হাত ধরে তুমি নিয়ে চলো সখী...
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৫ মে, ২০১৬, ০৭:৫৯:১৬ সন্ধ্যা
শৈশবে নানী-দাদীর কাছ থেকে অন্ধ ভিখারীর গল্প শুনে বেশ পুলকবোধ করতাম। কারণ, গল্পের কাহিনী আর সাবলীল উপস্থাপনা ছিল খুবই আকর্ষণীয়। অন্ধ ভিখারীর একমাত্র অবলম্বন ছিল তার পতিপ্রাণা স্ত্রী। অবশ্য ফকিরের অন্ধত্ব ভিক্ষার একটা উপলক্ষ্য ছিল। কারণ, মানিক বন্দোপধ্যায়ের প্রাগৈতিহাসিক গল্পের নায়িকা ভিখারীনি পাঁচীর যেমন তার ‘পায়ের ঘা’ ভিক্ষার উপলক্ষ্য ছিল, ঠিক তেমনিভাবে অন্ধ ভিখারিনীর অন্ধত্বও ছিল তার ভিক্ষাবৃত্তির প্রধান মাধ্যম। যদিও শেষ পর্যন্ত ভিখারিনী পাঁচী প্রেমিক বশিরের আদিম লালসার হাত থেকে রেহায় পায়নি। কিন্তু ইতিহাস সৃষ্টি করে অন্ধ ভিখারী স্বামীকে ছায়ার মত আনুকুল্য দিয়েছে তার পতিপ্রাণা স্ত্রী কমলা। আর এখানেই ভিখারিনী কমলার সার্থকতাটা সর্বজন গ্রাহ্য হয়ে উঠেছে। আর নানী-দাদীর বর্ণনায় তা হয়ে উঠেছে বেশ আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য।
যাহোক একটা লাঠির সাহায্য নিয়ে ভিখারিনী কমলা তার ভিখারী স্বামীর পথ নির্দেশ করতো। লাঠির একপ্রান্ত একহাত দিয়ে শক্ত করে ধরতো সেই অন্ধ ভিখারী। আর অপরপ্রান্ত ধরে স্বামীর সম্মূখভাগে চলতো শিখারিনী কমলা। ভিখারী বেশ ধর্মপ্রাণও ছিল বলে বোঝা যায় গল্পের উপস্থাপনা ও ধারা বর্ণনা থেকে। মেঘলা দিনে আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে এটাকে ইবলিশ শয়তানের উপদ্রপ বলে মনে করতো অশিতিপর ভিখারী। তাই স্ত্রী ভিখারিনীর প্রতি তার নির্দেশনা ছিল যখন আকাশে ইবলিশ শয়তানের উপদ্রপ দেখা দেবে, তখন যেন সে তাকে বিষয়টি জানিয়ে দেয়। স্বামীর নির্দেশনা মত আকাশে ইবলিশ শয়তানের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে কমলা সশব্দে বলে উঠে ‘অ ফকির চমকেছে’। শয়তান তাড়ানোর অস্ত্র হিসাবে ফকিরের মুখ থেকে অবলীলায় বের হয়ে আসে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। আর যতবারই আসমানে শয়তানের আছর দেখা যায় যায়, কমলার কিন্তু পতিভক্তিতে ব্যত্যয় ঘটে না। প্রতিবারই বলে ওঠে ‘অ ফকির চমকেছে’। ধর্মপ্রাণ শিখারীও নাছোর বান্দা। সে শয়তান তাড়ানোর জন্য কালেমা তাইয়্যেবার সাহায্য নিয়ে অবলীলায় বলে ওঠে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এভাবে চলতে থাকে ভিখারী দম্পতির নিত্য-দিনের কর্ম। আর এভাবেই জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা হয় ভিখারী দম্পতির।
মূলত ভিখারী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণেই এতটা স্ত্রী নির্ভর হয়ে ওঠে। যদি তার দৃষ্টি শক্তি স্বাভাবিক থাকতো তাহলে হয়তো অবস্থাটা অন্যমত হতে পারতো। কারণ, কোন কারণে স্ত্রীর সাথে তার মনোমানিল্য হলে ‘অন্ধের ষষ্টি’ দিয়ে স্ত্রী পেটানোর ঘটনাটাও একেবারে বিরল নয়। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় অন্ধ ভিখারীর ‘দায়ে পড়ে পায়ে হাত’ বলায় যুক্তিযুক্ত। অন্যথা হলেও ভিন্ন রকমও হতে পারতো। কারণ, অন্ধ ভিখারী কিন্তু লোকটা তেমন সুবিধার ছিল না।
যাহোক এসব অতিপুরনো দিনের রূপকথা; সেকেলে বিনোদনের মাধ্যম। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের আনন্দ-বিনোদনে এসেছে রীতিমত ভিন্নতা। তাই এসব এখন রীতিমত অচল। এখন আর কেউ নানী-দাদীদের কাছে এমন রূপকথার গল্প শুনতেই মোটেই আগ্রহী হয়ে ওঠে না। এঁরাও আগ্রহ দেখায় না। হাতের কাছে যদি একটা ‘আইফোন’ থাকে তাহলে নিজেকে বিশ্বজয়ী বীর মনে করতেই পুলকবোধ করতেই পাওে যে কেউ। কারণ, এর মাধ্যমে গোটা বিশ্বটাই তার হাতের মধ্যে এসে যায়। তাই নানী-দাদীর আবেদন-উপযোগীতা এখন আর আগের মত নেই বরং জীবন সায়াহ্নে তারা অনেকটাই অন্যের গলগ্রহ। এটিই তো এখন নির্মম ও নিষ্ঠুর বাস্তবতা।
কালের বিবর্তনে সেই রূপকথার গল্পগুলো এক সময় ভুলে যেতে বসেছিলাম। কিন্তু স্ত্রী নির্ভর অন্ধ ভিখারীর গল্পটা রূপকথার কল্পরাজ্যের গন্ডি পেড়িয়ে বাস্তবরূপ পরিগ্রহ করবে তা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। তাও আবার এক সময়ের দোর্দন্ড প্রতাপশালী শাসকের জীবনে। বস্তুত ইতিহাসের শিক্ষাটা বড়ই নির্মম ও নিষ্ঠুর। আর বাস্তবতাটা সেদিকেই রূপ নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। ঘটনা আবারও আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, ক্ষমতা কোন চিরস্থায়ী তালুক-সম্পত্তি বরং অতিক্ষণস্থায়ী অনুষঙ্গ মাত্র। ক্ষমতার হাত বদলটা রীতিমত ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ক্ষমতার দম্ভে সাময়িকভাবে অনেক কিছু করা গেলেও তা এক সময় বিপজ্জনক হিসাবেও দেখা দিতে পারে। আজকের দিনের শাসক আগামী দিনে ক্ষমতাহীন অনুগ্রহ প্রত্যাশীও হতে পারেন। এর বাস্তব প্রমাণই এক সময়ের প্রচন্ড প্রতাপশালী শাসক, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। তিনি এখনও দলীয় চেয়ারম্যান কিন্তু দলে তার কথার কোন মূল্য নেই। তিনি এখন রীতিমত ‘তাল পাতার সেপাই’। মূলত তিনি এখন স্ত্রী রওশন এরশাদের কাছে রীতিমত করুণার পাত্র। নয় বছরের দেশ শাসনকারী এখন ক্রিড়া-কৌতুকের উপলক্ষ্য। হয়রে ক্ষমতা। একী তোর নির্মম পরিহাস ?
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, জাতীয় পার্টিতে এখন তিনজন চেয়ারপারসন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ফুল বা পূর্ণ চেয়ারম্যান। রওশন এরশাদ সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান। গোলাম মোহাম্মদ কাদের কো-চেয়ারম্যান। অথচ কয়েক মাস আগে এরশাদ যখন তাঁর ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান এবং সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুকে সরিয়ে রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব বানিয়েছিলেন, তখন দলের ভেতরে প্রতিবাদ উঠলেও তিনি আমলে নেননি। নেতা-কর্মীদের সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, পার্টি চেয়ারম্যানের কথাই চূড়ান্ত। নতুন কাউকে কো-চেয়ারম্যান করা হবে না। একেবারে সাফ কথা।
কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ প্রশ্নে তখন এরশাদের নেতৃত্বে এক পক্ষ ও রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আরেক পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল। উভয় পক্ষই আলাদা আলাদা বৈঠক করে প্রতিপক্ষের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন। এরশাদ সমর্থকেরা দাবি করেন যে সংগঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র এখতিয়ার চেয়ারম্যানের। তিনি যা বলবেন, সেটাই সবাইকে মানতে হবে। সাংসদ বা সংসদীয় দলের কিছু বলার সুযোগ নেই।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির অধিকাংশ সাংসদ রওশন এরশাদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জানিয়ে দেন, তাঁকে (রওশন এরশাদ) সিনিয়র কো-চেয়ারপারসন করা না হলে তাঁরা এরশাদের সিদ্ধান্ত মানবেন না এবং জাতীয় কাউন্সিলেও যাবেন না। এ অবস্থায় এরশাদের নেতৃত্ব নতুন করে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে। এর আগে তিনি একাধিকবার জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের সরকার থেকে পদত্যাগ করার তাগিদ দিলেও কেউ তাঁর কথা আমলে নেননি। বরং তাঁরা এরশাদের মন্ত্রীর পদ মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়ে অন্যদের মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বলা অনৈতিক বলে জানিয়ে দেন।
এই টানাপোড়েন চলার মধ্যেই হঠাৎ করেই এরশাদ ঘোষণা দিলেন, রওশন এরশাদকে দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান করা হলো। রওশনপন্থীরা এটিকে দেখছেন তাঁদের জয় হিসেবে। মে দিবসের সমাবেশে এরশাদ ও রওশন পাশাপাশি বসেন। কাকরাইলে জাতীয় পার্টির প্রধান কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে এরশাদ বলেন, ‘সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমার আনন্দ জানানোর ভাষা নেই। দুর্যোগের ঘনঘটা শেষ হয়েছে। তার উপস্থিতিতে আমার হৃদয় আজ আনন্দে ভরপুর। আজকের দিনটি শুধু শ্রমিকদের জন্যই নয়, জাতীয় পার্টির জন্যও আনন্দের দিন।’
আসলেই জাতীয় পার্টির সমস্যার সমাধান হয়েছে কি না, তা দেখার জন্য আমাদেরকে অপেক্ষায় করতে হবে বৈকি। কারণ, এরশাদ কখন কী বলেন, কখন কী করেন, সেটি বোঝা কঠিন। কারণ, তাকে দিয়ে নেপথ্যের শক্তি কখন কী বলায় সেটিও বেশ গবেষণার বিষয়। সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এরশাদ বলেছিলেন, বিএনপি ছাড়া নির্বাচন অর্থবহ হবে না এবং জাতীয় পার্টিও সেই নির্বাচনে অংশ নেবে না। তিনি দলের নেতাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ারও নির্দেশ দেন। পরে দেখা গেল রওশন এরশাদ নির্বাচনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিলে এরশাদ অগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হন। কিন্তু যারা এরশাদের কথা শুনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন, তাঁরা সংসদে আসতে পারেননি।
এরশাদ ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন বলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন আছে। আর এমনটি মনে করার যথেষ্ঠ কারণও রয়েছে। এ কারণে সামরিক শাসনামলেও তাঁর পদবি সিএমএল-এর অর্থ করা হতো ‘ক্যানসেল মাই লাস্ট অ্যানাউন্সমেন্ট’। এখন দেখা যাক, জাতীয় পার্টির কাউন্সিলের আগে তাঁর কাছ থেকে আরও কোনো অ্যানাউন্সমেন্ট আসে কি না। তবে এবারেও যে তিনি রাজনৈতিক কৌশলে রওশনের কাছে হেরে গেলেন, তা বলার অপেক্ষা রাখেন না। আর এ পরাজয়টা তাকে যেভাবে আষ্টে-পৃষ্ঠে চেয়ে ধরেছে, তা থেকে বেড়িয়ে আসাও তার জন্য শুধু কষ্টসাধ্যই নয় বরং অসম্ভবও বটে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের রাজনীতিতে এমন নাটকীয়তায় বিভিন্নভাবেই বিশ্লেষণ করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। কিন্তু সকল ক্ষেত্রেই হিসেব মেলানোটা বেশ কষ্টসাধ্যই হচ্ছে। যিনি সারাটা জীবন নারীকে নিয়ে খেলেছেন বলে অভিযোগ আছে, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ নারীই এরশাদকে নিয়ে খেলছেন !! ক্ষমতা ও সম্মান আজ আছে, কাল নেই, এরশাদই বোধহয় একথার বাস্তব উদাহরণ। এক সময়ের প্রচন্ড ক্ষমতাবান শাসক সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ আজ নিতান্ত একজন অসহায়, হাস্যকর ও করুণার পাত্র !
৫ই জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে অংশ না নিতে চেয়ে ও স্ত্রী রওশনের কাছ থেকে চরমভাবে প্রতারিত হয়ে সিএমএইচে চিকিৎসার নামে অন্তরীণ হতে হয়েছিল এরশাদকে । হাসিমুখেই মেনে নিতে হয়েছিল ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব হারানোর দুঃসহ যাতনাকে। জাতির কাছ থেকে 'থুথুবাবা' আর 'পল্টিবন্ধু' উপাধিও সহ্য করতে হয়েছিল এরশাদকে। প্রতাপশালী এই শাসক এখন নিজ দলের সব কর্তৃত্ব হারিয়ে জীবন্মৃত অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের নামক পদের ছদ্মবেশে অনেকটা "বয়স্ক ভাতা" নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধামহল ।
সম্প্রতি সব ক্ষমতা হারিয়ে মৃত্যুর পরে নিজের গড়া দলে তার নাম থাকবে কিনা - সে চিন্তায় আবারও হারানো ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে নাজেহাল হতে হলো এরশাদকে। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ঘোষণা দিয়ে বসলেন, 'ভাই জি এম কাদের হলেন দলের কো-চেয়ারম্যান এবং কাদেরই হবেন তার একমাত্র উত্তরসুরী।' স্বামীর এই দুঃসাহসকে ভীমরতি মনে করে রওশন তৎক্ষনাৎ নালিশ নিয়ে ছুঁটে যান সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে। বরাবরের মত এবারও শীর্ষ পর্যায় নির্ধারণ করে দেন জাপার ভবিষ্যত নেতৃত্বকে !
একান্ত বাধ্য হয়েই এরশাদ সাহেব সুবোধ বালকের মত ঘোষণা দিলেন, আজ থেকে দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান হলেন রওশন। আমার মৃত্যুর পর জাপার হাল ধরবেন রওশন। সত্যিই ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করে না। আজকের ক্ষমতাবান কালকের করুণার পাত্র ! আজকের স্বৈরাচার কালকের ভিক্ষুক ! আজকের লৌহমানব কালকের হাসির পাত্র ! সত্যিই মানুষ নিয়তির কাছে বড্ড অসহায় ! যদি আমরা তা উপলব্ধি করতে পারতাম তাহলে তা কল্যাণকরই হতো আমাদের জন্য ! আর বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর জন্যও এটি একটি নির্মম সতর্ক বার্তা। কিন্তু ক্ষমতার রঙ্গীন ফ্রেমে তারা বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারছেন বলে মনে হয় না।
আমরা কেন জানি অনেকটাই বাস্তবতা বিবর্জিত হয়েছি। তাই আমরা নিজেদের এই অসহায়ত্বকে অনুধাবন করি না ! যেমনটা এরশাদ সাহেব বললেন, তার মৃত্যুর পর জাপার হাল ধরবেন রওশন। কিন্তু কার মৃত্যু আগে হবে সেটাও কিন্তু আমরাই নির্ধারণ করে দিচ্ছি ! তাছাড়া, তার মৃত্যু পরবর্তীকালীন জাপার নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের হাত থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে কিনা তাই বা এরশাদ সাহেব কি করে জানেন ? আসলে এরশাদের নিষ্ঠুর পরিনতির জন্য এরশাদ নিজেই দায়ি। যিনি সারাটা জীবন... নিয়ে খেলেছেন, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ নারীই তাকে নিয়ে খেলছেন ! সেই নারীশক্তির কাছেই আজ পরাস্ত হতে হলো এরশাদকে ! ইতিহাসের নির্মম প্রতিশোধ তো আর ঠেকানো যায় না!
একান্ত বাধ্য হয়ে কবিয়াল খেদোক্তি করেই অবলীলায় গেয়েছিলেন, ‘ হাত ধরে তুমি নিয়ে চলো সখী, আমি যে আর পারি না’। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বোধহয় সে বাস্তবতারই মুখোমুখি হয়েছেন। অনেক লম্ফঝম্প করে তিনি স্ত্রী রওশনের হাত থেকে দলের কর্তৃত্ব উদ্ধার করতে পারেন নি বরং তাকে প্রতিবার অদৃশ্য শক্তির কাছে হেনস্তা হতে হয়েছে। কবিয়ালও চেষ্টা করেছিলেন তার প্রেয়সীর হাত থেকে সকল কর্তৃত্ব উদ্ধার করতে। কিন্তু তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে প্রিয়তমার কাছে নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পন করেছেন। তাই সেই নির্মম ও নিষ্ঠুর বাস্তবতায় এরশাদকেও মহারাণীর কাছে আত্মসমর্পনই করতে হলো। এখন তার অন্ধ শিখারীর মত স্ত্রী কমলাকে অনুসরণ করা ছাড়া কোন উপায় আছে ?
বিষয়: বিবিধ
১২১৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন