বাজেট কী সয়ংক্রিয়ভাবেই কার্যকর ?

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৩ জুন, ২০১৬, ০৮:৩১:৪৮ রাত



দেশের প্রচলিত রেওয়াজ অনুযায়ি প্রতি জুন মাসে নতুন অর্থবছরের যে বাজেট উপস্থাপন করা তা হয় মূলত ‘প্রস্তাবিত’। প্রস্তাবিত এই বাজেট সম্পর্কে জাতীয় সংসদে আলোচনা-পর্যালোচনা, যাচাই-বাছাই করা হয়। মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করা হয় বিশেষজ্ঞদের। আমরা অতীতে দেখেছি প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে চুড়ান্তভাবে গৃহীত হওয়ার আগে কিছু সংযোজন ও বিয়োজন থাকে। এরপর পরই তা জাতীয় সংসদে পাশ করা হয়। আর জাতীয় সংসদে গৃহীত হওয়ার পরই তা কার্যকর হওয়ার অতীত রেওয়াজ রয়েছে। আর এই রেওয়াজ অনুযায়ি সকল বাজেটের কার্যকারিতাও দেয়া হয়েছে।

হালে সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে বলেই মনে হয়। ২ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট ঘোষিত হওয়ার পর তা তাৎক্ষণিক স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, সংসদে বাজেট প্রস্তাবের দিন থেকেই কার্যকর হয়েছে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর বাড়তি খরচ। ২ জুন রাতেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক এসআরও জারি করে টেলিকম কোম্পানিগুলোকে তা কার্যকরের নির্দেশনা দেয়। রাতেই ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে মোবাইল অপারেটরগুলো।

গত ২ জুন ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাজেটে সিম বা রিমের মাধ্যমে সেবার উপর সম্পূরক শুল্ক ২ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। টেলিকম অপারেটরদের পক্ষ থেকে গ্রাহককে কোনো নোটিশ দেওয়া না হলেও মোবাইল ফোনে কথা বলা, ডেটা এসএমএস, এমএমএস এবং সব ধরনের ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের জন্য বাড়তি খরচ দিতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।

গ্রাহক আগে যেখানে ১০০ টাকা খরচের পর ১৫ টাকা ভ্যাট দিতেন এখন এ ১১৫ টাকার ওপর গ্রাহককে আরও ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হবে। ফলে তাকে আরও ৫ দশমিক ৭৫ টাকা বেশি খরচ করতে হবে। সঙ্গে ১ শতাংশ সারচার্জ যুক্ত হয়ে একশ টাকার সেবায় গ্রাহককে গুনতে হবে ১২১ দশমিক ৭৫ টাকা।

বর্তমানে দেশে ১৩ কোটি ২০ লাখ সক্রিয় মোবাইল ফোন সংযোগ এবং পাঁচ কোটি ৯৫ লাখ সংযোগে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিসংখ্যান তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে জানান, গত বাজেটে মোবাইল সিম ট্যাক্স ব্যাপক হারে কমানো হয়েছে। এ কারণে মোবাইল সিম বা রিম কার্ডের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার উপর বিদ্যমান তিন শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করে পাঁচ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। এই সেক্টরে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।

মূলত বাজেট কার্যকারিতার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক ঘটনা অভিনব। প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচেছ সেসব পণ্যের মূল্য ইতোমধ্যেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু যেসব পণ্যের মূল্য হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজারে তা প্রতিফলিত হয়েছে বলে মনে হয় না। আর এ জাতির দুর্ভাগ্য এখানেই।

বাজেট ঘোষণার সাথে সাথে এবং তা জাতীয় সংসদে গৃহীত হওয়ার আগেই মোবাইলের কলরেট বৃদ্ধি অগ্রহণযোগ্য বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে আমাদেরকে এই অপসংস্কৃতির কবল থেকে অবশ্যই বেড়িয়ে আসতে হবে। কোন নাগরিককে কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করা রাষ্ট্রের কাজ নয় বরং সকল নাগরিকের অধিকার সংরক্ষণই রাষ্ট্রের কাজ। তাই সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১২০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File