সকল পক্ষকেই দায়িত্বশীল হওয়া উচিত
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১৭ মে, ২০১৬, ০৯:২১:২৩ রাত
শুধু শিক্ষক লাঞ্চনা নয় বরং কোন ক্ষেত্রেই আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার সুযোগ নেই। আমরা বোধহয় অপরাধকে অপরাধ বলতে অনেকটাই ভুলতে বসেছি। ধর্ম নিয়ে একজন শিক্ষক কটুক্তি করেছেন; এটি নিঃসন্দেহে গর্হিত কাজ। কিন্তু এজন্য আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে তার শাস্তি বিধান করতে হবে এমনটি কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারণ, কোন অপরাধীর অপরাধ প্রমাণ ও শাস্তি বিধানের এখতিয়ার সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের। কিন্তু আমাদের দেশের যে অবস্থা শুরু হয়েছে, তাতে আইন হাতে তুলে নেয়ার বিষয়টি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রধান কারণই হচ্ছে আইনের শাসনের অনুপস্থিতি। যা আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনকে একেবারে দুর্বীসহ করে তুলেছে।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের এক স্কুল শিক্ষকের ধর্ম নিয়ে কটুক্তি এবং তার প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় সরকার দলীয় এমপি কর্তৃক তাকে কান ধরে ওঠ-বস করানোর ঘটনাটা মিডিয়ায় বেশ ঝড় তুলেছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষক যেমন ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করে গর্হিত কাজ করেছেন, ঠিক তেমনিভাবে যে পদ্ধতিতে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আসলে শিক্ষক কর্তৃক ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করার ঘটনা এই প্রথম নয়। এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটনাও কম ঘটছে না। কিন্তু ধর্মের মত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে যারা এমন ধৃষ্ঠতা দেখাচ্ছেন, তাদের কোন ভাবেই আইনের আওতায় আনা বা শাস্তির বিধান করা হচ্ছে না। ফলে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের মত মুসলিম সংখ্যারিষ্ঠ দেশে ইসলাম নিয়ে কটুক্তি এক ধরনের ধৃষ্ঠতা বলা ছাড়া কোন উপায় আছে ? কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও সুশাসনের অভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে হরহামেশায়। কোন ভাবেই তা রোধ করা যাচ্ছে না। ফলে তা এখন অনেকটাই অপ্রতিরোধ্য।
কয়েক দিন আগে নারায়ণগঞ্জে এক স্কুল শিক্ষককে ক্ষমতাসীন এমপি কর্তৃক ‘জনতার রোষের’ ধুয়া তুলে কান ধরে উঠ-বস করানো হয়েছে বলে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে। একজন শিক্ষককে এভাবে নাজেহাল করা একেবারেই অনভিপ্রেত। ফলে শ্রেণি বিশেষ শিক্ষক শ্যামল কান্তির অপমানে ‘নিজেরা অমানিত’ বোধ করছেন এবং নিজেদের কান ধরা ছবি ফেসবুকে প্রচার করছেন। স্ট্যাটাসের পর স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেদের অনুতাপ ও দুঃখবোধটা প্রকাশ করছেন। আসলে এমন দুঃখজনক ঘটনায় পুরো জাতিই দুঃখ ভারাক্রান্ত এতে কোন সন্দেহ নেই। ফলে শিক্ষকের এমন অপমানে সাধারণ মানুষও প্রতিবাদ করছেন। বাংলাদেশে বর্তমানে যে অবস্থা চলছে তাতে এমন ঘটনার মধ্যে অভিনবত্ব নেই বরং তা নিত্য-দিনেরই হয়ে গেছে।
যেসব বুদ্ধিজীবি বা মিডিয়া এটা নিয়ে বেশ সরব, তাদেরকে অতীতে এ ধরনের ঘটনায় এভাবে সোচ্চার হতে দেখা যায়নি। আর আমাদের নৈতিক দৈন্যতাটা সেখানেই। এর আগে বুয়েটের অধ্যাপক ড. জাহাজ্ঞীর আলমকে বিশেষ একটি ছাত্র সংগঠনের নেতার নেতৃত্বে ১৫-২০ জন নেতাকর্মী চড় থাপ্পড় দিয়েছিল, প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি মারধর করেছিল। আজকে যারা শ্যামল কান্তির ঘটনায় যারা দুঃখ ভারাক্রান্ত তাদেরকে তখন কিন্তু এ ঘটনায় উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তাদেরকে সামাজিক গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবাদ মুখর হতে দেখা যায়নি বরং নিরবে সমর্থন দিয়ে গেছে।
এখানেই শেষ নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষক ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রখ্যাত ছাত্রনেতা ড মাহবুব উল্লাহকে ঢাকার রাস্তায় মারধোর করে টেনে হিঁচড়ে জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলো দুর্বৃত্তরা । একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এভাবে অপদস্থ করা হলেও আজকের প্রতিবাদীরা বেশে মৃদু হেসেছেন। তাদের এ ঘটনার নিন্দা জানাতে দেখা যায়নি। ফলে এ ধরনের শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। মূলত সকল কিছুইতেই আমাদের নেতিবাচক মতলবী চিন্তা-চেতনার কারণেই রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রেই অনিয়মটাই নিয়ম হয়ে গেছে। ফলে এ থেকে উত্তরণের আপাতত কোন রাস্তা দেখা যাচ্ছে না।
আসলে শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনা যেমন কাঙ্খিত নয়, ঠিক তেমনিভাবে সম্মানিত শিক্ষকদের কাছেও দেশের মানুষ দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে। কারো আবেগ-অনুভূতি ও ধর্মবিশ্বাস নিয়ে টানাটানি করা শিক্ষকের কাজ নয়। তাদের প্রধান দায়িত্বই হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থী সুপ্ত প্রতিভার স্ফূরণ ঘটনো। জাতি সকল পক্ষের কাছেই দায়িত্বশীল আচরণ এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আশা করে।
বিষয়: বিবিধ
১১৩৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন