কথায় নয় কাজে প্রমাণ করতে হবে
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ৩১ মে, ২০১৬, ০৮:৪১:২১ রাত
সাবেক ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’কে তো রীতিমত ‘দুর্নীতি লালন ব্যুরো’ হিসাবে আখ্যা দেয়া হয়েছিল। আর এমন আখ্যার পেছনে যৌক্তিকতাও ছিল অনেকখানি। কারণ, ‘ দুর্নীতি দমন ব্যুরো’র কাজ ছিল দুর্নীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া। আর এভাবেই ব্যুরো কর্মকর্তারা ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছিলেন। আর ব্যুরো যে ব্যর্থ হয়েছিল সে কথার প্রমাণ মেলে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন’ এর বিলুপ্তির মাধ্যমে। ব্যুরো ব্যর্থতার কারণেই তা বিলুপ্ত করে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন’ গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু অনেক ডাক-ঢোল পিটিয়ে এবং বড় বড় কথা বলে কমিশন গঠন করা হলেও ফলাফল ও প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনেকটাই অশ্বডিম্ব। মূলত দুর্নীতি দমন কমিশন বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি বলেই দেশের সচেতন মানুষ মনে করেন।
‘ব্যুরো’ বিলুপ্ত করে ‘কমিশন’ গঠন করলে আমরা বেশ আশাবাদী হয়েছিলাম। মনে করা হয়েছিল যে, নব গঠিত কমিশন দেশ থেকে দুর্নীতি উৎখাৎ করতে না পারলেও অন্তত নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবে। কিন্তু আমাদের সে আশায় গুঁড়ে বালি দেয়া হয়েছে। জরুরি সরকারের সময় তো এই কমিশন সরকারের বিরাজনীতিকরণ পরিকল্পনার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। তারা বিভিন্ন ছলছুতায় দেশের শীর্ষরাজনীতিকদের নানা ভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। কমিশনের এ ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। রাজনৈতিক শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই বিরোধী দলীয় নেতাদের একদিকে হয়রানী করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে সরকার দলীয় নেতাদের দায়মুক্তি দিয়ে নানা ভাবে নিজেদের বিতর্কিত করেছে বর্তমান কমিশন। ফলে কৌতুহলীরা এই কমিশনকে ‘দায়মুক্তি’ কমিশন বলতে বেশ পুলকবোধ করেন।
বিভিন্ন মহল থেকে কমিশনের নিরপেক্ষতা ও কর্মকর্তাদের সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও তা কখনো গায়ে মাখা হয়নি বরং দৃঢ়তার সাথে সেসব অভিযোগ আস্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের আত্মস্বীকৃতি মিলেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুদকের মধ্যেই এখনো দুর্নীতি রয়ে গেছে। তাই এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করেছেন। যেসব কর্মকর্তা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং দ্রুতই তাদের চাকরি থেকে অপসারণ করা হবে।
তিনি বলেন, দুদকের অনেক মামলা ঝুলন্ত অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে থেকে যায়। যার পরবর্তীতে মামলা অগ্রসরে বাধাগ্রস্থ করে। সেই প্রবণতা প্রতিরোধেও ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। রাজশাহীর শিল্পকলা একাডেমিতে শ্রেষ্ঠ জেলা ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আর বলেন, অনুসন্ধান, তদন্ত যে সময় করা দরকার, সে সময় করা হয় না। যারা দুর্নীতিবাজ কিন্তু কাগজে-কলমে প্রমাণ পাচ্ছি না, সে সব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি। তাদের কেউ চাকরিতে থাকবেন না, কেউ এই ডিপার্টমেন্টে থাকবেন না। কারণ দুর্নীতি দমন কমিশনে দুর্নীতি করার সুযোগ অনেক বেশি। এ কারণে আমরা এসব ব্যবস্থা নিচ্ছি। এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মূলত কমিশনের চেয়ারম্যানের আত্মস্বীকৃতিতেই কমিশনের বাস্তবচিত্র ফুটে উঠেছে। যা সচেতন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। আসলে দুর্নীতি দমন কমিশনকেই যদি দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব নয় হয়, তাহলে সে কমিশন দিয়ে কিভাবে দুর্নীতি দমন বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ? না পাকি দিয়ে তো নাপাকি দুর করা সম্ভব নয়। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দিয়ে কমিশন এ পর্যন্ত যেসব কর্মকান্ড পরিচালনা করেছে, সেগুলোর বস্তুনিষ্ঠতা ও গ্রহণযোগ্যতা কতখানি ? যাহোক কমিশন চেয়ারম্যানের বাস্তবতা উপলব্ধি অবশ্যই একটি সাহসী কাজ। এ কাজকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে কার্পণ্য করা মোটেই উচিত নয়। কিন্তু তার উপলব্ধি ও কাজের মধ্যে সমন্বয় থাকা খুবই জরুরি। দেশের মানুষ কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। তাই কমিশনকে কথায় নয় কাজেই আন্তরিকতার প্রমাণ দিতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
৯৭৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রমজান নিয়ে ব্লগীয় আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। অংশ নিতে পারেন আপনিও। বিস্তারিত জানতে-
Click this link
মন্তব্য করতে লগইন করুন