বাম মোর্চার উপলব্ধি ?
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ২৬ মে, ২০১৬, ১০:৩৮:৪৭ রাত
একথা সর্বজনবিদীত যে, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধবংসের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। মূলত এটি ছিল একদলীয় নির্বাচন। সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিকে অনেকটা জোর-জবরদস্তির মাধ্যমে অংশ গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, সাবেক রাষ্ট্রপতি এর আগের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং তার ইচ্ছামত অনেক প্রার্থী মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। এরশাদ নিজেও প্রার্থীরা আবেদন প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তার আবেদন গ্রহনযোগ্য হয়নি। কোন প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা ছাড়াই সাবেক এই রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রথম পর্যায়ে তিনি সাংসদ হিসেবে শপথ না নিলেও একসময় তাও বাকি থাকেনি। ফলে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটা যে গণতন্ত্রের নামে প্রহসন ছিল তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহল এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছে।
কথিত এ নির্বাচনের পর থেকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের পক্ষ থেকে সকল দলের অংশ গ্রহণে গ্রহণযোগ্য নতুন নির্বাচনের তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার তা মোটেই আমলে নেয়নি। অবশ্য তারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বলে উল্লেখ করেছিল। কিন্তু নতুন করে সরকার গঠনের দু’বছর অতিক্রান্ত হলেও সরকার নতুন নির্বাচনের দাবিটা অস্বীকার করে আসছে। এমনকি তারা এই নির্বাচনকে ভিত্তি ধরেই ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার কথা জোরালো ভাবেই প্রচার করছে।
সম্প্রতি বর্তমান সংসদকে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত এবং রাজনৈতিক ও নৈতিক দিক থেকে অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যায়িত করে এই সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতৃবৃন্দ। যা এই রাজনৈতিক শক্তির বিলম্বিত উপলব্ধি হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বোদ্ধামহল।
বর্তমান পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার বক্তব্য ও আন্দোলনের দাবিনামা ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতারা এসব কথা বলেন। আড়াই বছরে ধরে একই দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি জোট। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ বলেছিল এটি একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন হয়েছে সবদল চাইলে আবার জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। প্রায় আড়াই বছরে আ.লীগ সরকার সেই প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছে। সরকার এখন বলছে ২০১৯ সালের আগে আর দেশে কোন নির্বাচন হবে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে বিএনপি বলছেন, ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস আর আওয়ামী লীগ এই দিনটিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।
পশ্চিমা আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কিছুটা রক্ষার কথা ভেবেছিল সরকার। সেখান থেকে তারা সরে এসেছে। আন্তর্জাতি চাপ ও রাজনীতির গুমোট পরিস্থিতির অবসানে আগাম নির্বাচন দিতে পারে সরকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বললেও এখন সেই পরিস্থিতি নেই।
বাম নেতারা বলেছেন, দেশের রাজনীতি-অর্থনীতিতে ভারত-মার্কিনসহ সাম্রাজ্যবাদী-আধিপত্যবাদী শক্তির হস্তক্ষেপ প্রতিরোধের জন্য জনগণকে ঐকবদ্ধ হতে। এছাড়া সমতা, ন্যায্যতা ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশিদের হত্যা বন্ধ ও তিস্তার পানিসহ ভারতের সাথে বাংলাদেশের অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর ন্যায্য সমাধানে সরকারের কাছে আহবান জানান তারা।
মূলত গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত না থাকলে দেশে টেকসই উন্নয়ন কোন ভাবেই সম্ভব নয়। আর শাসনকাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করা না গেলে তারা উন্নয়ন সহযোগী হয়ে ওঠেনা। ফরাসী বিপ্লবের পর ফরাসীরা জনগণকে শাসনকাজে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিল বলেই তারা অতিদ্রুত উন্নতির স্বর্ণশিখরে আরোহন করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু আমাদের দেশের শাসকগোষ্ঠী সব সময়ই জনগণ ও জনমতকে উপেক্ষা করে শাসনকাজ পরিচালনা করায় আমরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পরছি। তাই দেশ ও জাতিকে সংকটের হাত থেকে বাঁচাতে হলে অবাধ গণতন্ত্রায়নের কোন বিকল্প নেই। বস্তুত সে উপলব্ধিই বোধ হয়েছে বাম মোর্চার। যদিও তা কিছুটা হলেও বিলম্বিত বলতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
৮৬১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখনকার উপলব্ধি তাদেরকে হাওয়াও মিশিয়ে দেবে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন