রিজার্ভ চুরি ও কালকেতু উপাখ্যান
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১৫ মে, ২০১৬, ১২:৫৩:৩৫ দুপুর
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বেশ কয়েকজন মহাকবি সন্ধান পাওয়া যায়, বিশ্বসাহিত্যে বিশ্বকবিও নেহাৎ কম নয়। কিন্তু শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, বিশ্বসাহিত্য ভান্ডারে কবিকঙ্কন মাত্র একজনই। তিনি হচ্ছেন বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগীয় শক্তিমান কাব্য প্রতিভা কবিকঙ্কন শ্রী মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। তার অতি উল্লেখ্যযোগ্য কাব্য হচ্ছে ‘কালকেতু উপখ্যাণ’। যা সমঝদার সাহিত্য প্রেমীদের কাছে বেশ উপভোগ্যই বটে।
কালকেতু উপখ্যানের কেন্দ্রীয় চরিত্র হচ্ছে রাক্ষসরাজ কালকেতু ও তার স্ত্রী ফুল্লরা। কালকেতু যেমন ছিল যেমন ইন্দ্রিয়পরায়ন, ঠিক তেমনিভাবে ভোজন বিলাসীও। এক কথায় সর্ববিহারী বা সর্বভূক বলা যায়। তার বহুগামীতা নিয়ে স্ত্রী ফুল্লরার সাথে প্রায়শই বচসা হতো। সময় সময় তা একেবারে রাম-রাবনের যুদ্ধের রূপ নিত বলে কালকেতু উপাখ্যানে পাওয়া যায়। একথার প্রমাণ মেলে ফুল্লরা দেবীর খেদোক্তি ‘পিঁপিড়ার পাখা হয় মরিবার তরে, কাহার সন্নাসী কন্যা আন্যাছ ঘরে’ মাধ্যমে। এ থেকে রাক্ষসরাজের বহুগামীতার বিষয়টি সুষ্পষ্ট।
কেউ যখন কোন কিছুতে অল্পে তুচ্ছ থাকতে পারে না, তখন সবকিছুতেই একটা বাড়তি আশা-আকাঙ্খা ও উচ্চাভিলাষ কাজ করে। কেউ একাবার সীমালঙ্ঘন করলে সে কিছুতেই সীমার মধ্যে থাকতে চায় না। আত্মার পুঁজা করতে করতে একেবারে আত্মপুঁজারী ব্রাহ্মণ হয়ে ওঠে। বিষয়টি কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী অতিসার্থকভাবেই উপস্থাপন করেছেন তার ‘কালকেতু উপাখ্যান’ এ। কবিকঙ্কন রাক্ষসরাজ কালকেতুর ভোজনবিলাসের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে
মোঁচারিয়া গোঁফ দুইটা
বান্ধিলেন ঘাড়ে
এক শ্বাসে সাত হাঁড়ি
আমানি উজারে।
আশি মন মহাবীর
খায় খুদ-জাউ....
কচুর সহিত খায়
করঙ্গ আমড়া।।
কবিকঙ্কনের শক্তিমান উপস্থাপনায় রাক্ষসরাজ কালকেতুর ভোজন বিলাসের বাস্তবচিত্র ফুটে উঠেছে। কালকেতু শুধু ভোজন বিলাসীই নয় বরং রীতিমত ইন্দ্রিয়পরায়নও। তাও কবিকঙ্কনের দৃষ্টি এড়াতে পারেনি। যদিও কাহিনীটা মধ্যযুগের উপাখ্যানের অংশ কিন্তু তার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনে। দেশের সকল ক্ষেত্রেই এই রাক্ষসরাজদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমান সময়ের এসব কালকেতুরা দেশের শেয়ারমার্কেট থেকে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা লোপাট করেছে, হলমার্ক কেলেঙ্কারীর মাধ্যমে সোনালী ব্যাংককে একেবারে দেউলিয়া করে ফেলা হয়েছে। ডেসটিনি, বিসমিল্লাহ ও বেসিক ব্যাংকের তো একই অবস্থা। কিন্তু এতকিছুর পরও আধুনিক যুগের রাক্ষসরাজরা একেবারে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ঘটনার পর অনেক কথা বলা হলেও এসব সর্বভূকদের খুঁটির জোর এতই মজবুত যে, এদের খুঁটি ধরে টান দেওয়ার মত কোন শক্তি আছে বলে মনে হয় না। অনেকে এদেরকে রাষ্ট্রশক্তির চেয়ে শক্তিশালী বলে ভাবতে পুলকেবোধ করেন। কিন্তু আমাদের কেন জানি মনে হয় সর্ষের মধ্যেই ভূত থাকার কারণে ভূত তাড়াতে কোন মন্ত্রই কাজ করছে না। ফলে রাক্ষসরাজরা এখন আগের তুলনায় অধিক বেপরোয়া।
সম্প্রতি এসব রাক্ষসরাজরা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি করেছে। গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০০ মিলিয়ন ডলার লোপাট হয়। এর মধ্যে ফিলিপাইনে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং বাকি অর্থ শ্রীলংকায় পাচার হয়। কিন্তু এ নিয়ে অনেক বাগারম্বর হলেও এসব রাজরাক্ষসদের টিকিটিও কেউ স্পর্শ করতে পারেনি। অপরাধী সনাক্ত, এদের আটক করে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধার ও দায়ি ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তশাস্তির অনেক উপখ্যান শোনা গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সম্প্রতি রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তে নতুন করে আশার আলো দেখা দিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু তাও সময়ের পরিক্রমায় আষাঢ়ে গল্প বলেই প্রমাণিত হচ্ছে। গল্পবাজরা বলছেন, ইন্টারপোলের সহায়তায় চার সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের যে কোনো মুহূর্তে গ্রেফতার করা হতে পারে। এদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে গাফিলতির তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। অপর তিনজন বিদেশী নাগরিক।
এ ছাড়াও দাবি করা হচ্ছে যে, আইটি ফরেনসিক এনালিসিসের মাধ্যমে সিআইডির তদন্তে আরও অগ্রগতি হয়েছে। এতে সন্দেহভাজন তালিকায় থাকা অপরাধীদের পাকড়াও করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিদেশীদের গ্রেফতার অভিযানে সহায়তা করতে ইতিমধ্যে ইন্টারপোলকে জানানো হয়েছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। কিন্তু এসব শুধু কথামালার ফুলঝুড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ কিন্তু ফলাফল একেবারেই অশ্বডিম্ব।
সূত্র দাবি করছে, আইটি ফরেনসিক এনালিসিসের মাধ্যমে কোন কম্পিউটার বা ডিভাইস ব্যবহার করে কী ধরনের প্রযুক্তিগত অপরাধ করা হয়েছে সে ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি কোন কর্মকর্তার কম্পিউটার কী ধরনের কাজে কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে সেসব তথ্যও এখন সিআইডির হাতে। এ ধরনের চারটি কম্পিউটারের তথ্য পর্যালোচনা করে গুরুতর এ অপরাধের সঙ্গে দেশী ও বিদেশী লিংকগুলো খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। এদিকে ‘ডিলিটেড ডাটা’ (মুছে ফেলা তথ্য) উদ্ধারের ক্ষেত্রে বিশ্বমানের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা (ইন্টারপোল) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) যৌথ চেষ্টায় ইতিমধ্যে বহু তথ্য উদ্ধার করা গেছে। এখন থলের বিড়াল বের হওয়ার সময়ও এসেছে বলে মনে করছেন সিআইডির সংশিষ্টরা। তবে তারা নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে চান না। ফলে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তদন্তে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। এমনকি এ প্রযুক্তির মাধ্যমে সুইফট শাখার কে কোন ধরনের বার্তা রিসিভড করেছিলেন, তা উদ্ধার করা গেছে। এ ছাড়া অসংখ্য ই-মেইল, দেশে-বিদেশে তথ্য আদান-প্রদান, পাসওয়ার্ড-সংক্রান্ত ফাইল, ফোল্ডার, ডকুমেন্টসসহ বিভিন্ন তথ্য রয়েছে উদ্ধার তালিকায়।
দাবি করা হচ্ছে যে, আইটি ফরেনসিক এনালিসিসের মাধ্যমে যে কোনো ডিভাইস, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও সার্ভারের সব তথ্যই উদ্ধার সম্ভব। এক কথায় বলতে গেলে, এ পরীক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে কম্পিউটারে ব্যবহৃত সব ধরনের ডিভাইসের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত যে কোনো সময় বের করা যায়। কেউ তা নানাভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা করলেও, দৃশ্যত সম্ভব হলেও বাস্তবে তা কোনোদিন সম্ভব হবে না। কেননা, এ ধরনের তথ্য আন্তর্জাতিক যে গেটওয়ে রয়েছে সেখানে থেকেই যায়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের জব্দ করা ডিভাইসের ইমেজিং বা সংগৃহীত ডাটা পর্যালোচনা করে অনেক গোপন তথ্য বের করা গেছে। এসব ডাটা বিভিন্ন সময় কম্পিউটার ব্যবহারকারী বা অ্যাডমিন মুছে ফেলেছিলেন, যা উদ্ধারে উচ্চমানের সফটওয়্যার ও পদ্ধতি প্রয়োগ করেছে ইন্টারপোল ও সিআইডি। এ ক্ষেত্রে অতি সন্দেহভাজনদের কম্পিউটার ও ডিভাইসের ‘আইটি ফরেনসিক এনালিসিস’ করা হচ্ছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তার দেয়া তথ্যমতে, ডিলিটেড গোপন ডাটা উদ্ধার করতে বিশ্বমানের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে এনকেস, রাইট বেলাকার ও সেলব্রাইট সফটওয়্যার অন্যতম। এসব সফটওয়্যার সিআইডির সাইবার প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে ইন্টারপোলের ছয় সদস্যের যে টিম ঢাকায় এসেছেন তারা ইতিপূর্বে বিভিন্ন দেশে এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করেছেন। এ টিমের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কারণে তারা সিআইডিকে সহায়তা করছে। কিন্তু এ জাতীয় সফটওয়্যার ব্যবহার সম্পর্কে সিআইডির দক্ষ টিম রয়েছে। এ কর্মকর্তারা আরও জানান, সফটওয়্যারগুলো খুব দ্রুত ডিলিটেড ডাটা উদ্ধার করতে সক্ষম। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার জন্য আদালতে যে ধরনের তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা প্রয়োজন, সে ধরনের তথ্য উদ্ধারে এসব সফটওয়্যার অত্যন্ত সহায়ক। বিশেষ করে ডিভাইস থেকে অতীত ইতিহাস (প্রমাণ) বের করার ক্ষেত্রে দ্রুত কাজ করে এসব সফটওয়্যার।
প্রসঙ্গত, সিআইডির জব্দ তালিকার কোন কম্পিউটার, ডিভাইস ও ল্যাপটপ থেকে কী ধরনের মুছে ফেলা তথ্য বের হচ্ছে- তা বিশেষ ফাইলে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব ডিভাইসের মধ্যে কে কোনটি ব্যবহার করতেন তা মিলিয়ে দেখছেন কর্মকর্তারা। আর এর মাধ্যমে সন্দেহভাজনকে কালো তালিকায় আনবেন গোয়েন্দারা।
সিআইডির তদন্ত বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল সার্ভার, সুইফট শাখাসহ সংশ্লিষ্ট শাখার ডিভাইস থেকে নানা ধরনের মুছে ফেলা তথ্য উদ্ধার করা হয়েছে, যা পর্যালোচনা করতেও সময় লাগবে। এ জন্য সিআইডির সাইবারবিষয়ক টিম তা পর্যালোচনা শুরু করেছে।
মূলত রিজার্ভ চুরির পর ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কথামালার ফুলঝুড়ি ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা যায়নি। আসলে বিষয়টি দোষারোপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুটের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিআইডির দাবি করা রয়টার্সের প্রতিবেদনকে মিথ্যা, অযথার্থ, বিভ্রান্তিকর এবং ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে সুইফট। এ বিষয়ে দেয়া এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সংগঠনটি বলছে, সুইফ অন্যান্য গ্রাহকদের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমের নিরাপত্তার দায় নেবে না। সুইফ সিস্টেম নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড দিয়েই নিয়ন্ত্রিত হয়। ব্যাংকের অন্যান্য বিভাগের নিরাপত্তার মতো এই নিরাপত্তাকেও তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা হিসেবে দায়িত্ব নিতে হবে।
সম্প্রতি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সুইফটের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ভিত্তিহীন অভিযোগের বিষয়টি আলোচনা করা হবে। একইসঙ্গে সুইফট সতর্ক করে বলছে, সুইফট এই বৈঠকের পর থেকে এই বিষযে ভবিষ্যতে আর কোনো কথা বলবে না।
এদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় নতুন করে বোমা ফাটিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। রিজার্ভের অর্থ লুটের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছে বলে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করেছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে তারা বলছে, কম্পিউটার হ্যাকারদের লক্ষ্য ছিল এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরি করে নেওয়ার। সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এফবিআই সন্দেহ প্রকাশ করে বলছে, রিজার্ভের অর্থ চুরি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ কাজে জড়িত রয়েছে। বিষয়টিকে তারা ইনসাইড জব উল্লেখ করে বলছে, এ ঘটনার সঙ্গে ব্যাংকের ভিতরের একটি অংশ জড়িত রয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন জালিয়াতির খবর প্রকাশ পেয়েছে। এতে রাক্ষসরাজদের হাত কতখানি লম্বা তা কিছুটা হলেও অনুমান করা যায়। মূলত বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশ ব্যাংকের। এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়, অফিস ফার্নিচার ক্রয়, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ভাতা, অস্থায়ী কর্মচারিদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ইউটিলিটি বিলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায় ১২ হাজার কোটি গরমিল পাওয়া গেছে। একে পুকুর চুরি নয় বরং সাগর চুরি বলায় বেশী যুক্তিযুক্ত। জানা গেছে, বিগত ৫ বছরে এ পরিমাণ অর্থের গরমিল পেয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে যথাযথ তদারকি করছে না বলে মনে করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি।
এর আগে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব থেকে ৮২০ কোটি টাকা লুট করে নেয় একটি চক্র। এরপরেই বেরিয়ে আসে এবারই প্রথম রিজার্ভ রক্ষণাবেক্ষণে লস হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। সমম্প্রতি জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে ১২ হাজার কোটি টাকার অডিট আপত্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
কমিটি সূত্রে বলা হয়েছে, সরকারি আর্থিক বিধি অনুসরণ না করায় অডিট আপত্তিতে গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার হিসাবে গরমিল ধরা পড়েছে। কমিটি যত দ্রুত সম্ভব অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করতে বলেছে। খুব শিগগিরই মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক আর আপত্তির সঙ্গে জড়িত পক্ষগুলোর মধ্যে ত্রি-পক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে আরো বলা হয়, পরের বৈঠকে এ বিষয়ের অগ্রগতি জানাতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, কমিটির বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গত পাঁচ বছরের অনিষ্পন্ন অডিট আপত্তির তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট ১ হাজার ২৯৪টি অডিট আপত্তির বিপরীতে অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ১১ হাজার ৯১৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আরো বলা হয়, এই অডিট আপত্তির অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত হিসাব বিবরণীতে থাকে না।
মনে হচ্ছে, দেশটা আধুনিককালের রাক্ষসরাজদের রীতিমত অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এসব আত্মপুঁজারী রাক্ষসরাজরায় এখন দন্ডমুন্ডের কর্তা সেজে জনগণের ভাগ্যনিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আর এদের বপুটা বিশালকায় হওয়ার কারণেই সকল কিছুই ধামাচাপা পরে যাচ্ছে না। যেমন কুরুক্ষেত মহাসমরে রাক্ষস ঘটৎকচের নিচে চাপা পরে প্রতিপক্ষের অসংখ্যযোদ্ধার প্রাণসংহার হয়েছিল। কালকেতু উপাখ্যানে বর্ণিত রাক্ষসরাজ কালকেতু শুধুই ভোজনবিলাসী হলেও একযুগের কালকেতুরা কোন অপকর্মেই পিছপা নয়। হত্যা, খুন, ধর্ষণ ও রাহাজানীতেও অধুনিক রাক্ষসরাজদের কোন জুড়ি নেয়। তাই এসব রাজরাক্ষসদের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে হলেও রাক্ষসধৃতকরণ যজ্ঞ শুরু করার কোন বিকল্প নেই। এসব রাক্ষদের এখনই লাগাম টেনে না ধরতে পারলে এরা সবকিছুই খেয়ে শেষ করে ফেলবে। জাতিসত্ত্বার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। যা কঙ্খিত নয়।
বিষয়: বিবিধ
১৫৩৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন