শুধু ডাস্টবিন চোর নয়, বরং...

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ২১ মে, ২০১৬, ১০:০৫:০৬ রাত



কিছু দিন আগে রাজধানীর মুগদায় নবনির্মিত আধুনিক হাসপাতালে গিয়েছিলাম। হাসপাতালের সে অবকাঠামো তাতে আধুনিক নয় বরং সর্বাধুনিক বলায় অধিক যুক্তিযুক্ত। রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেল, হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বেশ সন্তোষজনক। সেবাগ্রহণকারীরা যখন এমন আত্মস্বীকৃতি দিচ্ছেন, তখন এ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা বা মন্তব্য করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু চমকে ওঠলাম টয়লেটে গিয়ে। স্মরণ হলো একটি অতিপরিচিত মেঠো কথার, ‘ওপরে ফিটফাট আর ভেতরে সদরঘাট’। নিজের চোখে না দেখলে বিষয়টি কাউকে বুঝিয়ে বলা শুধুই কষ্টসাধ্যই নয় বরং অসম্ভবও। কারণ, মাত্র কিছুদিন আগে নির্মিত কোন টয়লেটই ব্যবহারযোগ্য নেই। এজন্য যেমন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা দায়ি, ঠিক তেমনিভাবে আমরা যারা সেবা নিতে যাই তারাও এ দায় এড়াতে পারি না। মানুষের প্রাকৃতিক চাহিদা পূরুনের এই জায়গাটা মনে হয় খুবই অপ্রয়োজনীয়। যা ভাবতেও অবাক লাগে।

মহল বিশেষে জনশ্রুতি আছে যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নাকি বলেছিলেন, মানুষ পায় শোনার খনি, আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। এ কথার প্রমাণ মেলে এক ক্ষুদে কৌতুক পরিবেশনকারীর কৌতুক থেকে। তার পরিবেশিত কৌতুকের উপজীব্য হলো, ‘ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা একটা চোর ধরার যন্ত্র অবিস্কার করেছেন। আর এই যন্ত্রের সক্ষমতা হলো, তা সেদেশে মিনিটে ৫০জন চোর ধরে। এই অভিনব যন্ত্র আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত আমদানী করে দিল্লির রাজপথে স্থাপন করলে যন্ত্রটি প্রতি মিনিটে ১০০জন চোর ধরতে সক্ষম হয়। সঙ্গত কারণেই যন্ত্রটি বাংলাদেশ আমদানী করে গুলিস্তানে স্থাপনের মহুর্তের মধ্যেই যন্ত্রটিই চোরের কবলে পরে’। মূলত এই চটুল কৌতুক পরিবেশনের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক মন্তব্যের যথার্থতা প্রমাণিত হয় নিঃসন্দেহে।

আমাদের অনেক ভাল অর্জন থাকলেও কিছু খারাপ দিক আছে যা আমাদের অর্জনগুলোকে অনেকটায় ম্লান করে দেয়। কিন্তু এসব প্রতিরোধে আমরা কোন কার্যকর ভূমিকা পালন করিনা। ফলে এসব নেতিবাচক দিকগুলোর দিনের পর দিন বৃদ্ধি পায়। এক সময় তা রীতিমত অপ্রতিরোধ্যই হয়ে ওঠে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ‘পরিচ্ছন্ন বছর’ উত্তর সিটি করপোরেশনের ‘সবুজ নগরী’র হিসাবে গড়ে তোলার অংশ হিসেবে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা থেকে শুরু করে অলিগলিতে বসানো হয়েছে মিনি ডাস্টবিন। নগরবাসী ডাস্টবিনগুলোতে বর্জ্য ফেললেও দুই মেয়রের এই মহতী উদ্যোগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ছিঁচকে চোর। রাতের আঁধারে বা দিবালোকে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে মিনি ডাস্টবিনগুলো। বেশ কিছু এলাকায় দিনে ডাস্টবিন দেখা গেলেও রাতে তা উধাও। গত কয়েকদিন দুই সিটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এই ডাস্টবিন চোর নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দুই মেয়র। তবে চুরি ঠেকাতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। আর জনগণের সচেতনতা বাড়াতে পরিবেশবান্ধব পুলিশ তৈরির তাগিদ দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

দুই সিটি করপোরেশন সুত্রে জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৫ হাজার ৭০০ মিনি ডাস্টবিন স্থাপন করা হবে। ইতিমধ্যে প্রায় ৫ হাজার ডাস্টবিন লাগানো হয়েছে। উত্তর সিটিতে ৫ হাজার ডাস্টবিন বসানোর কাজ চলছে। ইতিমধ্যে এক হাজার লাগানো হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলতি মাসেই শেষ হবে। ডাস্টবিনে ময়লা ফেলার অনুরোধ জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বিনের মধ্যে লিখেছেন, ‘আবর্জনাগুলো বিনে ফেললেই পরিষ্কার থাকবে আপনার শহর।’ আর উত্তরের বিনগুলোতে মেয়র আনিসুল হক লিখেছেন, ‘এখানে আবর্জনা ফেলুন। আমাদের প্রিয় শহর পরিচ্ছন্ন রাখি।’ পথচারীদের অনেকেই অভ্যাস বদলে রাস্তার পাশের মিনি ডাস্টবিনে ময়লা ফেলতে শুরু করেছেন। কোনো ধরনের প্রচারণা ছাড়াই সচেতন নাগরিকরা এখন খালি বোতল, চিপস কিংবা চকোলেটের মোড়ক ডাস্টবিনে ফেলছেন।

জানা যায়, যেসব স্থানে মানুষের ভিড় বেশি সেসব স্থানে ১৫০ মিটার পরপর ডাস্টবিন বসানো হচ্ছে। আর যেসব স্থানে জনসমাগম তুলনামূলক কম, সেসব স্থানে আপাতত ডাস্টবিন বসানো হচ্ছে ৩০০ মিটার পরপর। দুই সিটি করপোরেশনের মিরপুর, ফার্মগেট, মহাখালী, গুলশান, বনানী, টিএসসি, পল্টন, রামপুরা, কাকলী ও যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় বসানো মিনি ডাস্টবিন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, নগরবাসীর অনেকেই চলতি পথে হাতের ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন এসব ডাস্টবিনে। কিন্তু বেশ কিছু এলাকায় ডাস্টবিন চুরি হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মাদকাসক্ত, টোকাই ও ছিঁচকে চোরেরা রাতের আঁধারে বা দিনে বিন খুলে নিয়ে ভাঙ্গাড়ির দোকানে বিক্রি করছে।

রাজপথে মিনি ডাষ্টবিন বসানো সত্যিই মেয়রদ্বয়ের মহতি উদ্যোগ। কিন্তু যারা এই মহতি উদ্যোগকে ব্যর্থ করছে তাদের অপতৎপরতা ঠেকানোও সিটি কর্পোরেশনসহ আমাদের সকলের। তাই এজন্য ছিঁকেচোর বা মাদক সেবীদের উপর দায় চাপিয়ে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করা যাবে না। এসব ছিঁচকে চোর বা মাদকসেবীরাই শুধু এই কাজ করছে এমন মুখস্ত কথা বলেও সমস্যার সমাধান হবে না বরং আমাদেরকে বাস্তবমূখী হওয়ায় বেশী যুক্তিযুক্ত। খুঁজে বের করতে হবে এদের সহযোগীদের। যারা এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক স্বার্থে কেনে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। কোন অবস্থাতেই যাতে মেয়রদ্বয়ের মহতি উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে না যায় সেদিকে সকলকেই সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে। শুধু রাজধানীর ডাষ্টবিন চোরদের ধরলেই চলবে না বরং রাষ্ট্রের সকল পর্যায় থেকেই চোরদের উৎখাত করতে হবে। নয়তো আমাদের সকল অর্জনই ব্যর্থ হতে বাধ্য।

বিষয়: বিবিধ

১৩৫০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

369756
২১ মে ২০১৬ রাত ১০:৫৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : শুধু ছোট ডাস্টবিন নয় বড় ডাস্টবিন ও চুরি হচ্ছে।
369789
২২ মে ২০১৬ সকাল ০৭:২৬
শেখের পোলা লিখেছেন : বড় চোররা বড় জিনিষ আর ছোট চোররা ছোট জনিষ চুরি করে। ইনসাফের কথা। বড়দের ছেড়ে দেবেন আর ছোটদের ধরবেন, তা হয়না।
369792
২২ মে ২০১৬ সকাল ০৮:২৪
সৈয়দ মাসুদ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
369814
২২ মে ২০১৬ দুপুর ০৩:৩২
হতভাগা লিখেছেন :
কিন্তু চমকে ওঠলাম টয়লেটে গিয়ে।


০ এটাই সরকারী হাসপাতালের প্রকৃত চিত্র ।

রোগীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে আসে এবং এদের knowledge of hygiene একেবারেই নেই। এদের বাসাবাড়িতেও দেখবেন যে টয়লেট এরকম নোংরা করে রেখেছে ।

Every body's business is nobody's business

সরকারী হাসপাতালের ওয়ার্ডের পাশ দিয়ে গেলে মনে হয় যে ডাস্টবিনের পাশ দিয়ে যাচ্ছি ।

রাস্তার মধ্যে ডাস্টবিন রাখলে সেটার সুবাস সকাল বেলায় ভালই টের পায় স্কুল-কলেজ ও অফিস গামী মানুষেরা ।

এসব কাজ মধ্যরাতেই কমপ্লিট করে দূরে কোথাও ডাম্পিং করার কথা ।
369820
২২ মে ২০১৬ দুপুর ০৩:৫১
আবু জান্নাত লিখেছেন : রাস্তার পাশে সবার জন্য উন্মুক্ত টিউবওয়েল ও চুরি হচ্ছে। কি আর করা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File