নির্বাচনের নামে প্রহসন
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ২৮ মে, ২০১৬, ০৩:১৫:৪৮ দুপুর
মূলত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধবংসের মুখোমুিখ দাঁড় করানো হয়েছে। ধবংস করা হয়েছে নির্বাচনী সংস্কৃতিও। আর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে দলীয় প্রতীকে করার মাধ্যমে ঘরে ঘরে সংঘাত ও অশান্তি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আগের দিনে ইউপি নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে না হওয়ার কারণে তা হয়ে উঠতো রীতিমত উৎসব মুখর। কিন্তু এখন তা সন্ত্রাস ও পেশীশক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। আর সরকারি দল যেভাবে চর দখলের মত কেন্দ্র দখল করে জাল ভোটের মহোৎসবে মেতে উঠেছে, তাতে চলমান ইউপি নির্বাচনকে ‘নির্বাচন’ না বলে প্রহসন বলায় যুক্তযুক্ত। একথার সাথে দ্বিমত করার কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।
স্বাধীনতার পর যতগুলো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়েছে, এবারের নির্বাচন তার মধ্যে সব চাইতে ভয়াবহ। চলমান নির্বাচনে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারালেও নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু আখ্যা দিয়ে কোরাস পরিবেশন অব্যাহত রেখেছে। যা দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের সাথে রীতিমত তামাশা করার শামিল। গণতন্ত্র আর ভোটাধিকারের নামে গণমানুষের সাথে এমন গর্হিত আচরণ কোন ভাবেই কাম্য নয়।
দেশে ৫ম দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নির্বাচনের অনিয়মের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচেছ। যা রীতিমত গা শিউরে ওঠার মত। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার খাগকান্দা ইউনিয়নের কাকাইলমোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে ভোটারদের ভোট দিতে বাধ্য করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আর ওই কেন্দ্রের ভোটের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার তখন দরজা বন্ধ করে চা- বিস্কুট খাচ্ছিলেন।
আড়াইহাজার উপজেলার খাগকান্দা ইউনিয়নের কাকাইলমোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এই ইউনিয়নে ভোটযুদ্ধ হচ্ছে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী শহীদুল ইসলাম ভেন্ডার ও আনারস প্রতীকে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী ও জেলা কৃষক লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলামের মধ্যে। ওই কেন্দ্র থেকে আগেই আনারস প্রতীকের লোকজনকে বের করে দিয়েছে নৌকা প্রতীকের কর্মীরা।
বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের অভিযোগ পেয়ে কেন্দ্র গিয়েও তার সত্যতা মেলে। সেখানে লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করছেন রাজউকের বিল্ডিং পরিদর্শক আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে নৌকার এজেন্টরা। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আনসার ও পুলিশ সদস্যরা ক্ষমতাসীনদের কাছে অসহায়। তারা চুপ করে শুধু দেখছেন এই ভোট জালিয়াতি।
প্রিজাইডিং অফিসারকে একাধিকবার বিষয়টি জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি বলে জানান দায়িত্বরত এক আনসার সদস্য। তিনি বলেন, নৌকা প্রতীকের লোকজনের কাছে আমরা অসহায়।' বাইরে এই ঘটনায় চরম বিশঙ্খলা দেখা দিলেও তাতে যেন কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার কৃষ্ণপদের।
তিনি তখন দরজা বন্ধ করে চা- বিস্কুট খাচ্ছেন। সাংবাদিক যেতেই হঠাৎ করে সরব হয়ে উঠেন কৃষ্ণপদ। সবাইকে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য তাগাদা দিতে থাকেন। কেন্দ্র দখল করে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারার বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসার কৃষ্ণপদ বলেন, 'খুবই সমস্যার মধ্যে আছি ভাই। একদিকে ঠিক করছি তো, আরেক দিকে ঝামেলা তৈরি হচ্ছে।'
মূলত নির্বাচনের নামে এমন তামাশা কোন ভাবেই কাম্য নয়। নির্বাচন মানেই যদি বিশেষ কোন দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করা হয়, তাহলে এ ধরনের প্রহসন না করে নির্বাচন কমিশন একটি তালিকা প্রকাশ করলে অন্তত জনগণের জানামালের নিরাপত্তাটা নিশ্চিত হয়। আর যদি নির্বাচন করতে হয়, তাহলে সকল নাগিরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিতের কোন বিকল্প নেই। বিষয়টি সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই ভাবতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
৯২৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন