প্রশ্নপত্র ফাঁসের মহোৎসব

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১৮ মে, ২০১৬, ০৯:১১:১১ রাত



রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রেই শনির আছর পড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। অনিয়মটাই বোধহয় নিয়মে পরিণত হয়েছে। আগের দিনে ধর্ম নিয়ে দায়িত্বহীন ব্যক্তিরা দায়িত্বহীন মন্তব্য করতো। এখন দেখি জাতির জাগ্রত বিবেক হিসাবে স্বীকৃত শিক্ষক শিক্ষকরাও ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করতে কুন্ঠাবোধ করছেন না। এক শ্রেণির শিক্ষকদের ধর্ম নিয়ে গর্হিত মন্তব্য রীতিমত ফ্যাসনে পরিণত হয়েছে। ফলে অনাকাঙ্খিতভাবে নানাবিধ সামাজিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ঘটছে শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনা। মূলত দায়িত্বহীনতার জবাবটা দায়িত্বহীন ভাবেই দেয়া হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যেসব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে তা মোটেই সুখকর নয়।

আমাদের অবক্ষয়ের গড্ডালিকা প্রবাহের ধারাবাহিকতায় দেশের পাবলিক পরীক্ষায় শকুনীর শ্যান দৃষ্টি পড়েছে। শিক্ষার মূলত উদ্দেশ্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভার স্ফূরণ ঘটানো হলেও আমরা সে লক্ষ্য থেকে বেশ দূরে বলেই মনে হচ্ছে। দেশের পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের যে মচ্ছপ শুরু হয়েছে তাতে একথাকে অতিশয়োক্তি বলে মনে করার কোন কারণ নেই। দেদারছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটলেও তা কোন ভাবেই প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষাবোর্ড ও প্রশাসনসহ কেউই এই জাতিস্বত্ত্বাবিরোধী অপকর্ম প্রতিরোধ করতে সক্ষম হচ্ছে না। ফলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধবংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে এবং জাতিকে মেধা ও বুদ্ধিহীনতার মূখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় একের পর এক প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে হুবহু প্রশ্ন চলে যাচ্ছে ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটস এ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ পর্যন্ত তথ্য ও প্রযুক্তি, জীববিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞানের প্রশ্নফাঁস হয়েছে। এভাবে একের পর এক প্রশ্নফাঁস হলেও ঠেকাতে পারছে না সরকার। শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও বিশিষ্টজনেরা বলছেন, সরকার এ বিষয়ে পুরোপুরি ব্যর্থ। তারা বলছেন, পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষামন্ত্রী ‘প্রশ্নফাঁস একদমই ‘অসম্ভব’’ বলে যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হলো।

গত ১৭ মে আবারও সেই আলোচিত আহমেদ নিলয়ের ফেসবুক পেজে পাওয়া গেলো হিসাববিজ্ঞান ২য় পত্রের পরীক্ষার প্রশ্ন, পরীক্ষা শুরুর ঠিক এক ঘণ্টা আগে। এর আগে সবগুলো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর এক থেকে দুই ঘণ্টা আগে ফাঁস করলেও, গত ১৫ মে রবিবার পরীক্ষা শুরুর প্রায় সাত ঘণ্টা আগেই ফেসবুকে ফাঁস করেন আলোচিত সেই ‘আহমেদ নিলয়’। গত ১৫ মে বিকেল ২ টায় হিসাব বিজ্ঞান ১ম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অথচ নিলয় তার ফেসবুকে সকাল ৭টা ৯ মিনিটেই হিসাব বিজ্ঞান ১ম পত্রের প্রশ্ন ফাঁস করেন।

পরীক্ষা শুরুর আগ মুহূর্তে শিক্ষা সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সকলের কাছেই পৌঁছায় প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ। পরীক্ষা শুরু হলে দেখা যায়, ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে তার হুবহু মিল। এভাবে একের পর এক প্রশ্ন ফাঁস করছে একটি গোষ্ঠী অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষা বোর্ড এমনকি বিটিআরসিও কোনও কূলকিনারা পাচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ছেড়ে দেওয়ার ঘটনাকে কোনও কেন্দ্রের ইচ্ছাকৃত অপকর্ম হিসেবে অভিহিত করেছেন শিক্ষাবিদরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছেই এখন পরিষ্কার চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় একের পর এক প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে। তবে অপরাধী ধরার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি ব্যর্থ। শিক্ষা বোর্ড বলছে, ‘আমরা বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।’ আর মন্ত্রণালয় বলছে, ‘অপরাধীদের ধরার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিটিআরসির সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। তবে ফল পাওয়া যাচ্ছে না।’

এদিকে ‘‘প্রশ্নপত্র ফাঁস: মানিনা, মানবো না’ নামে একটি ফেসবুক পেজে দাবি করা হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কন্ট্রোল রুমে প্রমাণসহ কয়েকবার মেইল পাঠিয়েছেন। অথচ তারা কোনও জবাব পাননি। সর্বশেষ গত ৪ মে কন্ট্রোল রুম থেকে একটি মেইলের জবাব আসে তাদের মেইলে। ফিরতি মেইলে লেখা হয়, ‘গুজবে কান দেবেন না। বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন।’ একের পর এক যেখানে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কিভাবে এমন মন্তব্য করা হয়? এমনই সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন পেইজটির অ্যাডমিন।

বোর্ডের পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে দ্রুত বিষয়টি পরীক্ষাসংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাধ্যমে বিটিআরসিকে অবহিত করে এ্যাকশন নিতে। বোর্ড কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন, পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নের বান্ডিল খোলার পরই একটি চক্র মোবাইলে সেই প্রশ্নের ছবি তুলে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে টাকার লেনদেনেরও প্রমাণ মিলছে না, বরং ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে একটি চক্র সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে চায় বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।

আহমেদ নিলয় প্রথম দিকে তার ফেসবুকে বুয়েট ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন। এখন তিনি তার নাম ছাড়া বাকি সব পরিচয় পরিবর্তন করেছেন। তার ঠিকানায় এখন লেখা হয়েছে, তিনি জার্মানির হামবার্গে থাকেন। ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়তেন। তিনি মিরপুরে স্থানীয় বাসিন্দা।

যাহোক পাকলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা মোটেই কাঙ্খিত নয়। সরকার পক্ষ অবশ্য প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা গুজব ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা মোটেই গুজব নয় বরং বিষয়টি পুরোটাই সত্য। কিন্তু এরপর শিক্ষামন্ত্রনালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বিষয়টি নিয়ে বেশ নির্লিপ্ত থাকতেই দেখা যাচ্ছে। মনে হয় বিষয়টি নিয়ে কারো কোন দায়বদ্ধতা নেই। কিন্তু দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদেরকে এ বৃত্ত থেকে অবশ্যই বেড়িয়ে আসতে হবে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বাঁচানো না গেলে জাতি ও জাতিস্বত্ত্বা বাঁচানো সম্ভব হবে না। আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাও অর্থহীন হয়ে পড়বে।

বিষয়: বিবিধ

১১০৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

369529
১৮ মে ২০১৬ রাত ১১:৫৫
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : দেশে যে কি শুরু হলো।
369544
১৯ মে ২০১৬ রাত ০২:৫৯
শেখের পোলা লিখেছেন : শিক্ষা চাইনা চাই জিপিএ ফাইভ। প্রশ্নপত্র হয়ত ভূতে ফাঁস করছে, তই ধরা যাচ্ছে না।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File