এরশাদ কী হত্যার দায় এড়াতে পারেন ?
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৪ জুন, ২০১৬, ১১:২৭:১৮ রাত
৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে অনেক নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। প্রথমে তিনি তো বিএনপি ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে বিএনপি ছাড়া ঠিকই নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। কিন্তু সে অবস্থানেও তিনি স্থির থাকতে পারেন নি বরং এক পর্যায়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বসেন। তার ঘোষণামত তার দলের অনেক প্রার্থী নিজেদের প্রার্থীতা প্রত্যাহারও করে নিয়েছিলেন। তিনি নিজেও মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ‘সোনার কাঠি-রুপোর কাঠি’র ছোঁয়ায় তার প্রার্থীতা বহাল তাকে এবং যাদুকরী পন্থায় তিনি সাংসদও নির্বাচিত হন। প্রথমে শপথ গ্রহণ করলেও পরে নাকে খত দিয়ে তাকে শপথও নিতে হয়। শুধু তাই নয় বরং তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসাবেও দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
নির্বাচন নিয়ে অনেক জলই ঘোলা করেছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। তিনি নির্বাচন বর্জন সংক্রান্ত ঘোষণার বিষয়ে বিশেষ ছাত্র সংগঠনের ভয়কে দায়ি করেছিলেন। যা কোন মহলেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। অনেকেই তার বক্তব্যকে কথিত ‘কাক তাড়–য়ার ভয়’ আখ্যা দিতেও মোটেই কসুর করেননি। যা তার ব্যক্তিত্ব ও পদমর্যাদার সাথে সম্পূর্ণ সঙ্গতিহীন। অথচ তিনি এভাবেই আত্মস্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
মূলত সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের জাতীয় পার্টি সরকারের অংশ হয়েও জাতীয় সংসদের বিরোধী দল। অবশ্য তিনি এক আলোচনা সভায় তার দলকে ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। তাই মাঝে মাঝে তাকে সরকারের তীর্যক সমালোচনা করতেও দেখা গেছে। কিন্তু তিনি কখনোই নিজের কথার উপর স্থির থাকতে পারেন নি।
সম্প্রতি তিনি নিজেকে স্বৈরাচারি শাসক হিসেবে আত্মস্বীকৃতি দিয়েছে। যদিও অতীতে তিনি তা রীতিমত অস্বীকার করেছিলেন। যাহোক সাবেক রাষ্ট্রপতির এই আত্মস্বীকৃতিকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হবে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আমি স্বৈরাচার ছিলাম কিন্তু মানুষ মারিনি। স্বৈরাচার ছিলাম, মানুষ গুম করিনি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ চট্টগ্রামের ষোলশহরের এসএ গ্রুপের ফ্যাশন হাউস এসএ ফ্যাশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এখন তো দেশে কে কখন গুম হয়ে যায়, কে কাকে তুলে নিয়ে যায় আমরা কেউ জানি না। আল্লাহর কাছে দোয়া চাই। আল্লাহ আমাদের সেইদিন ফিরিয়ে দিক, আমরা যেন শান্তি ঘুমাতে পারি। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, বর্তমানে দেশে যে নির্বাচন হচ্ছে এটাকে কি নির্বাচন বলবেন? এটা কোনো নির্বাচন হতে পারে না।
এরশাদ আরো বলেন, আমি বার আউলিয়ার এই পুণ্যভূমি চট্টগ্রামকে ভালবাসি। তাই ক্ষমতায় থাকার সময় এখানকার উন্নয়নে অনেক কাজ করেছি। আপনাদের সামনে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে। এটা সেনাবাহিনীর জমি ছিল। আমি রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় জমি দিয়ে মসজিদটি করেছি। এটি এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি। আমি চলে যাওয়ার পর এটা এখনো অর্ধনির্মিত অবস্থায় আছে। আবার যদি কখনো সুযোগ হয় মসজিদটি আমি পূর্ণাঙ্গ করে দেব। একইভাবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে যাতায়াত সুবিধার জন্য কর্ণফুলীতে সেতু নির্মাণ করেছিলাম। ২৫ বছর চলেছিল। এখন নতুন সেতু হয়েছে। আমি সেটি এখনো ভুলিনি। আপনারাও ভোলেননি।
মূলত দেশে যে সুশাসন নেই সে কথা সাবেক এই রাষ্ট্রপতির বক্তব্য থেকে খুবই সুস্পষ্ট। যেহেতু তার দল জাতীয় পার্টি সরকারের উল্লেখ্যযোগ্য অংশ। তাই সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার তো তাদেরকে হতে হবে। তাই সরকারের সাফলে যেমন জাতীয় পার্টির কৃতিত্ব থাকতে হবে, তেমনি ব্যর্থতার দায়ভারও তাদেরকে নিতে হবে। তার ভাষায় দেশে যদি খুন, ধর্ষণ, গুমের মহোৎসব চলে সাবেক রাষ্ট্রপতি কী সে দায়ভার এড়াতে পারেন ? এ প্রশ্ন এখন সচেতন মহলে।
বিষয়: বিবিধ
৯৫৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রমাদানের প্রস্তুতি নিয়ে চলছে ব্লগ আয়োজন। ২ জুন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৬ পর্বের ব্লগ আয়োজনের ১ম পর্ব। অংশ নিতে পারেন আপনিও। নিজে জানুন, অন্যকে জানান। বিস্তারিত জানতে-
Click this link
মন্তব্য করতে লগইন করুন