এ্যাটর্নী জেনারেলের বিলম্বিত উপলব্ধি ?

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ২৪ মে, ২০১৬, ০৯:০৭:৫৬ রাত



এ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম দাবি করেছেন সাদা পোষাকে নিজেদের পরিচয় না দিয়ে পৃথিবীর কোথাও গ্রেফতার করা হয় না। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ৭ বছরে এ ধরনের ঘটনা তো অহরহ ঘটেছে। এমনকি মানুষকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করার জন্য স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ৫৪ ধারার সৃষ্টি করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ৫৪ ধারা চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত হাইকোর্ট বিভাগের রায়ও সরকার মেনে নেয়নি বরং তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপীলও করেছিল। কিন্তু মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ সে আপীল খারিজ করে দিয়েছেন।

আপীলে হেরে গিয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম এখন খারিজাদেশের পক্ষেই কথা বলতে শুরু করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের বর্তমান অবস্থানটা যদি আগেই পরিস্কার করা হতো, তাহলে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আপীল করার প্রয়োজন হতো না। কিন্তু এখন আদালতের রায়ে হেরে গিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ সুবোধ বালকের মত সোজা কথা বলতে শুরু করেছে। সম্প্রতি আপীল বিভাগের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সাদা পোশাকে নিজেদের পরিচয় না দিয়ে পৃথিবীর কোথাও এভাবে গ্রেফতার করা হয় না বলে মন্তব্য করেছেন এ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিনি বলেছেন, সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেফতার করতে হলে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দেওয়া উচিত । ৫৪ ও ১৬৭ ধারা নিয়ে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পর এই মন্তব্য করেছেন তিনি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সাদা পোশাকে যারা গ্রেফতার করে তাদের কাজ হলো আসামিকে অনুসরণ করা, গতিবিধি লক্ষ্য করা। কাউকে গ্রেফতার করার ব্যাপারে নিশ্চয় পরিচয় দেওয়া উচিত। আমার মনে হয় না, নিজেদের পরিচয় না দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে গ্রেফতার করতে যায়। এভাবে যারা যাচ্ছে তারা নিশ্চয়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক না। তিনি বলেন, এখন আমাদের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আপিল বিভাগ যে রায় দেবেন বা যে সমস্ত নির্দেশনা দেবেন তার আলোকে আশা করি সরকার পদক্ষেপ নেবে।

এ্যাটর্নী জেনারেলের মতে, মতবাদের কারণে ডাক্তার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের খুন করা হয়েছে। এ সমস্ত আসামিদের ধরবে পুলিশবাহিনী। এদিকে আসামি ধরার ব্যাপারে আদালতের কিছু নির্দেশনা মেনেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারকে সামনের দিকে এগুতে হবে।

তিনি বলেন, সব সময় আগের থেকে মামলা করে আসামিকে ধরা সম্ভব হয় না। অপেক্ষা করে বসে থাকলে তো সে পালাবে। যেমন যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার গ্রেফতারের নির্দেশ শুনে পালিয়েছে। আগে যদি তাকে ধরে ফেলতো পরে আদালতের সামনে নিয়ে আসতো তাহলে পালাতে পারতো না। এগুলো জেনারালাইজ করা যাবে না। একেকটা ঘটনায় একেক রকম পদক্ষেপ নিতে হয়। যাই নিতে হোক না কেন আদালতের নির্দেশের আলোকে নিতে হবে। আদালতও আশা করি বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করবেন। আদালতের মূল উদ্বেগ হচ্ছে যেন মানবাধিকার লংঘন করা না হয়।

মূলত আপীল বিভাগের রায়ের পর এ্যাটর্নী জেনারেলের মন্তব্য আসলে বিলম্বিত উপলব্ধি। আর এই উপলব্ধির জন্য তাকে সাধুবাদ জানাতে কার্পণ্য করার কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু তার এই উপলব্ধিটা যা সময়োচিত হতো, তাহলে এ জাতি অনেক দুঃখজনক ও বিভৎস স্মৃতি এড়াতে পারতো। মূলত বর্তমান সরকারের সময়ে সাদা পোষাকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ব্যাপার ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক। আর এসবের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনা ঘটনা ঘটেছে। এখনো অগণিত মানুষের হদিস মিলেনি। তবে তার কথার মধ্যে একটা শুভঙ্করের ফাঁকিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি দাবি করেছেন, সবসময় আগে থেকে মামলা করে আসামী ধরা নাকি সম্ভব হয় না। কিন্তু সচেতন মানুষের প্রশ্ন, অপরাধ সংঘঠিত হলে কেন মামলা করে আসামী ধরা যাবে না ? তিনি কী অপরাধ সংঘঠনের আগেই গ্রেফতারের পক্ষে কথা বলছেন ? তাহলে কী আগে গ্রেফতার করে কোন মামলায় ফাঁসানো যায় এমন অশুভ সংস্কৃতির প্রতিই কী ইঙ্গিত করলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইনকর্মকর্তা। বিশেষ ক্ষেত্রের কথা বলে সবকিছুকেই কী আবার জেনারালাইজ করা হবে না, এ গ্যারান্টি কে দেবে ?

বিষয়: বিবিধ

৮৫১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

370019
২৪ মে ২০১৬ রাত ১০:১২
হতভাগা লিখেছেন : বাংলাদেশের পুলিশ আইন মানে নাকি ?

এদের সোর্সরা এদের নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারণ মানুষদের অনেক হয়রানী করে থাকে । এদের কাছে পরিচয়পত্র কে দেখতে চাইবে ?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File