র মাহে রমজানের হক যথাযথভাবে আদায় করে সিয়াম পালন করে গুনাহ মাফ ও পরম করুণাময়ের সন্তষ্টি অর্জনের তাওফিক দিন-আমীন!!!!
বিষয়: বিবিধ
১৩৯০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন