নারী নির্যাতন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০২ জুন, ২০১৬, ০৭:০১:৪৬ সন্ধ্যা
যারা সরকারের বাইরে রয়েছেন তারা বরাবরই দাবি করছেন যে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সকল সময়ের চেয়ে খারাপ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। দেশে খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা অশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। কিন্তু সরকার এসব অপরাধের কোন প্রতিকার করছে না বরং ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য এসব অপরাধে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হচ্ছে। আর এসব অপরাধের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারি দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাই জড়িত বলে দাবি করা হচ্ছে।
অবশ্য সরকার পক্ষে দাবি করা হচ্ছে যে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রীতিমত স্বাভাবিক আছে। কালে-ভদ্রে যেসব অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে সেসব অতিস্বাভাবিক ঘটনা। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আছে। মূলত সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর জন্যই সংসদের বাইরের বিরোধী দলগুলো পরিকল্পিতভাবে বিচ্ছিন্ন কিছু অপরাধ প্রবণতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণেই তারা খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না।
সরকার ও বিরোধী পক্ষ যত কথায় বলুক না কেন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত যে উদ্বেগজনক একথা মোটামোটি দিব্যি দিয়ে বলা যায়। আর বিষয়টি আরও ষ্পষ্ট হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিসংখ্যান থেকে। মহিলা পরিষদের পক্ষে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে সারাদেশে মোট ৩৯২ জন নারী ও শিশু ধর্ষণসহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি এক বিবৃত্তিতে বলেন, ‘গত মে মাসের ৩১ দিনে দেশে মোট ৩৯২ নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯১ জন। আর গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৬ জনকে, এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১৬ জনকে। এই সময়ের মধ্যে শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন ১২ জন। যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩ জন। এসিডদগ্ধ হয়েছে ১ জন, অগ্নিদগ্ধের ঘটনা ঘটেছে ১টি। অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৮টি। পতিতালয়ে বিক্রি করা হয়েছে ১জনকে।
তাছাড়া, বিভিন্ন কারণে ৯৪ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে এবং আরও ৪ জনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আর ৫ জন গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতন করা হয়েছে। তার মধ্যে ১ জনকে হত্যা এবং আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে ১ জনকে।
সংবাদ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, যৌতুকের জন্য হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৩ জন, তার মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ৭ জনকে। উত্ত্যক্ত করা হয়েছে ১৮ জনকে, উত্তক্তের কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে ১ জন। বিভিন্ন নির্যাতনের কারণে ৩০ জন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে, আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে ১ জন। আর ২৯ জনের রহস্যজনক মৃত হয়েছে। বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে ৯ জন। শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে ৩৫ জনকে। পুলিশী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১ জন নারী। এছাড়া ১৬টি অন্যান্য নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
মূলত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিসংখ্যান থেকেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। শুধু এক মাসের মধ্যেই নারী ও শিশু বিষয়ক যত অপরাধ সংঘঠিত হয়েছে তা রীতিমত আৎকে ওঠার মত। আর পুরো অপরাধ প্রবণতা আরও বেশী ভয়াবহ বলে মনে করার যথেষ্ঠ কারণ রয়েছে। তাই সরকারের পক্ষে এজন্য শুধুই বিরোধী দলের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে পার পেয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না বরং বাস্তবতা উপলব্ধি করে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থের বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে। শুধু মাত্র কথামালার ফুলঝুড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না বরং এর বাস্তব প্রয়োগও দরকার। সরকারকে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে বর্তমান সরকার নারী ও শিশু বান্ধব। সাথে সাথে সকল নাগরিকের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১০৬৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন