আইনমন্ত্রী আর কত লোক হাসাবেন ?
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৮ মে, ২০১৬, ০৫:২৭:১৯ বিকাল
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের প্রেক্ষাপটে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ সরকার দলীয় সাংসদরা আদালত সংম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। আইনমন্ত্রী হাইকোর্ট বিভাগের রায়কে অসাংবিধানিক ও অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। কোন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এ ধরনের তীর্যক সমালোচনা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারণ, আদলতের রায়ের সংক্ষুব্ধ পক্ষ উচ্চ আদালতের স্মরণাপন্ন হতে পারেন। এটাই আইনসিদ্ধ। তা ছাড়া অন্য কোন উপায়ে আদালতের রায় সম্পর্কে সমালোচনা করার সুযোগ নেই। একথা আমাদের চেয়ে বিজ্ঞ আইনমন্ত্রীর বেশী জানা থাকার কথা।
যা হোক মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রায় সম্পর্কে আইনমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ায় সারা দেশেই আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সকল শ্রেণির নাগরিকই তার বক্তব্যকে আদালত অবমাননা হিসাবেই গণ্য করছেন। আদালতের রায় সম্পর্কে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে বেশ হাস্যরসেরও সৃষ্টি হয়েছে। এই যখন অবস্থা তখন তিনি আবারও নতুন করে লোক হাসালেন বলেই মনে হচ্ছে।
তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায়ের পর জাতীয় সংসদে দেয়া সংসদ সদস্যদের বক্তব্যে আদালত অবমাননা হয়নি । সংসদের ভেতরের বক্তব্যে আদালত অবমাননা হয় না, এই যুক্তিতে অবমননাকর কথাও সেদিন বলা হয়নি, দাবি করেছেন আইনমন্ত্রী। সংসদ সদস্যদের ওই বক্তব্য ‘আবেগের বহিঃপ্রকাশ’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেছেন, ‘এতে সংসদ ও বিচার বিভাগের মুখোমুখি হওয়ার কোনো কারণ নেই’। ৮ মে রাজধানীর বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সাব-রেজিস্ট্রারদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
গত ০৫ মে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিয়ে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। এর ফলে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। ওই দিন সন্ধ্যায় সংসদে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ হওয়া নিয়ে বিচারকদের সমালোচনা করেন সংসদ সদস্যরা।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্রের ভিত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে এরকম বিতর্ক রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে হয়। এটা স্বাভাবিক। কিছু কিছু সময় আবেগও কাজ করে। সংসদ সদস্যরা যেহেতু আইন প্রণয়ন করেন, আর বিচার বিভাগ সেটা বাস্তবায়ন করে, সংসদ সদস্যরা কিন্তু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সুতরাং আইনসভা ও বিচার বিভাগ মুখোমুখি, আমি সেটা গ্রহণ করতে রাজি নই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সকলেই মানুষ। সুতরাং এই রায়ের পর আবেগের কিছু প্রকাশ সংসদের মধ্যে হয়েছিল। সেটা যখন প্রকাশিত হয়েছে, নিশ্চয়ই কিছু কিছু কথা হয়তো কাউকে আঘাত করতে পারে। তবে তাতে এটা বোঝায় না যে, বিচার বিভাগ আর আইনসভা সংঘাতের মুখোমুখি।’
যেটুকু বিতর্ক হয়েছে তা সেটা নিরসনযোগ্য উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, ‘আমাদের সমস্যা আমরা নিজেরা নিরসন করতে পারি। দেশের বিচার বিভাগ এবং আইনসভা মিলেই সেটা নিরসন করা যায়। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি না এই রায় এবং তার পর সংসদে যে বিতর্ক হয়েছে সেটা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।’
সেদিন সংসদে নিজের দেয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যাও দেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মামলাটি শুনানির সময় সরকার পক্ষের সাবমিশনের (শুনানি) মধ্যে ব্যাপারটা বলা হয়েছিল, যেহেতু মূল সংবিধান যেটি ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদ অনুমোদন দিয়েছিল; সেই সংবিধানের মধ্যে এই বিধানটা ছিল। যা কোনো রকম পরিবর্তন না করে হুবহু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। পরে ১৯৭৭-৭৮ এ মার্শাল ল’ এর মাধ্যমে সেটা পরিবর্তন করা হয়। সেই বিধানটিই (ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে) পরিবর্তন করা হয়েছে।’
‘সেক্ষেত্রে একটা সিদ্ধ আইনি তর্ক আছে যে, যদি মূল সংবিধান সরবরকম বিচারিক পর্যালোচনার উর্ধ্বে। এটা একটা যুক্তি, সেই কথাটাই আমি সংসদে বলেছিলাম। যেহেতু আমি আইনের মধ্যেই ছিলাম, সেহেতু এতে আদালত অবমাননা হয়নি।
যত কথায় বলা হোক না কেন আদালতের রায় সম্পর্কে একেবারে বেসামাল মন্তব্য করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। সংক্ষুব্ধ পক্ষের উচ্চতর আদালতের স্মরণাপন্ন হওয়ায় আইনসিদ্ধ। তিনি দাবি করেছেন সংসদের ভিতরের বক্তব্যে আদালত অবমাননা হয় না। কিন্তু কোন সাংসদের সংসদের ভেতরের বক্তব্যে যদি আদালত অবমাননার উপাদান থাকে তাহলে আদালত অবমাননা না হওয়ার কোন যুক্তি নেই। আইনমন্ত্রী কী তার বক্তব্যের স্বপক্ষে কোন আইন দেখাতে পারবেন ? সংসদে মানুষ খুন করলে কী খুনের অপরাধ হবে না ? তিনি আবেগের কথা বলে তো নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করলেন। মন্ত্রীরা তো আবেগ, অনুরাগ ও বিরাগের উর্দ্ধে ওঠে দায়িত্ব পালনের শপথ নেন। এতে কী তার শপথ ভঙ্গের ঘটনা ঘটেনি ?
বিষয়: বিবিধ
৯২০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন