হিজরা সমাচার

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৪ জুন, ২০১৬, ০৮:১৭:০১ রাত



কয়েক বছর আগের কথা। বিকেলে অফিসের টেবিলে কাজ করছিলাম। হঠাৎ একটা হট্টগোলের শব্দ এলো আমার কানে। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই একদল মানুষকে উচ্চস্বরে কথা বলতে শুনলাম। মাথা তুলে তাকাতেই বুঝতে পারলাম অফিসে হিজড়াদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তারা আমার সাথে কোন কথা বললো না। অল্পবয়সী সহকর্মীদের সাথে রীতিমত ঝগড়া-ঝাটিতে লিপ্ত হলো। তাদের দাবি কয়েক দিন পরেই ঈদ। তাই তাদের কমপক্ষে ২হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। না দিলে অফিসের সকলকে অপদস্ত ও লাঞ্চিত করা হবে। মূখে তাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল। যা তাদের একেবারে মজ্জাগত।

অফিসের ছেলেরা তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল যে, তাদের বড় স্যার অফিসে নেই। তাই তাদের পক্ষে এতো টাকা চাঁদা দেয়া সম্ভব নয়। দু’এক শোর মধ্যে হলে তা সমাধানযোগ্য। কিন্তু তারা কোন কিছুই মানতে নারাজ। ২ হাজার টাকার ১ পয়সা কম হলেও চলবে না। তাদের চাহিদামত টাকা না দিলে নিজে নিজেই বিবস্ত্র হওয়া এবং অফিস ভাঙ্গচুরের হুমকী দিলে বসলো। আর অশ্লীল ও অশ্রাব্য ভাষায় গালগালের তো কোন কমতিই নেয়।

আমি অফিসের কাজ ছেড়ে বসে বসে সবকিছু দেখছিলাম। একটি সংবাদপত্র অফিসে অনাধিকার প্রবেশ করে একদল মানুষের এমন গর্হিত আচরণ আমি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। আর এমনিতেই আমার ধৈর্যটা খুবই কম। উল্টা-পাল্টা দেখলে তো আমার মাথায় রক্ত ওঠার উপক্রম হয়। আসলে সেদিন কেন জাতি ধৈর্যটা একটু বেশীই ধরেছিলাম। কিন্তু কোন ভাবেই তাদের উৎপাতটা বন্ধ হচ্ছিল না। ছেলেরা যখন তাদের কথামত চাঁদা দিতে কোন ভাবেই রাজী হলো না তখন তারা অফিসের কম্পিউটার ভাঙ্গচুর শুরু করলো। এসব কী ধরনের অপরাধ তা আমি মোটেই ঠাহর করতে পারলাম না।

আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। বাধ্য হয়ে উঠতেই হলো। অফিসের জ্যেষ্ঠ ও শীর্ষস্থানীয় হিসাবে আমাকে অনেক আগেই প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত ছিল। কিন্তু কেন জানি সেদিন দেরি করে ফেলেছিলাম। দেরিতে হলেও তেড়ে গিয়েছিলাম হিজরাদের দিকে। সজোরে ধমক দিয়ে বললাম,‘থাম’! আমার ধমকে যদিও তাদের হাত থেমে গিয়েছিল কিন্তু মুখটা আর কোন ভাবেই বন্ধ করতে পারলাম না। মহুর্তের মধ্যেই আমার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করেই ছাড়লো। আমি ছেলেদেরকে তাদেরকে জোর করে বের করে দিতে বললাম। ছেলেরা কোন প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগেই গালাগাল দিতে দিতে সেদিন বের হয়ে গিয়েছিল কোন চাঁদা না নিয়েই। যাক, ধমকটা বেশ কাজে লেগেছিল সেদিন।

পরের ঈদের কথা। অফিসে কাজ করছিলাম। একইভাবে ২/৩ জন হিজরার আগমন ঘটলো। আমি তো রীতিমত ভয় পেয়ে গেছি যে, তারা আবার কোন ঘটনা ঘটিয়ে বসে। এরাও ছেলেদের কাছ আসন্ন ঈদের জন্য চাঁদা দাবি করে বসলো। ছেলেরা আগের মতই ‘বড় স্যার নেই’ বলে জানালো। কিন্তু তারা আগের দলের চেয়ে কিছুটা হলেও সৌজন্যমূলক আচরণ করলো। বললো, ‘ বাজে কথা বলবেন না, আমরা তো আর হাজার হাজার টাকা নিতে আসিনি’। বুঝলাম, এরা কিছুটা হলেও ভদ্র আছে। একজনকে ডেকে বললাম, ‘ ওদেরকে শ’ খানেক টাকা দাও’। সাথে থাকা অফিসের দারোয়ান বলল, ‘ স্যার এক শ টাকা দিলে গালাগাল দেবে। অন্তত শ’দুয়েক...’। দু’শো টাকা দিলে কিছুটা অসন্তষ্টি থাকলো অন্তত গালাগালটা করতে শোনা যায়নি ওদেরকে।

আজ পরন্ত বিকেলে বাসে চেপে অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলাম। আমার সামনে সিটেই দু’জন মহিলা। ভাড়া কালেক্টর তাদের কাছে ভাড়া তলব করার সাথে সাথেই এজন দু’হাতে তালি বাজাতে শুরু করলো। কালেক্টর একটু মুচকি হাসলেন। আর ভাড়া চাইলেন না। মহিলার তালির মূল্য যে এত বেশী তা আমি কখনোই বুঝিনি। পরে বুঝলাম এরা উভয়েই হিজরা। ভাড়ার বদলে তালি। হিজরা বলে কথা!

বিষয়: বিবিধ

১১৬০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

371003
০৪ জুন ২০১৬ রাত ১০:২৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই চাঁদাবাজি কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা দরকার। হিজরা দের আলাদা না রেখে সমাজের মুল স্রোতে নিয়ে আসা প্রয়োজন। এখন এরা কোন অর্থেই উৎপাদনশিল কাজের উপযুক্ত নয়।
371005
০৪ জুন ২০১৬ রাত ১০:৩৩
সৈয়দ মাসুদ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
371012
০৫ জুন ২০১৬ রাত ০২:৪৪
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ভালো লাগলো মহিলার তালির মূল্য যে এত বেশী এরা উভয়েই হিজরা ভাড়ার বদলে তালি হিজরা বলে কথা! ধন্যবাদ
371017
০৫ জুন ২০১৬ সকাল ০৬:২৩
সৈয়দ মাসুদ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
371079
০৫ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:১০
হতভাগা লিখেছেন :
ভাড়া কালেক্টর তাদের কাছে ভাড়া তলব করার সাথে সাথেই এজন দু’হাতে তালি বাজাতে শুরু করলো।


০ এরকম কি ওরা প্লেনে বা কোন বড় রেস্টুরেন্টে করতে পারবে ?

হিজড়াদেরকে সমাজের মুলধারায় ফিরিয়ে আনতে শুরুতেই এদেরকে আইনের স্বাভাবিক ধারাতেই নিতে হবে । শুধু হিজড়া বলে এদের অপরাধ অবজ্ঞা করা উচিত নয় ।
371089
০৫ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:২৩
সৈয়দ মাসুদ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File