আপনারা এখনও কিসের স্বর্গে বাস করছেন ?
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৭ মে, ২০১৬, ১২:৩২:৪০ দুপুর
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত রায় সম্পর্কে আইনমন্ত্রী মি. আনিসুল হক যে ভাষায় কথা বলেছেন, তাতে দেশের সচেতন মানুষ উদ্বিঘœ না হয়ে পারেন না। তিনি মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রায়কে সংবিধান পরিপন্থী বলেছেন। তাও আবার মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে। তিনি দাবি করেছেন যে, মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রায় ‘মেইনটেনেবল’ নয়। তার এই বক্তব্যের দ্বারা দেশের বিচার বিভাগের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি নিঃসন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। একথাও প্রমাণিত হয়েছে যে, আদালতের কোন রায়ই সরকারের ইচ্ছা-অভিপ্রায়ের পরিপন্থী হতে পারবে না বরং সরকারের আজ্ঞাই হচ্ছে সবকিছুর উর্দ্ধে। আইনমন্ত্রী দেশের সংবিধান ও আইন মান্য করলে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে আদালত সম্পর্কে যেভাবে যথেচ্ছ মন্তব্য করলেন তাতে বিচার বিভাগ সম্পর্কে মানুষের আস্থায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম।
অবশ্য বিচারবিভাগ ও আদালত সম্পর্কে সরকারি দলের নেতাদের খেদোক্তি প্রথম নয়। বিগত ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় খোদ প্রধানমন্ত্রী আদালত সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করে দেশের উচ্চ আদালত কর্তৃক তিরস্কৃত হয়েছিলেন। মন্ত্রীর নেতৃত্বে আদালতের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিলও করা হয়েছিল। মাত্র কয়েক দিন আগেও তো দুই মন্ত্রী প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করে আপীল বিভাগে কর্তৃক দন্ডিত হলেও মন্ত্রী আছেন বহাল তবিষতে। এসব তো কারো কাছে অজানা নয়।
আদালতের রায় সম্পর্কে সম্প্রতি আইনমন্ত্রীর বক্তব্য দেশের সচেতন মানুষকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। এ নিয়ে সচেতন মহলে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেয়। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনাটা বেশ জোড়ালো করেছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলের এক শীর্ষনেতা সরকারের প্রতি সুয়োমটো রুল জারি করে বর্তমান সংসদ অবৈধ ঘোষণারও দাবি করেছেন। আর আদালত যদি বর্তমান সরকার ও সংসদকে অবৈধ ঘোষণাও করেন তাহলে তারা কী কোন তারা ভাবে লাভবান হবেন ? সরকারের মন্ত্রীরা তো সাথে সাথেই বলে ফেলবেন ‘ আদালতের এই রায় সংবিধান পরিপন্থী , যা মেইনটেইনেবল নয়’। বাস খেল খতম! দেশে কী আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত যে,আদালত একটা রায় দিলেই তা কার্যকর কবে বা সব সমস্যা চুকে যাবে। মূলত বিএনপি নেতারা এখনও কিসের স্বর্গে বাস করছেন তা কারো কাছে বোধগম্য নয়।
‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের বিষয়ে হাইকোর্টের রায় সংবিধানপরিপন্থী’ আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এমন বক্তব্যে আদালত অবমাননা হয় কী না-সেই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় এ প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বললেন, ‘ হাইকোর্টের রায় সংবিধান পরিপন্থী’। এতে আদালত অবমাননা হচ্ছে না ? আমি তো মনে করি, আদালতের এটি বিবেচনা করা দরকার। আদালতের রায়কে যখন বলা হয়, সংবিধান পরিপন্থী, এর চেয়ে বড় আর কি বলা যাবে। এটি বিবেচনায় নেওয়া উচিত।” সংসদে পাস করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী হাইকোর্ট বাতিল করে দেওয়ার পর এখন সরকারের পদত্যাগ করা উচিত বলেও মনে করেন নজরুল ইসলাম খান।
তিনি আরও বলেন, ‘এরশাদের সময়ে আদালত সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী বাতিল করে রায় দিয়েছিলেন। তখন এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে থাকা বিরোধী রাজনৈতিক জোট (আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দল) দাবি করেছিল, সংসদে পাস করা সরকারের কোনো আইন আদালত যখন বাতিল করে দেয়, তখন ওই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার থাকে না। আওয়ামী লীগও এতে একমত ছিল।’
তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমাদের সেই সময়ে বক্তব্য যদি সঠিক হয়, তাহলে এখন ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়ার পর এই সরকারের কী হবে? পার্লামেন্টের রায় আদালত বাতিল করে দেওয়ায় তাদেরও তো আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার থাকে না।’
একথা বিএনপি নেতাদের মনে রাখা দরকার যে, মন্ত্রীরা আদালত অবমাননা করলে বা কী সমস্যা। আদালত যদি তাদেরকে শাস্তিও দিয়ে বসেন তাতেও তো কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এসবকে তারা মোটেই কেয়ার করে না। সাবেক বিচারপতি সামসুদ্দীন চৌধুরী তো সাবেক ষ্পিকার ও বর্তমান রাষ্ট্রপতির রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু এতে তার রাষ্ট্রপতি পদ অলঙ্কৃত করার ক্ষেত্রে কোন সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। আবার মাননীয় স্পিকারও বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রপতির পদ অলঙ্কৃত করার পর সেই বিচারপতিকেই পদোন্নতি দিয়ে আপীল বিভাগে নিয়োগ দিয়েছিলেন। মূলত বিএনপি নেতারা আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যর্থ হয়ে এখন অনেকটা পরাশ্রয়ী হয়ে আর্তনাদ শুরু করেছেন। নিজেদের দায়িত্ব চাপিয়ে দিচ্ছেন অন্যের উপর। কিন্তু এতে কোন লাভ হবে বলে মনে হয় না। আসলে তাদের কাজটা তাদেরকেই করতে হবে। অন্যথায় তাদের আহাজারীটা কখনোই শেষ হবে না।
বিষয়: বিবিধ
১১১০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন