জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী ও আমাদের প্রত্যাশা

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ২৪ মে, ২০১৬, ০৫:০০:০৮ বিকাল



পুলিশের মহাপরিদর্শক সম্প্রতি দাবি করেছেন যে, বাংলাদেশ পুলিশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। তার কথার দ্বিমত বা প্রতিবাদ না করেই বলছি একশ্রেণীর অসৎপ্রবণ পুলিশ সদস্যের অপতৎপরতা পুরো বাহিনীকে জনসমক্ষে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। এসব অসাধু পুলিশ সদস্যদের বেআইনী কার্যক্রম কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না। এর প্রধান কারণই হচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। আমাদের দেশে অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার যে সিলসিলাটা বা অপসংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে, তাই আমাদের সমাজ জীবন অস্থির করে তুলেছে।

কোন পেশা বা বিশেষ শ্রেণি নয় বরং সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যেই অপরাধ প্রবণতা থাকতে পারে। তাই অপরাধের প্রতিবিধান ও অপরাধীর শাস্তি দেয়ার জন্য রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট বিভাগ রয়েছে। মূলত দেশের সুশাসন ও আইনের শাসনের অনুপস্থিতির কারণেই রাষ্ট্রের এইসব অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথাভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না বা পালন করতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে দেশে অপরাধ প্রবণতা ক্রমবর্ধমান। কিন্তু জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত একশ্রেণির পুলিশ সদস্যদের ফৌজদারি অপরাধ বেশ ভাবনার বিষয়ই বলতে হবে।

ঈুলিশ সদস্যদের অপরাধ সংক্রান্ত খবর প্রায়ই গণমাধ্যমের খবরের শিরোনাম হয়। তরিঘরি বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ারও খবর পাওয়া যায়। কিন্তু পরবর্তীতে অপরাধের শাস্তিবিধানের পরিসমাপ্তি ঘটানো হয় কর্মস্থল থেকে অনত্র বদলীর মাধ্যমে। ফৌজদারি অপরাধের বিচার যদি শুধুমাত্র বদলীর মাধ্যমে করা হয়, তাহলে এসব নগণ্যসংখ্যক অসৎপ্রবণ পুলিশ সদস্যদের কারণেই পুরো বাহিনীকে গ্লানিমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। যা রীতিমত দুঃখজনকই বলতে হবে।

সম্প্রতি প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ফেনীর দাগনভূঞায় বিচারপ্রার্থী এক বিধবা নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের এএসআইয়ের বিরুদ্ধে। থানায় বিচার চাইতে গিয়ে ওই নারী ধর্ষণের শিকার হন। দাগনভূঞা থানা পুলিশের এএসআই দেলোয়ার হোসেন তাকে ধর্ষণ করেছেন বলে ওই নারী থানায় অভিযোগ করেন। নির্যাতিত ওই বিধবার বাড়ি উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামে বলে জানা গেছে।

দাগনভূঞা থানার ওসি লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির কথা কাছে স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় সহযোগিতার অভিযোগে থানার রাইটার মান্নানকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া অভিযুক্ত পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক দেলোয়ারকে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। ওসি আরও জানান, নির্যাতিত বিধবা ওই নারী থানা হেফাজতে রয়েছেন। এই বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে। তাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, ওই বিধবা নারী এএসআই দেলোয়ার হোসেন ও রাইটার মান্নানকে আসামি করে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন। মামলা নং-০৯/১৬, তারিখ-২৩/০৫/২০১৬ইং। ধর্ষণের শিকার ওই নারী জানায়, পারিবারিক একটি সমস্যা নিয়ে অভিযোগ দিতে থানায় যান তিনি। তার কথামতো রাইটার আবদুল মান্নান অভিযোগ লিখে তাকে নিয়ে থানার সামনের জামান টাওয়ারে যান। সেখানে এএসআই দেলোয়ারের কক্ষে তাকে রেখে মান্নান সটকে পড়ে।

বিধবার অভিযোগ, এক পর্যায়ে দেলোয়ার দরজা আটকে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এরপর তিনি সেখান থেকে ছুটে এসে বিষয়টি ওসিকে অবহিত করলে তিনি রাইটার মান্নানকে আটক করেন। নির্যাতিত বিধবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও জানান, তার স্বামী বেশ কিছুদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। তার তিনটি ছেলে মেয়ে রয়েছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ মোটেই অভিনব নয়। প্রতিনিয়তই এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়। ঘটনা ঘটার পর আটক-গ্রেফতার ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু এসব অপরাধের জন্য কারো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে এমন খবর কালে-ভদ্রেও শোনা যায় বলে মনে হয় না। তাই পুলিশ বাহিনীর শৃঙ্খলা রক্ষায় ও ভাবমূর্তি উদ্ধারে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের সনাক্ত করে দায়িদেরকে অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় জনবান্ধব পুলিশ বাহিনীর প্রত্যাশাটা রীতিমত অধরায় থেকে যাবে।

বিষয়: বিবিধ

৯৪০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

370010
২৪ মে ২০১৬ রাত ০৮:১৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই পুলিশ বাহিনি কখনও মানুষ হবেনা। এটা ভেঙ্গে দিয়ে নতুন করে গড়তে হবে।
370016
২৪ মে ২০১৬ রাত ০৯:৩৭
হতভাগা লিখেছেন : ৫৪ ও ১৬৭ ধারা নিয়ে হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ বহাল রেখেছে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File