সাম্প্রতিক হত্যাকান্ড ও দোষারোপের রাজনীতি
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১০:১০:৪৭ রাত
দেশে আইনের শাসনের অভাবে হন্তারকেরা একেবারে লাগামহীম হয়ে পড়েছে। সারা দেশেই মানুষ খুনের মহোৎসব চলছে। কোন ভাবেই এর লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। মনে হয় দেশটা এখন রীতিমত বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। জনগণের জানমাল সবই এখন নিরাপত্তাহীন। মূঔু বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের উদাসীনতার কারণে রাষ্ট্রযন্ত্রও অনেকটাই ব্যর্থ। আর এ অবস্থা থেকে উত্তরণের সহসাই কোন পথ দেখা যাচ্ছে না।
মূলত দোষারোপের রাজনীতিই আমাদের দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রধান অন্তরায়। কোন হত্যাকান্ড ঘটার সাথে সাথে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দায়ি করা আমাদের দেশের রাজনীতিকদের রীতিমত মুদ্রাদোষে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি জুলহাস মান্নানসহ ২জনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই কোন প্রকার বাছ-বিচার, তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দায়ি করার অসুস্থ রাজনীতি আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। বিরোধী দলগুলো এজন্য সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাতে মোটেই কসুর করেনি। সরকারের পক্ষেও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলা হয়েছে, বিএনপি-জামায়াতই নাকি এসব হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবিও বেশ চমকপ্রদই বলতে হবে। তিনি দাবি করেছেন, ‘খুনীরা পেশাদার ২০ দলীয় জোটের নির্দেশে কাজ করে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যও বেশ স্মরণযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ড ঘটানো হচ্ছে’। তথ্যমন্ত্রী তো এসব হত্যাকান্ডের জন্য কথিত আগুন সন্ত্রাসীদের দায়ি করেছেন। কিন্তু কোন ঘটনার বিষয়ে কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দায়ি করার অপরাধীদেরই আনুকুল্য দেবে-এতে কোন সন্দেহ নেই। বিষয়টি নিয়ে সকল পক্ষকেই দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। আর দায়িত্বহীনতার কারণেই আমাদের দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমঅবনতিশীল।
দেশে চলমান এইসব হত্যাকান্ডে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহল বেশ উদ্বিঘœ। বিষয়টি নিয়ে কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসেছে বিশ্বসংস্থা । জানা গেছে, বাংলাদেশে ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতহত্যাকান্ডের শেষ দেখতে পাচ্ছে না জাতিসংঘ। বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া একের পর এক পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের কারণে উদ্বেগ জানিয়েছে এই সংস্থাটি। রাজধানীর কলাবাগানে মার্কিন দূতাবাসের সাবেক কর্মকর্তা জুলহাস মান্নানসহ জোড়া খুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি আজ দেয়া এক বিবৃতিতে এই মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে আরো একটি নৃশংস হত্যাকান্ডে আমরা শোকাহত। সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে ক্রমাগতভাবে বেড়ে যাওয়া আক্রমনের কোনো শেষ দেখা যাচ্ছে না। সর্বসাম্প্রতিক ঘটনায় সহিংসতা ও চরমপন্থার শিকার হয়েছেন জুলহাস মান্নান ও মাহবুব তনয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে অসহিষ্ণুতা সংশ্লিষ্ট সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতে সাথে মিল নেই - এমন ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্ততে পরিণত করা হচ্ছে। (জুলহাস হত্যাকান্ডের) মাত্র দুই দিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম খুনের ঘটনা এরই দৃষ্টান্ত।
এতে বলা হয়, সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যহীনভাবে সব মানুষের বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করা জাতিসংঘের নীতি। গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে যে সহিংসতা ও নৃশংসতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি - তার বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় নেতাদের প্রতিবাদ জানানো উচিত। দোষীদের আইনের আওতায় আনতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর ও দ্রুত তদন্ত করা প্রয়োজন। দোষিদের দায়মুক্তি অসহিষ্ণুতাকে আরো বাড়িয়ে দেবে, যা এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটতে উৎসাহিত করবে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট জুলহাস ও তনয় হত্যাকান্ডের নিন্দা জানিয়ে ঘটনার দ্রুত এবং তদন্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু আমরা বোধহয় এই বিষয়টিকে মোটেই আমলে নিচ্ছি না বরং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের দায়-দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করেছি। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের এই নেতিবাচক ও পশ্চাদপদ দৃষ্টিভঙ্গী আমাদেরকে কোন গন্তব্যে নিয়ে যাবে তা অবশ্য সময়ই বলে দেবে। তবে আমাদের জন্য ভাল কিছু অপেক্ষা করছে বলে মনে হয় না।
বিষয়: বিবিধ
১২৫০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন