মমতার প্রত্যাবর্তন ও তিস্তাচুক্তির ভবিষ্যৎ

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ২৪ মে, ২০১৬, ১১:২৭:৫৭ সকাল



৬১ বছর বয়সী অতি সাদাসিধে এক সহজ-সরল মহিলা। পড়নে তাঁতের শাড়ি, অলঙ্কারবিহীন; নেই প্রসাধনীর বাহারী উপস্থাপনা। কাঁধে নিজস্ব ঐতিহ্যের কাপড়ের ব্যাগ! তিনি চিরকুমারী! কিন্তু রাজনীতির সাথেই তার প্রেম, প্রণয়, ভালবাসা, আভিসার ও ঘর-সংসার। তিনিই সেই মহিয়সী নারী মমতা ব্যানার্জী। তিনি অজেয়কে জয় করে গোটাবিশ্বকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন!

তিনি কালজয়ী নেতার বাস্তব প্রতিবিম্ব। মমতা ব্যানার্জী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাসে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেছেন। এছাড়াও তিনি আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সাম্প্রতিক নির্বাচনে তার সোনার কাঠি আর রুপোর কাঠির ছোঁয়ায় অসাধ্যকে সাধন করে দেখিয়েছেন। সর্বভারতীয় সবচেয়ে বড় দুটি দল এবং সবচেয়ে বড় প্রাদেশিক দলÑ এই ত্রি-শক্তিকে পরাজিত করে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভায় দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসন লাভ করে অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। যা কল্পনার কল্পলোককেও হার মানিয়েছে।

মূলত কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গ শাসন করেছে ২৫ বছর। আরেকটি বড় দল ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি। তারা এখন কেন্দ্রীয় সরকারে। মমতা নির্বাচনে ধরাসায়ী করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিএমকে। এই দলটি একটানা ৩৪ বছর পশ্চিমবঙ্গ শাসন করেছে। কংগ্রেস এবং সিপিএম, যারা পশ্চিমবঙ্গকে ৫৯ বছর শাসন করেছে, তারা মমতাকে ধরাশায়ী করার জন্য এবার নির্বাচনে একটা সমঝোতা করেছিল। কিন্তু তারা সম্মিলিতভাবে ৭৬টির বেশি আসন পায়নি। আর দিল্লির শাসক দল বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার নির্বাচনে পেয়েছে মাত্র ৩টি আসন। পক্ষান্তরে মমতা ব্যানার্জী লাভ করেছেন ২১১টি আসন। বিধান সভার আসন সংখ্যা ২৯৪টি।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জী পেয়েছিলেন ১৮৪টি আসন। এবার পেয়েছেন ২১১টি আসন। অর্থাৎ বিগত ৫ বছরে তার জনপ্রিয়তা এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এবারের নির্বাচনে ২৭টি আসন বেশি পেয়েছে তার দল। অন্যদিকে সিপিএম গত বারে পেয়েছিল ৪০টি আসন। এবার পেয়েছে ৩২টি। কংগ্রেস গতবার পেয়েছিল ৪০টি আসন, এবার পেয়েছে ৪২টি আসন।

মূলত ক্ষমতাশীন বিজেপিকে বিপর্যস্ত করে বিপুল বিক্রমে জয়ী হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ফের ক্ষমতার মসনদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার এই জয়কে ‘অকল্পনীয়’ ও ‘ঐতিহাসিক’ বললেও অত্যুক্তি হবার কথা নয়। আসলে মমতা একা বিরোধীদের সকল চ্যালেঞ্জ যেভাবে সার্থকভাবে মোকাবেলা করেছেন তাও অভাবনীয়। রাজ্যজুড়ে ‘উন্নয়ন’ ম্যাজিকেই পুনরায় ক্ষমতায় আসলেন মমতা। অতি সাধারণ সুতির শাড়ি আর হাওয়াই চটিতে ফটফট করে সারা রাজ্য চষে বেড়িয়ে জানিয়েছিলেন, তিনিই ২৯৪টি কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন। তার মাথায় তিনি মানুষের আশীর্বাদ চেয়েছেন।

দেখা গেছে পশ্চিম বঙ্গের মানুষ নিঃসঙ্কোচে তাদের সবটুকু উজার করে দিয়েছেন তৃণমূলের প্রতি। তবে এটাই বিপুল জয়ের একমাত্র কারণ হতে পারে না। রাজ্যে বড় কোনো শিল্প আসেনি গত সাড়ে চার বছরে। ব্যাপক কোনো কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। বরং বারে বারে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে মমতা অবশ্য ক্ষমতায় বসার দুই বছরের মাথাতেই বলার চেষ্টা করেছিলেন যে, তিনি শতভাগ কাজ সম্পন্ন করেছেন। এটা যে সম্ভব নয়, সেটা জানা সত্ত্বেও এই প্রচারটা তিনি চালিয়ে গিয়েছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা অনেক প্রকল্প এমনভাবে নিজের মাথা থেকে বের করেছিলেন সেগুলোই হয়ে উঠেছে তুরুপের তাস। তিনি রাজ্যজুড়ে লোকের চোখে পরার মতো উন্নয়নের কাজে হাত দিয়েছেন সরকারে আসার কিছুদিনের মধ্যেই।

বিরোধীরা মমতার সব প্রকল্পকে দান-খয়রাতি বলে তালগোল পাকানোর চেষ্টা করলেও মানুষ দেখেছেন যে, শহরের তো বটেই, গ্রামে গ্রামে রাস্তা তৈরির কাজ আগের থেকে অনেকগুণ ভালো হয়েছে। অবহেলায় পড়ে থাকা মোরামের রাস্তায় কংক্রিটের বা বিটুমিনের প্রলেপ পড়েছে। রাজ্যে বিদ্যুতের অবস্থার অনেকগুণ উন্নতি হয়েছে। রাজ্য এখন বিদ্যুতে উদ্বৃত্ত রাজ্য, লোডশেডিংয়ের আতঙ্ক নেই মোটেই। গ্রামে গ্রামে স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল তৈরির পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে মমতা একটি কেন্দ্রীয় প্রকল্পকে সুন্দরভাবে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের প্রান্তিক মানুষের কাজে দুই রুপি দরে চাল পৌঁছে দিয়েছেন। গণবণ্টন ব্যবস্থাকে জোরদার করতে ব্যাপক নজরদারি চালানো হয়েছে।

একশ দিনের কাজের প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গকে সারা দেশের শীর্ষে নিয়ে যাবার ফলে বহু মানুষের রিজিক-রুটির সংস্থান হয়েছে। সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগের মধ্যে কয়েক লাখ তরুণ-তরুণীকে কাজের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। আর কন্যাশ্রী প্রকল্পে মেয়েদের দেয়া হয়েছে ৫০ হাজার রুপি। সবুজসাথী প্রকল্পে ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে সাইকেল দিয়েছে সরকার। প্রাথমিকের ছেলেমেয়েদের জন্য জুতো ও দুস্থদের জন্য বই-খাতা দেয়ার কাজ করেছেন। শহরে রাস্তা-ঘাটের পরিচ্ছন্নতা সবার নজর কেড়েছে। ইমাম-মোয়াজ্জিনদের ভাতা যেমন দিয়েছেন তেমনি ভাতার ব্যবস্থা করেছেন কির্ত্তনীয়া থেকে বাউল পর্যন্ত। এই সাফল্যগুলোকেই উন্নয়নের সঙ্গে সুন্দরভাবে জুড়ে দিয়েছেন মমতা।

এই উন্নয়ন কাজ যাতে থমকে না যায় সেজন্য গোটা সচিবালয়কে তিনি নিয়মিত জেলা শহরে নিয়ে গিয়ে ধারাবাহিক নজরদারির ব্যবস্থা করেছেন। সরকারের সর্বোচ্চ স্তরের আমলাদের নিয়ে জেলায় গিয়ে কাজের পর্যালোচনা করায় স্থানীয় আমলারা কাজের দিকে নজর রাখতে বাধ্য হয়েছেন। এতে সফলতাও পেয়েছেন তিনি। এজন্য মমতা কাউকে অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি, আবার কাউকে তীব্র ভর্ৎসনা করতেও কুন্ঠাবোধ করেন নি। স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে মমতা বিনামূল্যে ওষুধ এবং ফেয়ার প্রাইস শপ চালু করে সুলভে ওষুধ পাবার যে ব্যবস্থা করেছেন। যা সারাদেশেই প্রশংসিত হয়েছে।

কংগ্রেসের সঙ্গে মতাদর্শগত বিরোধ সত্ত্বেও বামরা যেভাবে সব গণআন্দোলনের রাস্তাকে পরিহার করে নীতিহীন জোটে শামিল হয়েছিল, সেটা শিক্ষিত সচেতন মানুষ যেমন মেনে নিতে পারেননি; তেমনি গ্রামের পোড় খাওয়া মানুষও পছন্দ করেননি। বামদের প্রতি এই ঘৃণার প্রকাশ ঘটেছে কয়েক শতাংশ ভোটের ক্ষয়ে। অন্যদিকে এবারও মুসলিম ভোট ব্যাপকভাকে তৃণমূল কংগ্রেসের দিকেই গিয়েছে। মুসলিম সংগঠনগুলোর অনেক ক্ষোভ থাকা সত্তে¦ও তারা মমতাতেই ভরসা রেখেছেন।

আগামী ২৭ মে রেড রোডে কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতিতে শপথ নেবেন এই বিজয়ীনি । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাজ ভবনে শপথ অনুষ্ঠান হলে সাড়ে তিন হাজারের বেশি অতিথিকে সেখানে জায়গা দেয়া যায় না। রেড রোডে অনেক বেশি মানুষের সমারোহে এবার নিজের ঐতিহাসিক জয়ের উদযাপন চান তৃণমূলনেত্রী। আর সেই শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেরিওয়াল, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবকে।

পশ্চিমবঙ্গে বিপুল ব্যবধানে পুননির্বাচিত হয়েছেন মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে মমতার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য খুব একটা ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, যেসব নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ক্ষমতায় এসেছেন এবং যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন, তাতে বাংলাদেশ সংক্রান্ত ইস্যুতে রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংঘাত আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলেই পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন।

তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি যে প্রধানত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তিতেই আটকে গেছে, একথা অস্বীকার করার কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আশা করেছিল পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের পর মমতা যদি ফের জিতে আসেন, তাহলে হয়তো তিনি তিস্তা নিয়ে বেশ নমনীয় হবেন। রাজনীতি বিশ্লেষকরা প্রায় একবাক্যে বলেছিলেন মমতা যদি ক্ষমতাতে ফেরেনও, তাহলেও তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা অনেক কমবে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে তার দরকষাকষি করার ক্ষমতাও অনেক দুর্বল হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বরং দেখা গেছে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার মসনদে ফিরেছেন মমতা ব্যানার্জি। এর অর্থ রাজ্যেই শুধু তার ক্ষমতা বাড়ছে না বরং পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভাতেও তিনি এখন অনেক বেশিসংখ্যক এমপি পাঠাতে পারবেন। আর রাজ্যসভায় যেহেতু বিজেপির গরিষ্ঠতা নেই, তাই বিভিন্ন বিল পাস করানোর জন্য তৃণমূলকে তোয়াজ করে চলতে হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও। সোজা কথায় দিল্লিতে তৃণমূল কংগ্রেসের দরকষাকষির ক্ষমতা কমার বদলে বাড়লো। এ বাস্তবতারই সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে তিস্তা চুক্তির ওপর।

রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মতে, তৃণমূল নেত্রী হয়তো এখন এই চুক্তিতে সম্মতি দেওয়ার বিনিময়ে পশ্চিমবঙ্গের বিপুল ঋণ মওকুফ করার শর্ত জুড়ে দেবেন। কেন্দ্রের সঙ্গে দরাদরিতে তিনি বেশ করিৎকর্মা এবং এখন হয়তো তিনি বলবেন, তিস্তাতে রাজি আছি, কিন্তু তার আগে রাজ্যের এতো হাজার কোটি টাকার ঋণ মাফ করে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে অবধারিতভাবেই তিস্তা চুক্তির ভাগ্য নিয়ে নতুন করে সংশয় তৈরি হবে। কারণ এক কথায় এতো বিপুল ঋণ মওকুফ করাটা মোটেই সহজ নয়। ঋণ মওকুফ যদি নাও হয়, মমতার শর্ত যে মোটেই সহজ হবে না এটা ধরেই নেওয়া যায় এবং তাতে তিস্তা চুক্তির জট খোলাতেও দেরি হবে নির্ঘাত।

মমতা ব্যানার্জিও ৫ বছরের মুখ্যমন্ত্রীত্বে যে বিষয়গুলো নিয়ে তাকে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তার একটি হল পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী ও জেএমবির শেকড় ছড়ানোর কথিত অভিযোগ। জামায়াত নেতাকর্মীরা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন, সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির টাকা জামায়াতের মাধ্যমে বাংলাদেশে নাশকতা সৃষ্টির জন্য পাঠানো হয়েছে, মমতার রাজত্বে জেএমবি জঙ্গিরা অবাধে পশ্চিমবঙ্গে তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তার করেছে। কিন্তু প্রশাসন সব জেনেশুনেও চুপ করে থেকেছে, এমন অজস্র অভিযোগ গত পাঁচ বছরে উঠেছে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কিন্তু কখনও এই সব কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা যায়নি। এমন কী, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনায় নিন্দা জানাতেও তিনি এক মাসের মতো সময় নিয়েছিলেন। উল্টো তিনি গোয়েন্দা সংস্থার সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেই রাজ্যসভায় তার দল থেকে এমপি করে পাঠিয়েছিলেন ইমরান আহমেদকে। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে। এমনও অভিযোগ উঠেছিল, সারদা কেলেঙ্কারির টাকা বাংলাদেশে পাচার করার পেছনে মূল মাথা ছিলেন তিনিই। যদিও এসব অভিযোগে মমতার পক্ষ থেকে বরাবরই অস্বীকার করা হয়েছে।

মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠরাও স্বীকার করেন, এই সব জঙ্গি বা মৌলবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তিনি সেভাবে কখনও জোরালো প্রতিবাদ করেননি। কারণ তার মধ্যে একটা মুসলিম ভোট হারানোর ভয় ভীতি রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের হয়তো ৯৯ শতাংশ মুসলিমই জামায়াত-জেএমবির কার্যকলাপ সমর্থন করেন না, তারপরও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে মমতা ব্যানার্জিও সরকার জামায়াত-জেএমবিকেই প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত। ‘মমতা হয়তো ভাবেন, এই সব ইসলামি মৌলবাদীদের নিন্দা করলে মুসলিমরা তার ওপর চটে যাবেন। যদিও এই ধারণার কোনও ভিত্তি নেই’, দাবি করেছেন তার দলেরই এক এমপি।

২০১১ সালে ভোটে তার দল পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের পাশে পেয়েছিল, পাঁচ বছর পরে এবারের ভোটেও মুসলিমরা তৃণমূলকে ঢেলে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু মমতার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের আশঙ্কা, এর ফলে পশ্চিমবঙ্গে জামায়াত বা জেএমবির কাজকর্ম নিয়ে মমতা সম্ভবত আরও চুপ করে যাবেন, আর তার সরকারের নীরব প্রশ্রয়েই পশ্চিমবঙ্গকে নিরাপদ অভয়ারণ্য হিসেবে বেছে নেবে এই দুই সংগঠনের লোকজন। যারা বাংলাদেশের ভেতর ক্রমশ: কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। যদিও বাস্তবতার সাথে এর কোন সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। মূলত এসব পশ্চিম বঙ্গের রাজনৈতিক মাঠের মেঠো বক্তব্য, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার মোক্ষম হাতিয়ার বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধামহল।

মমতা ব্যানার্জী স্বদর্পে ক্ষমতায় ফিরেছেন। কিন্তু এতে বাংলাদেশের সাথে ভারতের দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইতিবাচক কোন প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। তিস্তাচুক্তি নিয়ে অনেক আশাবাদের কথা বলা হলেও সাম্প্রতিক পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী ফলাফল বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে বলেই মনে হচ্ছে। ধারণা করা হয়েছিল যে, সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জী তৃণমূলত কংগ্রেস কোন রকমে ক্ষমতায় ফিরতে পারলেও তাকে একটি দুর্বল সরকারেরই নেতৃত্ব দিতে হবে। কিন্তু সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে তৃণমূল নেতা স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি আগের চাইতে অনেক বেশী মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই কেন্দ্রীয় সরকার তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কিছু আদায় করে নেয়ার সুযোগ ও সম্ভবনাটা খুবই কম।

অভিজ্ঞমহল বলছেন, তিস্তাচুক্তিতে ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারই আন্তরিক নয়। তারা মমতা ব্যানার্জিকে তুরুপের তাস হিসাবে ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবেই বাংলাদেশকে নায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করছে। আর বাংলাদেশের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে সবকিছু। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তিস্তা চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণের আশাবাদী হওয়ার মত কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। তবে ভবিষ্যতে কী হয় তা অবশ্য ভবিষ্যৎই বলে দেবে।

বিষয়: বিবিধ

১১৫০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

369950
২৪ মে ২০১৬ সকাল ১১:৩৯
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : আপনার বিশ্লেষণধর্মী লেখাটা ভালো লাগলো। আসলেই তিস্তা নামক মূলা ঝুলিয়ে আমাদের সর্বস্ব লুটিয়ে নেয়া হচ্ছে।
369963
২৪ মে ২০১৬ দুপুর ১২:০৩
মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন : "বাংলাদেশের জনগণের আশাবাদী হওয়ার মত কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।"

আমার মনে হয় বাংলাদেশে ছাড়া অন্য সকল দেশের নিজস্ব পলিসি আছে, তা হচ্ছে আভ্যন্তরিন ব্যাপারে তাদের মধ্যে মতনৈক্য আছে, থাকবে থাকতে পারে; কিন্তু রাষ্ট্রের কল্যাণের ক্ষেত্রে তারা সবাই এক। বিপরীত শুধু আমরা! আমরা দল আর ক্ষমতার স্বার্থে দেশকে বিসর্জন দিই অনায়াসে।
369971
২৪ মে ২০১৬ দুপুর ১২:৩১
সৈয়দ মাসুদ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File