জাতীয় বাজেট ও আমাদের অপচর্চা

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০২ জুন, ২০১৬, ১০:১৮:১০ রাত

আজ ২০১৬/১৭ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। প্রতিবছরই অর্থমন্ত্রী নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে থাকেন। এতে কোন অভিনবত্ব নেই। আর আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বাজেটের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায়ও তেমন অভিনবত্ব থাকে না বরং তা রীতিমত গতানুগতিক। এক প্রকার চর্বিত-চর্বনই বলা যায়। যা মোটেই কাঙ্খিত নয়।

নতুন বছরের বাজেট ঘোষিত হবে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ-পত্রের দাম বাড়বে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ সন্ধানে ব্যস্ত থাকবেন এবং নতুন বাজেটের ধুঁয়া তুলে অবৈধ ও অনৈতিকভাবে মুনাফা অর্জন করবেন-এসব তো আমাদের দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। এর ব্যত্যয় ঘটার কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না । যা আমাদের নাগরিক ও জাতীয় জীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও তা থেকে আমরা কোন ভাবেই বেড়িয়ে আসতে পারছি না। আর সহসায় যে বেড়িয়ে আসতে পারবো তার আপাতত কোন সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না। আর আগামী দিনে কি হবে তা বলাও বেশ কষ্টসাধ্যই বলেই মনে হয়।

বাজেট ঘোষণার সাথে সাথেই সরকার পক্ষ ঘোষিত বাজেটকে জনবাস্তব বাজেট হিসাবে আখ্যা দিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালায়। সরকার দলীয় মন্ত্রী-এমপি থেকে শুধু করে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদেরকেও বাজেট বন্দনায় মঞ্চমুখ হতে দেখা যায়। যাদের জাতীয় বাজেট বা অর্থনীতি সম্পর্কে কোন ধারণা নেই, তারাও তোতা পাখির মত মুখস্ত বয়ান দিতে থাকেন। ভাবটা এ রকম যে, প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়িত হলেও দেশ স্বংয়ংক্রিয়ভাবে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে। মানুষের কোন সমস্যা থাকবে না। দেশের মানুষ শুধু নাসিকায় তৈল লাগিয়ে একেবারে ‘আসহাব-কাহাফ’ এর মত ঘুমাবেন। বাজেটের তেলেসমাতিতে সবকিছুই অলৌকিকভাবে মানুষের অন্দরমহলে পৌঁছে যাবে। আর এসব বাজেট বন্দনায় রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহারও বেশ লক্ষণীয়। প্রতিটি নতুন বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করা হলেও জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর কোন উদ্যোগ নেয়া হয় না। ফলে ঘোষিত নতুন বাজেটে বিশেষ শ্রেণির লোক উপকৃত হলেও আমজনতার ভাগ্যে আর শিকে ছেঁড়ে না। যা আমাদের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে।

এই যখন সরকার পক্ষের অবস্থান তখন বিরোধী পক্ষকেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে দেখা যায় না। সরকার পক্ষ বাজেট ঘোষণা করার সাথে সাথেই কোন কিছু উপলব্ধি না করেই তারা ঘোষিত বাজেটকে গণবিরোধী আখ্যা দিয়ে বসে। মুখস্ত বিদ্যার মত বলেই ফেলেন ঘোষিত বাজেটে গণবিরোধী আখ্যা দেয়া হয়। প্রস্তাবিত বাজেটের প্রস্তাবগুলো ভালভাবে পড়ে না দেখেই বিভিন্ন নেতিবাচক দিক নিয়ে তীর্ষক আলোচনা-সমালোচনা করা হয়। যা দায়িত্বহীনতাই বলা যেতে পারে।

আজ জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষিত হয়েছে। আর বাজেট ঘোষণার সাথে সাথেই কোন যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিএনপির পক্ষে ঘোষিত বাজেটের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অবৈধ সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা যাতে বেশি বেশি লুটপাট করে পকেট ভরতে পারে সেই বাজেট ঘোষণা করেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, যে সরকারের কোনো বৈধতা নেই সেই সরকার আবার কিসের বাজেট ঘোষণা করছে। অবৈধ সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা যাতে বেশি বেশি লুটপাট করে পকেট ভরতে পারে সেই বাজেট ঘোষণা করেছে।

আমার মনে হয় বাজেট সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে বিএনপি’র মত দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলকে আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হতো। তারা এভাবে তাৎক্ষণিক মন্তব্য না করে বাজেটের প্রস্তাবনাগুলো নিবিরভাবে খতিয়ে দেখে সবকিছু উপলব্ধিতে নিয়ে মন্তব্য করতে পারতেন। কিন্তু তাদের পক্ষে তড়িঘড়ি যে মন্তব্য করা হলো তা দায়িত্বহীনতারই নামান্তর। দেশের মানুষ তাদের কাছে এমন দায়িত্বহীনতা আশা করে না। আর সরকারের বৈধতা নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা এখন তাদের মুখে এখন অনেকটা বেসুরোই শোনায়। যে অবস্থা চলতে তাতে অদুর-ভবিষ্যতে বিএনপির বৈধতা থাকে কী-না তা নিয়েও তো রীতিমত প্রশ্নের সৃষ্টির হয়েছে। আর সরকার পতনে হান্নান শাহর সাত দিন থেরাপি তো মানুষের মধ্যে তো হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। তাই সকল পক্ষকেই বাজেট পরবর্তী অপচর্চাটা বন্ধ করতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১০৬৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

370848
০২ জুন ২০১৬ রাত ১১:১৩
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ
370858
০৩ জুন ২০১৬ রাত ১২:২৫
আরাফাত হোসাইন লিখেছেন : ভালো লাগলো
370877
০৩ জুন ২০১৬ সকাল ০৭:৪২
শেখের পোলা লিখেছেন : আমরা জন মজুরের দল খাটি খাই ওসব বাজেট বুঝিনা।
370882
০৩ জুন ২০১৬ সকাল ০৮:৪৩
সৈয়দ মাসুদ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
370904
০৩ জুন ২০১৬ রাত ০৮:২৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
370906
০৩ জুন ২০১৬ রাত ০৮:৩৪
সৈয়দ মাসুদ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File