গণেশ উল্টে যাওয়ার পূর্বাভাস ?
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ২৩ মে, ২০১৬, ১২:০৮:১৭ দুপুর
আওয়ামী লীগ অতীত বৃত্ত থেকে এখনো বেড়িয়ে আসতে পারেনি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তারা যেমন একদলীয় শাসনের আদর্শে বিশ্বাসী ছিল, স্বাধীনতার ৪ দশক অতিক্রান্ত হলেও তারা এখনো সে নিগড়েই আটকে পড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। যদিও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেত্রী অতীত ভুলের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছিল। মূলত আওয়ামী লীগের পশ্চাদমুখীতার কারণেই যেমন দেশের ক্ষতি হচ্ছে, তেমনিভাবে আগামী দিনে তাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতিও কন্টকাকীর্ণ করছে। মূলত আওয়ামী লীগের নেতিবাচক রাজনীতির কারণেই দেশে এখন ক্রান্তিকাল। সরকারের বিরাজনীতিকরণ নীতি এখন তাদের জন্য বুমেরাং হতে চলেছে বলেই মনে হচ্ছে। তাদের গতিপথ ক্রমেই সংকীর্ণ হতে সংকীর্ণতর হচ্ছে বলেই অভিজ্ঞমহলের ধারণা।
মূলত রাজনৈতিক দল গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী হওয়া জরুরি। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে তার অনুপস্থিতি বেশ জোরালোভাবেই লক্ষণীয়। রাজনৈতিক দল সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার বলেন, ( An association organized in support of some principles or policies which through constitutional means it endeavors to make the determinant of government.)
অর্থাৎ রাজনৈতিক দল বলতে সেই জনসমষ্ঠিকে বুঝায়, যারা বিশিষ্ট এক কার্যনীতির ভিত্তিতে একত্রিত ও সংহত হয়েছেন এবং যারা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার গঠনের জন্য প্রয়াসী।
রাজনৈতিক দলের ভূমিকা সম্পর্কে অধ্যাপক লিকক ( Leacock ) বলেন, ( Far from being in conflict with the theory of democratic government, party government is the only thing which renders it feasible.)
অর্থাৎ রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রের বিরোধী হওয়া তো দূরের কথা দলীয় সরকার গণতন্ত্রকে সফলতা দান করে।
মূলত নিজস্ব স্টাইলের গণতান্ত্রিক চেতনার কারণেই আওয়ামী লীগ সরকার যেমন দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে বহির্বিশ্বে কুটনৈতিক বিপর্যয়টাও বেশ লক্ষণীয়। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের কারণে দেশের পররাষ্ট্রনীতি অনেকটাই একদেশদর্শী হয়ে উঠেছে। বিতর্কিত এ নির্বাচনের পর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি নতুন নির্বাচনের জোড়ালো তাগিদ দেয়া হলেও ক্ষমতাসীনরা তা আমলে নেয়নি। ফলে রাষ্ট্র শাসনে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ না থাকায় যা হবার তাই হচ্ছে। কুটনীতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, জনশক্তি রপ্তানী, বৈদেশিক বাণিজ্য ও রেমিটেন্স প্রবাহে রীতিমত ভাটা পড়েছে। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকায় একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বৈদেশিক বিনিয়োগ। দেশে গ্রাউন্ড পলিটিক্স নির্বিঘœ না হওয়ায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠছে অরার্জনৈতিক ও অশুভ শক্তি। ফলে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য এখন নিত্যনৈমক্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসব বিষয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহল বারবার তাগাদা ও উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সরকারের অতিমাত্রায় পলায়নপর মানসিকতার কারণে সমস্যা যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই রয়ে গেছে। সরকার বোধহয় এখন আত্মশ্লাঘায় ভুগছে, কিন্তু পেছনে ফিরে তাকানোর কোন পথ পাচ্ছে না। কারণ, তারাই বোধহয় বহির্গমনের পথটা নিজেরাই রুদ্ধ করে দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলকে বারবার আশ্বস্ত করার চেষ্টা করা হলেও তা খুব একটা হালে পানি পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক মহলের অব্যাহত উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায় সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর দূতদের সামগ্রিক রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি অবহিত করেছে সরকার। মূলত দেশের সার্বিক পরিস্থিতি জানতে আরও দুই সপ্তাহ আগে ইইউ’র প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে ব্রিফিং এর সময় চাওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেশের বাইরে থাকায় বিলম্বে এ ব্রিফিং করা হয়। এতে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
সাম্প্রতিক কয়েকটি হত্যাকান্ড নিয়ে ইইউভুক্ত দেশগুলো আগে থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও তাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা সরকারকে গণতান্ত্রিক আচরণ নিশ্চিত ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার পাল্টা নসিহত শুনিয়েছেন বলে জানা গেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি সরকারের অনুকুলে আছে বলে আপাত মনে হচ্ছে না। এমনকি সরকার বর্তমান পরিস্থিতে সরকার পতনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে গন্ধ পাচ্ছে এবং ভাবসাবে তারা বেশ আতঙ্কের মধ্যেই রয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে।
সার্বিক পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কুটনৈতিক বিপর্যয় হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে, বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং ওয়াশিংটন ডিসির উড্রো উইলসন সেন্টারের সিনিয়র বিশ্লেষক উইলিয়াম বি মাইলাম গত ২০মে নিউইয়র্ক টাইমসের লেখা এক নিবন্ধে বলেছেন, বাংলাদেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি আলোচিত হত্যাকান্ডে জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার চেয়ে সুশাসনের বিষয়টিই বেশি জড়িত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলগুলোকে প্রচন্ড চাপে রেখেছে। যা শুরু হয় ২০১৪ সালে সর্বশেষ নির্বাচনের পর। আর এ কারণেই জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে কার্যত এক দলের রাষ্ট্র বানিয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমান সময়কে সরকারের ক্রান্তিকাল হিসেবেই দেখছেন তথ্যাভিজ্ঞমহল। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা সেদিকেই ইঙ্গিত করছে বলেই মনে হচ্ছে। গণজাগরণ মঞ্চের মূখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য দুধ-কথা দিয়ে পুষেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তার সরকার বিরোধী বক্তব্য খোদ সরকারকেই বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। তার জামায়াত-শিবির নিয়ে সহানুভূতিমূলক বক্তব্যকে ‘ভূতের মুখে রাম নাম’ হিসাবে আখ্যা দেয়া হলেও তা সরকারের গাত্রদাহ হিসাবেই দেখা হচ্ছে।
অতিসম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যায় গ্রেফতার শিবির নেতার মৃত্যুর ব্যাপারে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। এ পোস্টে তিনি শিবির নেতা হাফিজুর রহমানের মৃত্যুকে ‘হত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি লিখেছেন, “অবিচার দিয়ে কোন দিনই সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়' - এই সত্যটুকু বুঝতে আমাদের যতো দেরি হবে, আমরা ততো পেছনের দিকেই যেতে থাকবো। 'আইনের শাসন' থেকেও আরো দূরে যেতে থাকবো।”
“সংগঠন হিসেবে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে সম্ভবত সবচেয়ে সোচ্চারদের আমি একজন। বিচারের দাবি মানে যদি কেউ অবিচারের দাবি মনে করে থাকেন, আমার প্রতি খুব অন্যায় করা হবে। বিচার মানে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ন্যায়বিচার। আমি জামায়াত-শিবিরের আদর্শিক বিরোধী, কিন্তু তাদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার সমর্থক নই। অপরাধীর অপরাধের বিচার হবে দেশের আইন অনুসারে, তার যদি সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাপ্য হয় তবে সে তাই পাবে। কিন্তু বিচার না করে বিচারবহির্ভূতভাবে তাকে হত্যা করা হলে এটা তার প্রতি যেমন অবিচার, বিচার প্রত্যাশীদের প্রতিও অবিচার।” “সকল হত্যা-গুম-খুন-ধর্ষণের বিচার চাই। এমনকি যদি বিচারবহির্ভূতভাবেও কাউকে হত্যা করা হয় তার বিচার চাই।”
এদিকে দেশে চলমান অপহরণ, গুম, চোরাগোপ্তা খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষনেতাদের ফাঁসি কার্যকরসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কূটনৈতিক চাপে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে ক্ষমতাসীনরা। এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্রেসহ বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো বারবারই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। সর্বশেষ জামায়াতের শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের পর পাকিস্তানের পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ তুরস্কের কঠোর প্রতিক্রিয়াও সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সরকারের বিরাজনীতিকরণ নীতি দেশে ও বহির্বিশ্বে কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। ফলে তারা এখন রীতিমত বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখী।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়েও দেশীয় আন্তর্জাতিক মহলে জোরালো আপত্তি রয়েছে। গত ১৮ মে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র তার আগের অবস্থানই বহাল রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র এখনও বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। এ বিষয়টিতে আমাদের আগের অবস্থান এখনও রয়ে গেছে, এটার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অত্যন্ত সুস্পষ্ট।
গত ২০১৪ সালে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন ছিল একতরফা । কথিত এ নির্বাচনের পরই বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাগাদা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। আমরা এখনও একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চাই। পৃথিবীর অন্যান্য জায়গার মতো আমরা বাংলাদেশেও মানবাধিকারের প্রতিষ্ঠা ও সংবাদ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেখতে চাই। সত্যিকার অর্থে আমাদের আগের অবস্থান এখনও রয়ে গেছে, এটার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডাসহ পশ্চিমা কূটনৈতিক মহলে সব দলের অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচনের কথা ওঠায় সরকারের শীর্ষ পর্যায় বেশ চাপে আছে। পরিস্থিতি উত্তরণে দেশে-বিদেশে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সহায়তাও নেয়া হচ্ছে বলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু এতে সরকার খুব একটি সুবিধা করতে পারছে বলে মনে হয় না। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নীতি-নির্ধারণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউর মতো দেশগুলো কোনো একটি দলকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথা ভাবছে না। তাদের কাছে মূল বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক শত্রুতার অসুস্থ সংস্কৃতি। ফলে দশকের পর দশক ধরে এই দুটো দলের মধ্যে পারস্পরিক অসহযোগিতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্যও চাপ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলো।
ফলে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া না হলে এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় পৌঁছতে ব্যর্থ হলে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতারও মুখোমুখী হতে পারে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, গত কয়েক বছর যাবৎ বাংলাদেশী নাগরিকদের অনেক দেশ ভিসা প্রদান বন্ধের পাশাপাশি ঢাকা থেকে তাদের দূতাবাসের কার্যক্রমও আংশিক বা পুরোপুরি স্থানান্তর করছে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ডিগ্রেডেড হচ্ছে বাংলাদেশ। মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশই ঢাকা থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য টুরিস্ট ভিসা ইস্যু করে না।
এমনকি নতুন করে শ্রমিক ভিসাও বন্ধ করে রেখেছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশ। আরব আমিরাত ও বাহরাইন বাংলাদেশীদের জন্য ভ্রমণ ভিসা ইস্যু করতো। এখন তারাও ঢাকা থেকে বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে। গত মার্চ মাস থেকে দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ বাংলাদেশে দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে। কানাডাও কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসা আবেদন নিষ্পত্তির বিষয়টি সিঙ্গাপুরে স্থানান্তর করেছে। ব্রিটেনও তাদের ভিসা বিষয়ক কার্যক্রম দিল্লিতে স্থানান্তর করেছে। ইউরোপের বেশ কিছু দেশ বাংলাদেশ থেকে বিগত সময়ে তাদের দূতাবাস গুটিয়ে নিয়েছে। মালয়েশিয়ার ভিসা পেতে যেখানে আগে ২-৩ দিন সময় লাগত, এখন সেখানে দেড়-দুই সপ্তাহ লেগে যাচ্ছে।
ভিসাব্যবস্থা সহজীকরণের কথা বারবার বলা হলেও বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভিসা পেতো এখন ক্ষেত্রবিশেষে এক মাসের মতো সময় এবং কয়েক হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। এর সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে দেশে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকরে মুসলিম প্রধান দেশ তুরস্কের বিরূপ প্রতিক্রিয়া। নিজামীর ফাঁসির প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেশটি এদেশ থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে ইতোমধ্যেই প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এখন দেশটির সঙ্গে সরকারী বা বেসরকারী যেকোনো যোগাযোগ দেখভাল করছেন দিল্লিতে নিযুক্ত দেশটির দূতাবাস। এতে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত। সরকারীভাবে না হলেও দেশটিতে বাংলাদেশের প্রায় ৫ লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করছে বলে সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া তুরস্ক হচ্ছে বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম প্রধান শক্তিশালী মুসলিম দেশ। ফলে জামায়াত ইস্যুতে সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ সরব হলেও বাস্তবতার কারণেই তুরস্কের বিষয়ে নিরব থাকার নীতি গ্রহণ করেছে।
এছাড়া জাতিসংঘসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশগুলোও এসব খুনের বিষয়ে সরকারকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। ইতালিয়ান নাগরিক তাভেল্লা খুনের পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ডাচ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা এ ঘটনার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দূতাবাসগুলো তাদের নাগরিকদের ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে চলাচলে সর্তক থাকতে বলে। শুধু তাই নয়, অপ্রয়োজনে বাইরে যেতে নিরুৎসাহিত করে যার যার নাগরিকদের। সূত্র জানায়, এখনও দূতাবাসগুলোর এ নির্দেশনা বলবৎ আছে।
এদিকে ২০শে মে ব্রিফিং করেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিকের ২০মের ব্রিফিং-এ আবারও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ওঠে এসেছে। তার কাছে বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন কোন রকম আলোচনার উদ্যোগ নেবেন কিনা জানতে চাওয়া হয়। জবাবে স্টিফেন ডুজারকি বলেন, আপনি যা বলছেন আমি তা শুনেছি। বাংলাদেশ ইস্যুতে আমরা এরই মধ্যে যা বলেছি তার বেশি যোগ করার মতো তথ্য আমার কাছে নেই। মূলত তার কথার মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে জাতিসংঘের আগের মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটেছে। জাতিসংঘ বরাবরই সকল দলের অংশ গ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নতুন নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে এসেছে। সম্প্রতি জামায়াত আমীর মাওলানা নিজামীর ফাঁসি কার্যকরেও খোদ মহাসচীব বান কি মুন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যা সরকারকে অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের এক নেতা জাতিসংঘকে বিএনপি-জামায়াতের দালাল বলে আখ্যা দিয়েছে।
মূলত বাস্তবতাকে কিছু দিনের জন্য ধামাচাপা দেয়া গেলেও বেশীদিন উপেক্ষা করা যায় না। একদেশদর্শী পররাষ্ট্রনীতি সরকারকে ধরাকে সরা জ্ঞান করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। কিন্তু তারা এখন রীতিমত বাস্তবতার মুখোমুখী। তারা ভেবেছিল কোনভাবে জামায়াতকে ধ্বংস করতে পারলেই আগামী দিনে তাদের ক্ষমতার মসনদটা নিষ্কন্টক হবে। কিন্তু তা হয়েছে বিপরীত। জামায়াতকে ধবংস করতে যেয়েই তারা গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধামহল। এমনকি মাওলানা নিজামীর ফাঁসি কার্যকর নিয়ে আন্তর্জাতিকমহলে বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে সরকার এখন রীতিমত কোনঠাসা। আর এই বিব্রতকর পরিস্থিতিকে সরকার এখন সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হিসাবে চিত্রিত করছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সরকারের অহংবোধী ও মূল্যবোধহীন রাজনীতির কারণে তাদের বিচরণ ক্ষেত্র ক্রমেই সংকোচিত হচ্ছে। যা গণেশ উল্টে যাওয়ার পূর্বাভাষ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক তথ্যাভিজ্ঞমহল। আর এর শেষটা দেখার জন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে বৈকি।
বিষয়: বিবিধ
১০১১১ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কোথাকার কোন রিসেপের রিসেপি কোন কাজে আসবে না
মন্তব্য করতে লগইন করুন