পর্বতের মুসিক প্রসব ?

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১৬ জুন, ২০১৬, ০১:০৮:৩০ দুপুর



জঙ্গী ধরার ঘোষণা দিয়ে গত ৯ জুন রাত থেকে সারার্শি অভিযান চালিয়ে সারাদেশেই গণগ্রেফতার চালানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে চলমান গুপ্তহত্যা বন্ধ করতেই এই অভিযান চালানো হচ্ছে বলে সরকার পক্ষ দাবি করেছে। যদিও বিরোধী দলগুলো সরকারের এই অভিযানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত হিসাবেই আখ্যা দিচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে যে, কথিত জঙ্গী ধৃতকরণের নামে গ্রেফতার করা হচেছ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের। আর পুলিশ করছে অবাধ গ্রেফতার বাণিজ্য। যদিও সরকারের পক্ষে বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করা হচেছ।

এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, কয়েক দিনের অভিযানে এ পর্যন্ত ১৭৬ জন নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির সদস্যসহ প্রায় ১২ হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যাদের ধরার জন্য এই অভিযানের ঘোষণা দেয়া হলো গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তাদের সংখ্যা অতিনগণ্য। আবার সরকার পক্ষ জঙ্গীদের যে সংখ্যা উল্লেখ করছে তার যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলে। সচেতন মহল দাবি করছেন যে, জঙ্গী ধরার কথা বলে অভিযান পরিচালনা করা হলেও গণগ্রেফতার থেকে বাদ যাচ্ছেন না কোন শ্রেণির মানুষ।

কোন প্রকার পরওয়ানা ছাড়া কোন নাগরিককে গ্রেফতার করার ব্যাপারে দেশের উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পুলিশ সে নির্দেশনা মানছে না বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। আর সারাশি অভিযানে হাজার হাজার গ্রেফতারের পর গুপ্তহত্যার কুশীলবরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে বলেই মনে করা হচেছ। আর গ্রেফতারের পর যাদেরকে জঙ্গী হিসাবে আখ্যা দেয়া হচেছ তাদের সংখ্যাও নিতান্তই কম। তাই সচেতন মহল সারাশি অভিযানের সাফল্যকে ‘পর্বতের মুসিক’ প্রসব হিসাবেই দেখছেন। যা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনকই বলতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ৫ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত জঙ্গি কায়দায় হামলায় নিহত হয় চারজন। চট্টগ্রামে খুন করা হয় এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। আর নাটোরে খ্রিস্টান ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজ, ঝিনাইদহে পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী ও পাবনায় আশ্রমের সেবায়েত নিত্যরঞ্জন পান্ডে খুন হন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ গত ৯ জুন রাত থেকে এ সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে।

সন্ত্রাসবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরুর পর থেকে গত ১৫ জুন পর্যন্ত ১৭৬ জন নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। তবে এর মধ্যে সাম্প্রতিক হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত কোনো সদস্য রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করা হয়নি। সন্দেহভাজন জঙ্গিদের পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের তালিকা ধরে গত ৯ জুন রাত থেকে সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চলছে।

বিশেষ এ অভিযানের ষষ্ঠ দিন বুধবার পর্যন্ত ১১,৬৪৮ ব্যক্তিকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হযেছে। এর মধ্যে জঙ্গি ছাড়া জামায়াত-শিবির ও বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী রয়েছেন। বাদ পড়েনি জামায়াতের ছাত্রী সংগঠন ইসলামী ছাত্রীসংস্থার নেত্রীও। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতে তাদের নেতাকর্মীকে ধরপাকড় করা হচ্ছে। পুলিশের অভিযানে অনেক নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান পুলিশের সমালোচনা করেছেন।

রাজশাহীতে বেশ কিছু আটককৃত ব্যক্তির পরিবারের অভিযোগ, অধিকাংশকেই ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। আবার কাউকে কাউকে পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। এ নিয়ে পুলিশ বাণিজ্য ও হয়রানি করছে।

তবে গত ১৫জুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের সঙ্গে বৈঠকের পর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘আমরা কোনো ইল মোটিভ (খারাপ উদ্দেশ্য) ও পলিটিক্যাল (রাজনৈতিক) নিপীড়নের উদ্দেশ্যে কাউকে আটক করিনি। আগে প্রতিদিন কমবেশি দুই হাজারের মতো আটক করা হতো। এখনো তা-ই হচ্ছে।’ এদিকে সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যেই গতকাল পাবনা, যশোর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তিনজন নিহত হয়েছে। এ নিয়ে গত ৬ জুন রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত নিহত হয়েছে ১৭ জন। তাদের মধ্যে পাঁচজনই জেএমবি সদস্য এবং তারা বিভিন্ন হামলায় জড়িত ছিল বলে দাবি করেছে পুলিশ।

সার্বিক দিক বিবেচনায় চলমান সারাশি অভিযানে অপরাধীদের চেয়ে সাধারণ মানুষই গ্রেফতার হয়েছে বেশী। সর্বোপরি পবিত্র রমজান মাসে এই অভিযান হওয়ার সাধারণ মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যা হয়তো এক সময় গণঅসন্তোষের রূপ নিতে পারে। মূলত এই অভিযানের সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতাকেই বড় দেখতে সাধারণ মানুষ। তাই বিষয়টি নিয়ে সরকারকে ভেবে দেখতে হবে এবং জনগণের জন্য কল্যাণকর বিবেচনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১১৭৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

372147
১৬ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৫৬
হতভাগা লিখেছেন : এই অভিযানে পুলিশের বিশাল ইনকাম হয়েছে । নিরীহ লোকদের গ্রেফতার করলে রিমান্ডের বিপরীতে হেব্বি ডিমান্ড চাওয়া + পাওয়া যায়।
372150
১৬ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:০৫
সৈয়দ মাসুদ লিখেছেন : ধন্যবাদ
372155
১৬ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:২১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : উদ্দেশ্য তো ছিল পুলিশের কিছু আয় এর ব্যবস্থা করা সেটা সফল হয়েছে।
372171
১৬ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:১৫
সৈয়দ মাসুদ লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File