শুধু পরীক্ষায় কেন ?
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ২৭ মে, ২০১৬, ০৯:২৫:৩০ রাত
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষায় নকলের প্রবণতা বেশি। তবে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে নকল বন্ধ করা হবে। তার এ বক্তব্যের মধ্যে অনুরাগ-বিরাগ কাজ করেছে বলেই মনে হয়। অথচ সরকারের মন্ত্রীরা আবেগ, অনুরাগ ও বিরাগের উর্দ্ধে ওঠে দায়িত্ব পালনের শপথ গ্রহন করেন। ফলে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষায় নকলের প্রবণতা বেশী একথার মাধ্যমে মন্ত্রীর শপথ ভঙ্গ করেছেন কী-না তা সংবিধান বিশেষজ্ঞদের উপর ছেড়ে দেয়ায় শ্রেয় মনে করছি। তবে একথা নির্র্দ্বিধায় বলা যায় যে, মন্ত্রীর এমন বক্তব্য দেয়ার আগে আরও অগ্রপশ্চাৎ ভাবা উচিত ছিলেন। এতে কী নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গের ঘটনা ঘটেনি ? কারণ, নকল বন্ধ করতে তার মন্ত্রণালয় বা সরকারই ব্যর্থ হয়েছে। সংসদের বাইরের বিরোধী দলগুলো নয়।
সকল শিক্ষায় নকল বন্ধ করা সম্ভব হলেও মাদরাসা ও কারিগতি শিক্ষায় কেন নকল বন্ধ করা গেল না, সে প্রশ্ন তো মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে করা যেতেই পারে। এতে কী তার মন্ত্রণালয় বা সরকারের ব্যর্থতা প্রমাণিত হয় না ? না হুজুরদের অলৌকিক শক্তি ও কারিগরি শিক্ষার কারিগরদের কাছে সরকার অসহায় হয়ে পড়েছে ? আমার তো মনে হয়, শিক্ষার কোন স্তর থেকে পরীক্ষায় অনিয়ম ও গণটুকাটুকি এখনো বন্ধ করা যায়নি। শুধু মাদরাসা আর কারিগরি শিক্ষার দোষ দিয়ে কী লাভ ? মন্ত্রী মহোদয় বোধহয় শুধুই বিরাগের বশবর্তী হয়েই তার এবং তার সরকারের অপছন্দের মাদরাসা শিক্ষাকে একহাত নিয়েছেন। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতার চর্চা করে মন্ত্রীর পক্ষে এমন বিরাগী হওয়াটা মোটেই কাম্য ছিল না। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে এক কর্মশালায় তিনি মাদরাসা শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন। কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, কারিগরি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কারিগরিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। ২০২০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কারিগরি শিক্ষার আওতায় আনা হবে। আর বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে শীঘ্রই ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কারিগরি শিক্ষার আওতায় আনতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’
মন্ত্রী মহোদয় কর্মশালায় কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন ও সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে অনেক কথা বললেও মাদরাসা শিক্ষায় দোষ বর্ণনা করেই তার দায়-দায়িত্ব শেষ করেছেন। কিন্তু তা থেকে উত্তরণে সরকারের কোন পরিকল্পনার কথা বলতে শোনা যায় নি। মাদরাসা শিক্ষাকে যুগপযোগী ও সময়োচিত করার জন্য মন্ত্রীর কোন বক্তব্য নেই। শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, দক্ষ-যোগ্যতর শিক্ষক তৈরির জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান সম্পর্কে মন্ত্রী মহোদয়ের কোন কথা নেই। মনে হয় মাদরাসা শিক্ষার নকল বন্ধ করতে পারলেই সকল সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু মন্ত্রী যদি নির্বাচনী নকল বন্ধের কোন পরিকল্পনা বা সময়সীমা বেঁধে দিতেন তাহলে পরীক্ষায় এই উটকো উৎপাতটা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যেত। নিজেরা নকল করে রাষ্ট্রক্ষমতা ভোগ করবেন, আর শিক্ষা ক্ষেত্রে অনিয়ম বন্ধের ওয়াজ-নসিহত শোনাবেন, তা শুধু বেমানানই নয় বরং অযৌক্তিকও।
বিষয়: বিবিধ
৯৩৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন