গণতন্ত্র ও ভিন্নমত
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ২২ এপ্রিল, ২০১৬, ০৯:৪৪:৫৮ রাত
ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকলে গণতন্ত্র বিকশিত হয় না। মূলত বহুমত আর বহু পথের নামই গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনের কথা বলা হলেও ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধার বিষয়টিও স্বীকৃত। তাই গণতন্ত্র মানেই হলো সকল মত ও পথের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতায় তা অনেকটাই বেসুরো বলেই মনে হয়। যা কারোরই কাম্য নয়।
আমাদের দেশের সংবিধানের অন্যতম স্তম্ভই হচ্ছে গণতন্ত্র। আর গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু স্বাধীনতার ৪ দশক অতিক্রান্ত হলেও আমরা এখন স্বাধীনতার সুফল থেকে অনেকটাই বঞ্চিত হচ্ছি। মূলত ক্ষমতা কেন্দ্রিক অপরাজনীতির কারণেই আমাদের এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর এ অবস্থা থেকে উত্তরণের সহসাই কোন সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না।
গণতন্ত্রে যেখানে অবাধ বাকস্বাধীনতা স্বীকৃত এবং আমাদের দেশে সংবিধানে এ স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা শুধু কেতাবেই লিপিবদ্ধ, বাস্তবপ্রয়োগটা এখনো সুদুরপরাহত। মূলত রাষ্ট্র জনগণের বাকস্বাধীনতা নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। সরকারের গঠনমূলত সমালোচনাকেও রাষ্ট্রদ্রোহীতা আখ্যা দিয়ে ভিন্নমতের উপর দলন-পীড়ন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও সরকার বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। কিন্তু এমনটা যে হচ্ছে না তা সরকারকেই প্রমাণ করতে হবে।
সম্প্রতি এসব অভিযোগ দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশে অব্যাহত ভিন্নমত দমনের প্রেক্ষিতে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা জানিয়েছে। এমনকি ভিন্নমত ও ভিন্ন বিশ্বাসীদের প্রতি বৈষম্য এবং ভয়ঙ্কর হামলা বাংলাদেশে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন কংগ্রেসের প্রভাবশালী সদস্য তুলশী গ্যাবার্ড। ২১ এপ্রিল কংগ্রেসে দেওয়া বক্তব্যে তুলশী গ্যাবার্ড এ মন্তব্য করেন। যা আমাদের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
হাওয়াই থেকে নির্বাচিত তুলশী গ্যাবার্ড মার্কিন কংগ্রেসে ডেমোক্রেটদের প্রভাবশালী সদস্য। তিনি বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির এশিয়া এবং প্যাসিফিক উপকমিটির সদস্য। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন এবং বাংলাদেশে গত ১৪ মাসে ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠনসহ ধর্মে বা বিশ্বাসে ভিন্নতার কারণে সংঘটিত সব হত্যাকান্ডের তিনি নিন্দা জানান।
কংগ্রেসে দেওয়া বক্তব্যে গ্যাবার্ড বলেন, বাংলাদেশের এসব হত্যাকান্ড আমাদের মূল্যবোধের ওপর হামলা। ভিন্নমত, ভিন্ন বিশ্বাসীদের প্রতি বৈষম্য এবং ভয়ংকর হামলা বাংলাদেশে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
কংগ্রেস উইমেন তুলশী গ্যাবার্ড গত বছর বাংলাদেশ পরিস্থিতির ওপর মার্কিন কংগ্রেসে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। এইচআরইএস ৩৯৬ নামের ওই প্রস্তাবে বাংলাদেশে ভিন্নধর্ম, ভিন্ন বিশ্বাসীদের নিরাপত্তা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কংগ্রেসে বাংলাদেশ বিষয়ক প্রস্তাবটিকে সমর্থন দিয়ে পাস করার জন্য তুলশী গ্যাবার্ড তাঁর বক্তব্যে কংগ্রেস সহকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
মূলত বাংলাদেশে ভিন্নমতের প্রতি জুলুম-নির্যতন এবং নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে দমনের বিষয়ে আলোচনায় বিষয় হিসাবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এ ব্যাপারে বেশ সোচ্চার। এমনকি সরকারের শরীকরাও দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মোটেই সন্তষ্ট নয়। কিন্তু সরকার বিষয়টি কোন ভাবেই আমলে নিচ্ছে না। যা সরকারের উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করে। তাই শুধুই ক্ষমতা চর্চা ও শাসন নয় বরং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যও সরকারকে সচেষ্ট হতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন