মায়ের কোলও শিশুর জন্য নিরাপদ নয়
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১২ জুন, ২০১৬, ০১:১৫:৩৪ দুপুর
দেশে হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের মহোৎসব চলছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে লাগামহীন গুপ্ত হত্যা। কিন্তু সরকার ও প্রশাসন এর কোন কুলকিনারা করতে পারছে না। আর এ ব্যর্থতার দায়ভার রাজনৈতিক দোষারোপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সম্প্রতি পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকতার স্ত্রী গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। এতে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে একেবারেই ভঙ্গুর তা-ই প্রমাণিত হয়েছে। এ নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তিও সৃষ্টি হয়েছে। সরকারও জনগণকে আশ্বস্ত করার মত কোন তথ্য বা দৃশ্যমান কোন কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। সরকারের পক্ষে এজন্য বিদেশী শক্তিকে দায়ি করা হলেও তারা তাদের কথায় স্থির থাকতে পারেনি। ফলে এ ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতায় প্রমাণিত হয়েছে। যা দুর্ভাগ্যজনকই বলতে হবে।
পুুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যার পর সরকার জঙ্গী পাকড়াও করার কথা বলে সারাদেশে সারাশি অভিযান শুরু করেছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, এই অভিযানে ৪ হাজারেরও অধিক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে জঙ্গীদের সংখ্যা উল্øেখ করার মত নয়। বিরোধী দলের পক্ষে অভিযোগ করা হচ্ছে যে, সরকার বিরোধী দল দমনের জন্যই কথিত অভিযানের নামে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। এই অভিযানের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যেরও অভিযোগ করা হচ্ছে।
মূলত দেশে বিভিন্ন অঙ্গিকেই হত্যাকান্ড চলছে। কিন্তু কোন ভাবেই তা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। ফলে দেশের মানুষ এখন মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এর আগে মায়ের পেটে শিশুর গুলিবিদ্ধ হওয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে। সম্প্রতি মায়ের কোলে শিশু হত্যার মত লোমহর্ষক ঘটনাও ঘটেছে আমাদের দেশে। জানা গেছে, কক্সবাজারের চকরিয়ায় অটোরিকশা চালক ও তার সহযোগিদের বেদম প্রহারে মায়ের কোলেই মৃত্যু ঘটেছে আট মাস বয়সী এক শিশুর। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছেন শিশুটির মা এবং বাবা । গত ১১ জুন রাত ৯টার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার চকরিয়া পৌরশহরের ব্যস্ততম চিরিঙ্গা সোসাইটি বাঁশঘাটা রোডের মাথায় এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে না দেয়া এবং ভাড়া বেশি আদায় নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে অটোরিকশাচালক ও তার সহযোগীদের উপর্যুপুরি প্রহারে মায়ের কোলেই রোশনির মৃত্যু হয়।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, নিহত শিশু তার বাবা ও মাসহ ১৫ দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম থেকে রাত ৯টায় চকরিয়া পৌর বাসটার্মিনালে নামেন। সেখান থেকে তারা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে বাঁশঘাটা রোডস্থ কামাল ম্যানশনের ভাড়া বাসায় যাচ্ছিলেন। অটোরিকশাচালক বাসায় যাওয়ার সড়কে না ঢুকে তাদের সড়কের মাথায় নামিয়ে দেন। এছাড়া নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া দাবি করেন।
এ সময় সিএনজি চালকের সঙ্গে তাদের ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চালক নাছির উদ্দিনের সঙ্গে তার ভাগ্নে ফয়সালও যোগ দেয়। মামা-ভাগ্নেসহ স্থানীয় আরও কয়েকজন মিলে মনজুর আলম ও তার স্ত্রীকে উপর্যুপুরি কিলঘুষি মারতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এ সময় মা তার কোলের শিশুকে কিল-ঘুষি থেকে রক্ষার জন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু মায়ের কোলে থাকা আট মাস বয়সী শিশু রোশনির ছোট শরীরেরও ওই দুর্বৃত্তদের বহু কিল-ঘুষি পড়ে। এতে মারাত্মকভাবে আহত হয় শিশু রোশনি। পরে তাকে পাশের স্থানীয় জমজম হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মূলত মায়ের কোলে শিশু হত্যার মত ঘটনা দেশের বিবেকবান ও শান্তিপ্রিয় মানুষকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। আমরা যখন মায়ের কোলে নিষ্পাপ নবজাতকের নিরাপত্তা দিতে পারছি না, তখন আমাদের দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক তা বলাই বাহুল্য। তাই এসব হন্তারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। এখনই এদের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে আগামী দিনে আমাদের জাতিস্বত্ত্বা হুমকীর মুখোমুখি হবে। তখন ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা চর্চার কোন জায়গায় থাকবে না।
বিষয়: বিবিধ
৯১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন