ভক্তের ভক্তি ও শিক্ষকের আত্মসম্মান
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ২২ মে, ২০১৬, ১১:০২:৪০ রাত
নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু শ্যামল কান্তি ভক্ত কর্তৃক ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষ করে ‘ তোর আল্লাহ নাপাক, আর তুইও নাপাক’ মন্তব্য করার অভিযোগে স্থানীয় জনতা তাকে গণপিটুনী দিয়েছে। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান অভিযুক্ত শিক্ষককে কান ধরে ওঠ-সব করিয়ে বিষয়টির পরিসমাপ্তি টানার চেষ্টা করলে পরবর্তীতে আরও জটিল রূপ নিয়েছে। সাংসদ সেলিম ওসমান কর্তৃক শিক্ষককে অপদস্থ ও নাজেহাল করার জন্য এবং ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দ্বিমুখী প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে দেখা গেছে। যা একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াই বলতে হবে।
আমি আমার লেখায় যেমন শিক্ষক কর্তৃক ধর্মকে কটাক্ষ করার নিন্দা করেছি, ঠিক তেমনিভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ারও প্রতিবাদ জানিয়েছি যুগপৎভাবে। একশ্রেণির মানুষ শিক্ষককে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদ হিসাবে নিজের কান ধরে এক অভিনব প্রতিবাদ করেছেন। পক্ষান্তরে প্রতিপক্ষরা ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাবু শ্যামল কান্তি ভক্তের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সভাসমাবেশ অব্যাহত রেখেছে। অবশ্য সরকার পক্ষও অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষ নিয়েও বক্তৃতা-বিবৃতি অব্যাহত রেখেছে।
কোন ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হবে এটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক সমাজে তা স্বীকৃত। যাহোক শিক্ষক লাঞ্চনা ও ধর্ম অবমাননার বিষয়টি যখন একটা যৌক্তিক পরিণতির দিকে যাচ্ছিল, তখন মহল বিশেষের দায়িত্বহীন বক্তব্যের কারণে বিষয়টি নতুন মাত্রা পেয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। মূলত শিক্ষক সমাজ সকল শ্রেণির মানুষের কাছের সম্মানের পাত্র। তাই শিক্ষকদের কোন কথা বলার আগে অগ্রপশ্চাৎ ভেবেই করা উচিত। এমনকি তাদের কাছ থেকে এমন কোন কাজ প্রকাশ পাওয়া ঠিক হবে না, যা তাদের পদ মর্যাদা ও আত্মসম্মানের সাথে সংঘর্ষিক।
আমরা কবি কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতা পড়লে দিল্লির এক মৌলভী শিক্ষকের আত্মসম্মান ও প্রবল ব্যক্তিত্ববোধের পরিচয় পাই। বাদশাহ আলমগীর কর্তৃক কঠোর শাস্তির আশঙ্কা স্বত্ত্বেও নিজের ব্যক্তিত্ব ও আত্মসস্মান রক্ষায় সচেষ্ট ছিলেন। কিন্তু বাদশাহ আলমগীর শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু বাবু শ্যামল কান্তি ভক্ত বোধহয় নিজের আত্মসম্মান ও ব্যক্তিত্বটা ধরে রাখতে পারলেন না বরং শিক্ষক সমাজকে অপমান করে একজন মন্ত্রীর পায়ে লুটিয়ে পরলেন। যা শুধু তাকেই নয় বরং গোটা শিক্ষক সমাজকেই অপমানিত করেছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে. লাঞ্চিত শিক্ষক বাবু শ্যামল কান্তি ভক্তকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। মাননীয় মন্ত্রীকে দেখেই তার পায়ে লুটিয়ে প্রণাম করেন ভক্ত। এ সময় কিছুটা বিব্রত হতে দেখা যায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে। আর এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, মাননীয় মন্ত্রী কল্পনায় করতেই পারেন নি যে, একজন শিক্ষক এমন আচরণ করবেন।
মোহাম্মদ নাসিম শ্যামল কান্তি ভক্তকে তুলে পাশে বসান। এ সময় মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন শ্যামল কান্তি ভক্ত। মুসলমানদের পবিত্র ধর্ম ইসলাম নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়ায় যাকে কানে ধরে উঠ-বস করানোর অভিযোগ ওঠে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে।
মন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় যে ধরনের প্রতিবাদ হয়েছে, তাদের (যারা ঘটিয়েছে) প্রতিবাদের ভাষা বোঝা উচিত। আমি মনে করি তারা নৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে। ওই সংসদ সদস্যের যদি লজ্জা থাকে তাহলে তিনি অধিবেশনে যোগ দেবেন না।’
মাননীয় মন্ত্রীর ভাষায় লাঞ্চনাকারীরা নৈতিকভাবে পরাজিত হলেও মন্ত্রীর পায়ে লুটিয়ে পড়ার মাধ্যমে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত কী নৈতিকভাবে বিজয়ী হয়েছেন, না পুরো শিক্ষক সমাজকেই লাঞ্চিত ও অপদস্থ করেছেন ? মাননীয় মন্ত্রীর প্রতি ভক্তের ভক্তি প্রদর্শন ভিন্ন আঙ্গীকেই হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আবেগের আতিশয্যে মন্ত্রীর পায়ে হুমড়ী খেয়ে পড়া মোটেই সম্মানজনক হয়নি। এসব আত্মসম্মানহীন শিক্ষক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কতটা আত্মসচেতন করে তুলতে পারবেন- সে প্রশ্নই এখন সবার মুখে মুখে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শিক্ষকেরা নিজেরা নিজেদের মযাদা না রাখতে পারলে অন্য কেউ উনাদের মর্যাদা দেবে কেন ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন