আগে তো মাঠের রাজনীতি ফিরিয়ে দিতে হবে

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১০ জুন, ২০১৬, ০৩:২৭:১৬ দুপুর

দেশে হতাকান্ডের মহোৎসব চলছে। এসব হতাকান্ড থেকে রেহাই পাচ্ছে না কোন শ্রেণির মানুষ। চা দোকানী থেকে শুরু হয়ে মসজিদের ঈমাম-মুয়াজ্জিন, মন্দিরের পুরোহিত, ধর্মযাযকসহ কোন শ্রেণি এবং পেশার মানুষই এখন নিরাপদ বোধ করছেন না। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যরাও এখন নিরাপদ নয়। কয়েক দিন আগেই পুলিশের একজন শীর্ষকর্তার স্ত্রীকে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করা হলো। কিন্তু এখ পর্যন্ত অপরাধীদের কেশাগ্র পর্যন্ত স্পর্শ করা গেল না। এটাকে আমাদের জাতীয় ব্যর্থতা ছাড়া অন্য কিছুর সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু এটাই বাস্তবতা। আর এই রূঢ় বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই আমাদের প্রতিদিনকার পথ চলা।

ঈুলিশ বিভাগের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসেই হত্যাকান্ড ঘটেছে সাড়ে ১১শ’র বেশি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। যা জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য, যেসব স্থানে হামলা হতে পারে সেসব স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কিন্তু এসব নিরাপত্তা জোরদারের কথা শুনতে শুনতে তো আমাদের কান একেবারের ঝালাপালা হয়ে গেছে। আমরা এখন বলতে গেলে শ্রবণ শক্তিই হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না বরং সারাদেশে হত্যাকান্ডসহ অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। বিছানায় শিশুর ‘মূত্র বিয়োগ’ বন্ধে তাবিজ-কবজ দেয়ার পর ‘মলত্যাগ’ এর প্রাদুর্ভাবের মত পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতিশীল হলেও সরকারের দায়িত্বশীলদের কথা মালার ফুলঝুড়িটা কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না।

সরকার এতোদিন বলে এসেছে এসব হত্যাকান্ড ও অপরাধ প্রবণতা প্রতিরোধে কারো কোন সহযোগিতার প্রয়োজন নেই বরং তারাই তা নির্মূল করতে পুরোপুরি সক্ষম। কিন্তু তারা বিগত ৮ বছরে সে সক্ষমতার পরিচয় দিতে পেরেছেন বলে দেশের সচেতন জনগণ মনে করেন না। কিন্তু সাম্প্রতিক সরকার বোধহয় তাদের পূর্বের অবস্থান কিছুটা হলেও পরিবর্তন করেছেন। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দেশে চলমান হত্যাকান্ড ঠেকানোর জন্য ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার ব্যাপারে আইনমন্ত্রী বলেছেন, যদি আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ 'সরকারকে' এ ব্যাপারে সহায়তা করতে চায় তবে সে সহায়তা গ্রহন করা হবে বলেও জানান তিনি। যা ঘোর অন্ধকারে একটুখানি আলোর ঝলকানি।

এসব হত্যাকান্ডে সাথে দেশের মধ্যকার জঙ্গি সংগঠনগুলো জড়িত আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। গত সপ্তাহে একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে প্রকাশ্যে হত্যা, একই দিনে একজন খ্রিস্টান মুদি দোকানদারকে হত্যা, দু’দিন বাদে একজন হিন্দু পুরোহিতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসব হত্যাকান্ড ছাড়াও গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ড ঘটেছে যেগুলোকে পুলিশ পরিকল্পিত বা টার্গেট কিলিং বলে অভিহিত করছেন। এ সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বলেন, এসব হত্যাকান্ডে তদন্ত কাজ অনেক জায়গায় প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে গেছে। অনেকগুলো হত্যাকান্ডের ব্যাপারে পুলিশ তদন্ত অপরাধীদের সনাক্ত করেছে।

মাননীয় আইনমন্ত্রীর ‘ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক প্রতিরোধ’ বিষয়ক বক্তব্য সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। যদিও অভিজ্ঞমহল এটি সরকারের বিলম্বিত উপলদ্ধি বলেই মনেই করছেন। কিন্তু বিলম্বিত হোক আর অবিলম্বিতই হোক উপলদ্ধি তো উপলদ্ধিই। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারকে অবশ্যই তাদের আন্তরিকতা প্রমাণ করতে হবে। আর যেকোন বিষয়ে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করার আগে দেশের রাজনৈতিক কর্মকান্ডকে নির্বিঘœ করা জরুরি। দেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলো যদি দেশে স্বাচ্ছন্দে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে না পারে আর গ্রাউন্ড পলিটিক্স যদি বাধাগ্রস্থ হয়, তাহলে কোন বিষয়ে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সফল হওয়ার কোন সম্ভবনা থাকে না।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক কর্মকান্ড বাধাগ্রস্থ করবেন,আর নিজেদের আপদকালীন মহুর্তে তাদের সহযোগীতার আশা করবেন তা মোটেই বাস্তবসম্মত নয় বরং অরণ্যে রোদন বৈ কিছু নয়। তাই সরকার আগে মাঠের রাজনীতিটা অন্তত ফিরিয়ে দিতে হবে। তারপরই শুরু হতে পারে দেশের অপরাধ প্রবণতাসহ যেকোন দেশ ও গণবিরোধী বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক গণপ্রতিরোধ। জনগণ সরকারের কাছে দায়িত্বশীল আচরণই আশা করে।

বিষয়: বিবিধ

১০৩৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

371633
১০ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৪৮
শেখের পোলা লিখেছেন : নাবিক সিন্দাবাদের ঘাড়ে চড়া বুড়ির মত সরকার নিজেকে রক্ষা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না।
371638
১০ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:২২
সৈয়দ মাসুদ লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File