আদালত নিয়ে গর্হিত মন্তব্য কাম্য নয়

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১৪ জুন, ২০১৬, ০৮:৩৭:০৯ রাত



গণমানুষের শেষ ভরসাস্থলই হচ্ছে আদালত। মানুষ যখন কোথাও কোন প্রতিকার পায় না তখনই আদালতের স্মরণাপন্ন হয়। আর গণমানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের দাবি দীর্ঘ দিনের। আর সেই গণদাবি ও উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে জরুরি সরকার নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের কাজটির শুভসূচনা করে। যদিও উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো বাস্তবায়িত হয় নি এবং বিচারবিভাগ নির্বাহী বিভাগের পরিপূর্ণভাবে হস্তক্ষেপহীন করাও সম্ভব হয়নি। মূলত রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবেই বিচারবিভাগ আজও নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত নয় বলেই মনে করা হয়।

আমরা দেশের আদালতগুলোকে ‘মহামান্য আদালত’ হিসাবে সম্বোধন করে করে থাকি। বিজ্ঞ আইজীবীগণ আদালতে শুনানী করার সময় ‘মহামান্য আদালত’ হিসাবেই সম্বোধন করে থাকেন। কিন্তু আদালত সম্পর্কে আমাদের এই সম্মানসূচক অভিব্যক্তি শুধুই মৌখিক স্বীকারোক্তি বলেই মনে হয়। মূলত তা আমরা বাস্তবে বিশ্বাস করি না। আদালতের রায় আমাদের পক্ষে গেলেই আমরা আমরা আদালতের প্রতি সশ্রদ্ধ হয়ে ওঠি। কিন্তু বিপক্ষে গেলে আদালত সম্পর্কে কটুক্তি করতে মোটেই দ্বিধাবোধ করি না। যা গর্হিতই বলতে হবে।

মূলত আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তা বাস্তবায়ন সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলেও আদালতের সিদ্ধান্ত বিপক্ষে যাওয়ায় মন্ত্রীর নেতৃত্বে আদালতের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিলের নজীর আমাদের দেশেই আছে। আদালতের রায়ের প্রতি উস্মা প্রকাশ করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের রুলিং দেয়ার নজীরও আমাদের দেশের বিরল নয়। এমনকি সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী কর্তৃক আদালতের রায়কে অগ্রহযোগ্য ও অসাংধানিক আখ্যা দেয়ার রেকর্ডের অধিকারীও আমরা। সম্প্রতি উচ্চআদালতের বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত রায় সরকারের বিপক্ষে গেলে খোদ আইনমন্ত্রী এ ধরনের বিতর্কিত মন্ত্রব্য করে বসেন। তাও আবার মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে। যা শুধু দুঃখজনকই নয় বরং অনাকাঙ্খিতও।

সম্প্রতি দেশের উচ্চ আদালত সম্পর্কে এমন মন্তব্য করে বিতর্কের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনি জাতীয় সংসদে বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে এমপিদের সভাপতি মনোনীত হওয়া নিয়ে আপিল বিভাগের রায় আদালতের ‘আওতা’ ছাড়িয়েছে । আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অধিবেশনে সভাপতিত্বকারী ফজলে রাব্বী বলেন, “একটি প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এই মামলাটি দায়ের হয়েছিল।কিন্তু আমার মনে হয়, এ ক্ষেত্রে কোর্ট কিছুটা তার আওতার বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অনেক আইনজীবী এই রায়ের সঙ্গে দ্বিমতও পোষণ করেছেন।”

ভিকারুনসিনা নূন স্কুল ও কলেজের পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে এক মামলায় সম্প্রতি হাই কোর্টের এক রায়ে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সভাপতি মনোনীত হওয়া ও বিশেষ কমিটি গঠনের বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। হাই কোর্টের দেওয়া ওই রায় সুপ্রিম কোর্টও বহাল রাখে। এর ফলে সংসদ সদস্যরা স্কুল ও কলেজের পরিচালনা পর্ষদে সভাপতি মনোনীত হতে পারবেন না।

মাননীয় ডেপুটি স্পিকার দাবি করেছেন যে, আদালতে বিচার্য বিষয় ছিল কোন এক বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা সংক্রান্ত। কিন্তু দেশের উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন তা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। তাই তিনি এই রায়কে কিছুটা ‘ আওতার বাইরে যাওয়া’ বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু মাননীয় ডেপুটি ষ্পিকারকে মনে রাখতে হবে যে, এ ধরনের ঘটনা আমাদের দেশে এই প্রথম নয় বরং আরও নজীর রয়েছে এমন ঘটনার। ‘মুন সিনেমা’ হল সংক্রান্ত রায়ে দেশের উচ্চ আদালত সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল করেছিলেন। এ রায়ের ফলে হলের মালিক তো মালিকানা ফেরৎ পাননি বরং বর্তমান ক্ষমতাসীনরা আসমানের চাঁদ হাতে পেয়েছিল। তখন কিন্তু সরকারের পক্ষে এমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এখন যখন আদালতের রায় সরকারের বিপক্ষে চলে গেছে, তখন তারা আদালতের আওতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু একথা মনে রাখা উচিত যে গণমানুষের শেষ ভরসা স্থল আদালতের প্রতি যদি মানুষের আস্থা নষ্ট হয় তাহলে তা কারো জন্যই কল্যাণকর হবে না।

বিষয়: বিবিধ

৮৫০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

371985
১৪ জুন ২০১৬ রাত ০৯:১৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কবি নজরুল তার বিখ্যাত রাজবন্দির জবানবন্দি তে উল্লেখ করেছেন বিচারক ন্যায় এর নয সে আইনের। সেই আদালত এর প্রতি মানুষের সন্মান সৃষ্টি হয়না।
371987
১৪ জুন ২০১৬ রাত ০৯:৩২
সৈয়দ মাসুদ লিখেছেন : ধন্যবাদ
372120
১৬ জুন ২০১৬ সকাল ০৬:২৬
সাদাচোখে লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

অকৃতজ্ঞ, নাস্তিক, অজ্ঞ ও ইতর সদৃশ্য মানুষের কাছে মূর্তিতুল্য 'আদালত' যেমন মহা মান্য হতে পারে, কাজে না আসলে সে আদালত - স্বভাবতঃই বিরাট এক বোঝা ও বিসর্জনযোগ্য বিবেচিত হবেই।

এভাবেই পৃথিবীর ইতিহাসে নির্বোধেরা তারই সৃষ্ট মূর্তি ও প্রতিষ্ঠানের পূজা করেছে আর বিসর্জন দিয়েছে। প্রতারিত মুসলিম বাংলাদেশীরা স্বরস্বতি, দূর্গার ন্যায় আজ আদালতকে মহামান্য বলে সম্ভোধন করছে অন্যদিকে তাদের রবকে, তাদের স্রষ্টাকে মান্য করতে অস্বীকার করছে, আলসেমী করছে।

372142
১৬ জুন ২০১৬ দুপুর ০১:১০
সৈয়দ মাসুদ লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File