পুলিশ সদস্যের পরিবারও যখন নিরাপদ নয়
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৫ জুন, ২০১৬, ০৯:২৪:১৫ রাত
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হলেও সরকার তা কোন ভাবেই স্বীকার করতে চায় না বরং পরিস্থিতি সকল সময়ের চেয়ে ভাল আছে একথায় জোরালো ভাবে প্রচার করা হয়। সারাদেশে হত্যাকান্ডসহ যেসব অপরাধ ঘটছে সেগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে দাবি করা হচ্ছে। মূলত সরকারের এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর কারণেই অপরাধীরা রীতিমত আস্কারা পাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। ফলে দেশে অপরাধ প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। খুন, ধর্ষণসহ নানা ধরনের অপরাধ ঘটছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু এসবের কোন প্রতিবিধান করা হচ্ছে না। সরকার বিষয়টি খতিয়ে না দেখেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দায়ি করায় অপরাধীরা রীতিমত অধরায় থেকে যাচ্ছে। ফলে অপরাধ প্রবণতা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন। জনগণের জানমাল এখন কোন ভাবেই নিরাপদ নয়। নেই নাগরিকের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। এভাবে কোন গণতান্ত্রিক ও সভ্য সমাজ চলতে পারে না। বিষয়টি দেশের আত্মসচেতন মানুষকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।
পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ব হলো জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা। কিন্তু তারা সে দায়িত্ব পালনে কতখানি সক্ষম হয়েছে তা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে এক ভয়াবহ চিত্রই আমাদের সামনে ওঠে আসে। আর সম্প্রতি পুলিশ সদস্যের স্ত্রী হত্যার বিষয়টি দেশের মানুষকে নতুন করে আতঙ্কিত করে তুলেছে। দেশের মানুষ এখন নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্কে ভূগছেন। যারা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করবেন তাদের পরিবারের সদস্যরাও যদি নিরাপদ না থাকেন তাহলে দেশের সাধারণ মানুষ কীভাবে নিরাপদ থাকবেন ? এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সম্প্রতি আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে (৩২) গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ঘটনায় জঙ্গিকে দায়ী করে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আর মন্ত্রীবরের এমন অশ্বাসে কোন অভিনবত্ব দেখছেন দেশের সাধারণ মানুষ। কোন ঘটনা ঘটার সাথে সাথে মাননীয় মন্ত্রী এভাবেই তৎপরতা হয় ওঠেন। কিন্তু কাজের কাজটা কখনোই হতে দেখা যায় না।
আসলে এর আগেও আলোচিত সব হত্যাকান্ডে কোনটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা, আবার কোনোটিকে তদন্তের আগে কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করে দায়ভার নিতে অপারগ ছিলেন মন্ত্রী। কিন্তু এবার পুলিশের একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তার পরিবারে হত্যাকান্ডে ক্ষেপেছেন সংসদ সদস্যসহ সাধারণ জনগণ। তারা এখন এ অবস্থার উত্তরণ চাচ্ছেন। যা এখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি।
জানা যায়, আজ সকাল ৭টার দিকে নগরীর জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে। দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি পদোন্নতি পান বাবুল আক্তার। তিনি ঢাকায় অবস্থান করলেও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নগরীর জিইসি এলাকার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন স্ত্রী।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটের দিকে বাসা থেকে ১০০ গজ দূরে ছেলেকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে যাওয়ার পথে তিন মোটরসাইকেল আরোহী তাকে ধাক্কা দেয়। এরপর তারা ছুরিকাঘাত করে পরপর তিন রাউন্ড গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। ছুরিকাঘাতের পাশাপাশি মাহমুদা আক্তারের মাথার বাম পাশে গুলিবিদ্ধ হওয়ায় তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
সম্প্রতি পুলিশ অফিসারের স্ত্রী হত্যার ঘটনা দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে রাষ্টপক্ষের এমন দাবিও অসার বলে প্রমাণিত হয়েছে। দেশের যখন পুলিশ সদস্যের পরিবারও নিরাপত বোধ করছেন না, তখন আমাদের মত আমজনতার যে কী বেহাল অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। অন্যথায় আমাদের জাতীয় অস্তিত্বই হুমকীর মুখোমুখী হবে।
বিষয়: বিবিধ
৮৫৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন