ধরাকে সরা জ্ঞান করা ঠিক নয়
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৬ মে, ২০১৬, ০৬:৫৩:২৮ সন্ধ্যা
ক্ষমতা কখনোই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়। ক্ষমতা এক সময় আসে এবং ইতিহাসের গতিধারায় তা আবার চলেও যায়। কিন্তু তা আমরা মোটেই উপলব্ধি করতে পারি না। ক্ষমতাসীনরা সব সময় ভাবে যে, এ ক্ষমতা চর্চার অধিকারটা শুধুই তাদের। সবকিছুই দেখতে থাকেন ক্ষমতার রঙ্গিত ফ্রেম দিয়ে। ফলে তারা স্বেচ্চাচারি হয়ে উঠতে শুরু করেন। এক সময় তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করতেও শুরু করেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও সময়ের প্রয়োজনে তারা একদিন ক্ষমতা হারিয়ে বসেন। ফলে ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের সময়টা তাদের কাছে বেশ বেসুরোই মনে হয়। অতীতের সুখস্মৃতি রোমন্থন করতে করতে এক সময় নিজেকে হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু ততদিন ভাগিরথীতে অনেক জল বয়ে যায়। তখন অনুতাপ প্রকাশ ছাড়া আর কোন গত্যন্তর থাকে না।
বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বোধহয় সে রোগেই পেয়ে বসেছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় তারা আইন-কানুক, নিয়ম-নীতির কোন ধার ধারছে বলে মনে হয় না। যথেষ্ট স্বেচ্ছাচারিতা তাদেরকে রীতিমত পেয়ে বসেছে। দেশের উচ্চ আদালত সম্পর্কে খোদ আইন মন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বিষয়টি বেশ পরিস্কার। তিনি দেশের উচ্চ আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ উচ্চ আদালতের কারণেই তারা এখন ক্ষমতাসীন একথা তারা বেমালুম ভুলে গেছে। সম্প্রতি মহানগরীর ২৫ বছর পুরোনো একটি জামে মসজিদ ও আরবি শিক্ষা কেন্দ্রের জায়গা দুই ব্যক্তির নামে বরাদ্দ দিয়েছেন গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নতুন চমক দেখিয়েছেন। জায়গা লীজ পেয়ে এখন তারা মসজিদ ও আরবি শিক্ষা কেন্দ্র ভেঙ্গে জায়গাটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এমন অভিযোগে প্রতিনিয়ত এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল-মিটিং করছে এলাকাবাসী। ৫ মে মসজিদের জায়গা উচ্ছেদ করে দখলে নিতে পুলিশ গেলে এলাকাবাসী প্রতিরোধ করে। বর্তমানে মসজিদের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২৫ বছর আগে সরকারি জাগায় নির্মিত হয় মেহেদিবাগ শহীদ মির্জা লেন জামে মসজিদ। এলাকাবাসীর উদ্যোগে এ মসজিদটি নির্মিত হয়। পরে মসজিদের একটি অংশের জায়গায় শিশুদের আরবি শেখাতে তৈরি করা হয় আরবি শিক্ষা কেন্দ্র। বর্তমানে জায়গাটি দুই ব্যক্তির নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গণপূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের নির্দেশে তাদেরকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানা অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।
এর পর থেকে বরাদ্দপ্রাপ্তরা জায়গাটি নিজেদের আয়ত্বে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এদিকে মসজিদ ও আরবি শিক্ষা কেন্দ্র রক্ষার দাবিতে প্রতিদিন প্রতিবাদ সমাবেশ করছে এলাকাবাসী। ৫ মে সকালেও মসজিদের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় এলাকবাসী সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পরিচালিত ‘মসজিদ ও আরবি শিক্ষা কেন্দ্র রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মুক্তিযোদ্ধা সফর আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা হাসান মনসুর বলেন, স্বাধীনতার পরে সরকারি এই পরিত্যক্ত জায়গাটিতে জামে মসজিদ গড়ে তোলেন এলাকাবাসী।
সম্প্রতি মসজিদের জায়গাটি দুইজন ব্যক্তির নামে বরাদ্দ দিয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রাণালয়। মসজিদ উচ্ছেদ করে মুসল্লীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার এরকম অর্বাচীন সিদ্ধান্ত এলাকাবাসীকে হতবাক করেছে। ২৫ বছর আগ থেকে এ মসজিদ স্থায়ীভাবে চালু রয়েছে। স্থায়ী একটি মসজিদকে যাচাই বাচাই না করে ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
মূলত ক্ষমতার দম্ভেই ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সকল ক্ষেত্রেই স্বেচ্চাচারিতার আশ্রয় নিচ্ছেন। অথচ জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারেরই। জনগণ ক্ষমতাসীনদের কাছে দায়িত্বহীন নয় বরং দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে। বিষয়টি ক্ষমতাসীনদের অব্যশ্যই ভেবে দেখা দরকার। অন্যথায় একশ্রেণির নেতাকর্মীর জন্য সরকারের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
বিষয়: বিবিধ
৮৮৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন