নির্বাচনের নামে হানাহানি কাম্য নয়
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৫ মে, ২০১৬, ১০:০৬:৪৭ রাত
আমাদের দেশের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন অতীতে কখনো দেখা যায়নি। ফলে জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে স্থানীয় পরিষদের নির্বাচনগুলো বেশ শান্তিপূর্ণ ও অধিক উৎসব মুখর হওয়ার রেকর্ড অতীতে ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীকের ব্যবহার শুরু হয়েছে। ফলে নির্বাচন কেন্দ্রীক সংঘাতটা রাজপথের গন্ডি অতিক্রম করে মানুষের ঘরে পৌঁছে গেছে। গৃহবিবাদটাও জোরালো হয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়ে শুরু হয়েছে পিতা-পুত্রে সংঘাত। যা আত্মঘাতি বলা ছাড়া কোন উপায় নেই।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, সরকার স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার করেছে। যার দীর্ঘ মেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জাতীয় জীবনে। রাজনৈতিক সংঘাতটা জাতীয় রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও তা এখন জাতীয় গন্ডি পেড়িয়ে স্থানীয় পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। যা স্থানীয় রাজনীতিতেও বেশ উত্তাপ ছড়িয়েছে। আর অদুরদর্শী সিদ্ধান্তের প্রায়াশ্চিত্য যে আমাদেরকে কী ভাবে করতে হবে তা এখনও স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে ফলাফলটা কারো জন্যই সুখকর হবে না তা দিব্যি দিয়েই বলা যেতে পারে।
এবারের চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অতীতের তুলনায় অধিক সহিংস হয়েছে এবং প্রাণহানী ঘটনাও ঘটেছে ব্যাপক হারে। চলমান ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৭১ জন এবং আহত হয়েছেন ৬ শতাধিক। রাজধানীর রিপোটার্স ইউনিটিতে আজ অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। ‘চলমান ইউপি পরিষদ নির্বাচনের চালচিত্র’ তুলে ধরতেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন সুজনের সম্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘চলমান ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচন পূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষ এবং নির্বাচনকেন্দ্রীক বিরোধের জেরে নিহত হয়েছেন ৭১ জন এবং আহত হয়েছেন ৬ শতাধিক। প্রাণহানির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রথম ধাপের নির্বাচনের পূর্বে ১০ জন, প্রথম ধাপের নির্বাচনের দিন ১১ জন এবং প্রথম ধাপের নির্বাচনের পর থেকে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত ১১ জন নিহত হয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের দিন ৯ জন, নির্বাচনের পর থেকে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত ১৭ জন, তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের দিন ৫ জন এবং তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আরও বলা হয়, দলগত পরিচয়ে চলমান ইউপি নির্বাচনের সহিংসতায় নিহত হয়েছে আওয়ামী লীগের ২৯ জন, বিএনপির ২ জন, আওয়ামী বিদ্রোহী ৭ জন, জাতীয় পার্টির ১ জন, জাতীয় পার্টি জেপি ১ জন, জনসংহতি সম্মেলনের ১ জন, মেম্বার প্রার্থীর কর্মী বা সমর্থক ১৫ জন এবং ১৬ জন সাধারণ মানুষ ।
চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি ইতিমধ্যে সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে জানিয়ে সুজনের এই সমন্বয়ক বলেন, প্রথম ধাপ থেকে শুরু করে চতুর্থ ধাপের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাহারের পর এই সংখ্যা ১৫০-এ দাঁড়িয়েছে। প্রথম ধাপে ৫৪জন, দ্বিতীয় ধাপে ৩৪জন, তৃতীয় ধাপে ২৯জন এবং চতুর্থ ধাপে ৩৩ জন চেয়াম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এরা সবাই আওয়ামী লীগের।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চার ধাপে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রার্থী শূন্য ছিল বা আছে ৩৮৮ টি ইউনিয়নে। প্রথম ধাপে ১১৯ ইউনিয়ন, দ্বিতীয় ধাপে ৭৯ ইউনিয়ন এবং তৃতীয় ধাপে ৮১ ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী শূন্য ছিল। চতুর্থ ধাপেও ১০৯ টি ইউনিয়নে দলটির কোনো প্রার্থী নেই। কারণ, হিসেবে উল্লেখ করা হয় বিএনপির প্রার্থীদের অনেক স্থানে ভয়ভীতি প্রদর্শন মনোয়নপত্র জমাদানে বাধা মনোয়ন পত্র কেড়ে নেওয়া বা ছিড়ে ফেলার কারণে তারা জমা দিতে পারেনি।
সুজনের অনুসন্ধানে যা ওঠে এসেছে, তাকে ভয়াবহ না বলে কোন উপায় নেই। মূলত স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ের কারণেই সংঘাতটা এখন সর্বোব্যাপী রূপ নিয়েছে। যার পরিণামটা খুবই ভয়াবহ হতে পারে। যা আমাদের জাতিস্বত্ত্বাকেই হুমকীর মুখে ফেলে দেবে।
বিষয়: বিবিধ
৯৪৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন