চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে আমরা কতখানি আন্তরিক ?

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ২২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:৩৬:২৯ দুপুর



একথা সর্বজনবিদিত যে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক সংরক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। কিন্তু এই চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা যায়নি। এ বিষয়ে যেসব তৎপরতার কথা শোনা যাচ্ছে, তার সবই অনেকটা দায়সারা গোছেরই বলেই মনে হচ্ছে। মূলত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে মধ্যে নিহিত রয়েছে আমাদের হতদরিদ্র জনগণের ঘাম ও রক্ত। কিন্তু জনগণের এই কষ্টার্জিত অর্থ উদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একথাও অনস্বীকার্য যে, একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক এবং রিজার্ভের অর্থ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত । তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে টাকা লোপাট হওয়ার ঘটনা আমাদের জাতীয় সক্ষমতা ও সামর্থ নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। আর যত কথায় বলা হোক না কেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ দায় কোনভাবেই এড়াতে পারে না।

আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম ও নৈরাজ্যটা সর্বসাম্প্রতিক নয় বরং গত দেড় দশকে ব্যাংকিং খাতে ৯টি বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারী ঘটনা ঘটেছে। যদিও রিজার্ভ চুরির ঘটনাটা অভিনবই বলতে হবে। উল্লেখ্য যে, গত ৭ বছরে সংঘঠিত ছয়টি বড় আর্থিক কেলেঙ্কারীর মাধ্যমে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি চুরি বা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বড় এসব আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ। কিন্তু একটি কেলেঙ্কারীরও বিচার হয়নি। যা দুঃখজনকই বলতে হবে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর থেকেই বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে চলছে, যা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে আস্থাহীনতা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। নিকট অতীতে পুঁজিবাজার, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, বেসিক ব্যাংক ও ডেসটিনি কেলেঙ্কারীর সাথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে রিজার্ভ চুরির ঘটনা। যা স্মরণকালের সর্ববৃহত কেলেঙ্কারীগুলোর অন্যতম।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আইন ও বিধিমালার তোয়াক্কা না করেই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ইচ্ছামতো ঋণ দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, প্রধান কার্যালয়ের ঋণ যাচাই কমিটির বিরোধিতা সত্ত্বেও পর্ষদ অনুমোদ দেয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে মাত্র ১১টি পর্ষদ সভায়ই ৩ হাজার ৪৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়। হলমার্ক কেলেঙ্কারীর ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।

আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতেও চলছে নজীবিহীন নৈরাজ্য। বিনিয়োগ না বাড়ায় ব্যাংকগুলোতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত পড়ে থাকে। ব্যাংকগুলো যে ঋণ দিচ্ছে তা আনাদায়ি থাকা বা কাকে ঋন দেয়া হবে, তা নিয়ে সংকট সৃষ্টি। মূলত ব্যাংকিং খাতে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতি এখন সর্বজন স্বীকৃত। ব্যাংকগুলোর কেবল লাভের পেছনে ছোটা, বিপুল অঙ্কের খেলাপি ও মন্দ ঋণ ব্যাংকিংখাত অস্থিতিশীল করে তুলেছে। ব্যাংকগুলো আইটি সিস্টেম সুরক্ষিত না থাকা এবং মুলধন ঘাটতি এখন চরমে উঠেছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে এ অবস্থা এখন নিয়মেই পরিণত হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। আমানত সংগ্রহে অসম প্রতিযোগিতা। ব্যবস্থাপনার সংকট, বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত মূলত আমানত নির্ভর বড় ধরনের অর্থায়নে বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট থাকায় এখানে ঋণপ্রবাহ কম। আর যেটুকু ঋণ দেওয়া হয়, তার বড় অংশই নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সামষ্টিক অর্থনীতি ও ব্যবসায়িক পরিবেশে ঋণ প্রবৃদ্ধিও কম এ খাতে। এসব কিছু বিবেচনায় ব্যাংকিং খাতে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল মনে করে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি’স। সম্প্রতি সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকির মধ্যে অন্যতম হলো ঋণ নিবিড়তা।

মূলত ব্যাংকিং সেক্টরে এমন হ-য-র-ল-ব অবস্থার জন্য রাজনৈতিক বিবেচনা ও অদক্ষ এবং অযোগ্যদের নিয়োগকেই দায়ি করছেন সংশ্লিষ্টরা। উল্লেখ্য, মহাজোট সরকার ২০০৯ সাল থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে পরিচালক নিয়োগ দিয়ে আসছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সদস্য নিয়োগ দেয়া হলে তাঁদের যোগ্যতা নিযে প্রশ্ন ও সন্দেহ তৈরি হয়।

অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার নজীর থাকার কারণেই আমাদের দেশের ব্যাংকিং সেক্টরসহ কোন সেক্টরেই শৃঙ্খলা নেই। ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অনিয়ম দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ও অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার সুনির্দিষ্ট উদাহরণ নেই আমাদের দেশে। কিন্তু অন্য দেশে নজিরবিহীন শাস্তি দেয়ার উদাহরণ রয়েছে। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্টের নাসদাকের সাবেক চেয়ারম্যান বার্নার্ড মেডফের শেয়ারবাজারে আর্থিক কেলেঙ্কারির দায়ে ১৫০ বছর জেল দেয় এবং ১৭০ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়। যা আমাদের জন্যও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আমরা বাংলাদেশে ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সাথে জড়িতদের সনাক্ত করতে না পারলে এই ঐতিহাসিক কাজটি করার সাফল্য দাবি করেছে ফিলিপাইন। দেশটির সিনেট কমিটির জিজ্ঞাসাবাদে জুয়া ব্যবসায়ী কিম অং ইতিমধ্যে ৯৮ লাখ ডলার ফেরত দিয়েছেন। সেই অর্থ বাংলাদেশকে ফেরত দিতে বেশ আন্তরিক ও তৎপর ফিলিপাইনের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ। আগামী ৩০ জুন ফিলিপাইনের বর্তমান প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ওই অর্থ ফেরত দিতে চায় তারা। তবে সে জন্য তাদের আদালতে কিছু আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। আর বিপত্তিটা বোধহয় বেধেছে এখানেই।

ওই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দাবিনামা চায় ফিলিপাইন, যার মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকে যাওয়া রিজার্ভের আট কোটি ১০ লাখ ডলারের মালিকানা দাবি করবে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো সেই দাবিনামা পাঠায়নি এবং পাঠাতে রাজিও নয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ নিয়ে ফিলিপাইনের আইন বিভাগকে আইনি পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যা কিছুটা হলেও দায়সারা গোছের বলেই মনে হয়।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য সে দেশের আদালতের অনুমতি চেয়েছে ফিলিপাইন। গত ১৮ এপ্রিল করা এ-সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২ মে। কিম অংয়ের জমা দেওয়া ৯৮ লাখ ডলার এখন ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আছে। আদালতের অনুমোদন পেলে ওই অর্থ ফেরত পাবে বাংলাদেশ। ফিলিপাইনে যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্য থেকে বাকি সাত কোটি ১২ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে রিজাল ব্যাংককে। কারণ, কোনো ধরনের ব্যাংকিং রীতি-নীতি না মেনে হ্যাকিং হওয়া অর্থ হস্তান্তর করেছে তারা।

উল্লেখ্য, আগামী ৯ মে ফিলিপাইনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনাও নির্বাচনী রাজনীতিতে বেশ উত্তাপ ছড়িয়েছে। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকার তার মেয়াদকালেই যতটা সম্ভব অর্থ বাংলাদেশকে ফেরত দিতে আগ্রহী। দেশটির সিনেটের প্রেসিডেন্ট প্রো টেম্পোরে রাল্ফ রেক্টো বলেছেন, ‘বর্তমান প্রেসিডেন্ট অ্যাকুইনো ৩০ জুন ক্ষমতা ছাড়ছেন। ওই সময়ের মধ্যেই উদ্ধারযোগ্য সব টাকা ফেরত দেওয়া যাবে। এটা আমাদের জাতীয় সময়সীমা হওয়া উচিত।’ ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ বলছে, আপাতত ব্যবসায়ী কিম অংয়ের দেওয়া অর্থ ফেরত পেতে ওই মামলায় বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে পক্ষভুক্ত হয়ে অর্থের মালিকানা দাবি করতে হবে। না হলে কিমের দেওয়া ৯৮ লাখ ডলার ফিলিপাইন সরকারের নিজস্ব তহবিলে জমা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে অবস্থা সেদিকেই মোড় নিচ্ছে।

নালিশী অর্থ যে বাংলাদেশের, এ ব্যাপারে ফিলিপাইনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো সন্দেহ নেই। তবে তা ফিরে পেতে আদালতে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ জমা দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, নিজেদের জড়াতে রাজি নয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বক্তব্য হচ্ছে, ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষকে এটি বোঝানোর কিছু নেই যে, ওই টাকার মালিক বাংলাদেশ ব্যাংক। টাকার উৎস সম্পর্কে তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করতে গেলেই তারা প্রমাণ পাবে যে ওই টাকার মালিক বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই আদালতে মামলায় পক্ষভুক্ত হয়ে এই মুহৃর্তে টাকার মালিকানা দাবি করার পক্ষে নয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি-নির্ধারকরা। কিন্তু কী কারণে পক্ষভূক্ত হতে বাংলাদেশ ব্যাংক রাজী নয় তা এখন রহস্যাবৃত্তই রয়ে গেছে।

জানা গেছে, ফিলিপাইনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) জন গোমেজ নিয়মিত সিনেট কমিটির শুনানিতে থাকছেন, মামলার গতিবিধির বর্ণনা তুলে ধরে তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাচ্ছেন। সিনেটর ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত সভা করে অর্থ আদায় ও ফেরত প্রক্রিয়া নজরে রাখছেন। তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তাও থাকছেন এসব কাজে। তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ নিচ্ছে বলে দাবি করলেও সে পদক্ষেপগুলো কী, তা খোলাসা করছেন না কেউ। ফলে রহস্যটা রীতিমত রহস্যই থেকে যাচ্ছে।

রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) একটি চিঠি তৈরি করে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের হাতে দিয়েছেন এ মাসের প্রথম দিকে, ওই চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের একটি স্বাক্ষর চেয়েছে ব্যাংকটি। আরসিবিসির একজন আইনজীবী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে গভর্নর সই করলে তখন তা যৌথ স্বাক্ষরিত চিঠিতে রূপ নেবে। ওই চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর দাবি করবেন যে আরসিবিসির চারটি ভুয়া অ্যাকাউন্টে ঢোকা আট কোটি ১০ লাখ ডলারের মালিক বাংলাদেশ ব্যাংক। ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ওই চিঠিটি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে চিঠিটি ফিলিপাইনে পাঠানো হয়নি বলে জানা গেছে।

তবে ‘মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স অব ক্রিমিনাল ম্যাটারস অ্যাক্ট, ২০১২’ এর আওতায় বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে গত ১৬ এপ্রিল ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাতে ফিলিপাইনের আদালতে চলমান অর্থ ফেরত-সংক্রান্ত মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে লড়তে ফিলিপাইনের আইন বিভাগকে অনুরোধ করেছে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়। অর্থাৎ, ফিলিপাইনে চলমান মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ হয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে দেশটির আইন বিভাগের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তবে সেখান থেকে এ বিষয়ে কোনো সম্মতি পাওয়া গেছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

চুরির অর্থ যাঁদের অ্যাকাউন্টে গেছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা, অর্থ উত্তোলন ও অন্যত্র সরবরাহে জড়িতদের প্রতিনিয়ত শুনানিতে ডাকছে ফিলিপাইনের সিনেট কমিটি। অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য তাঁদের চাপ দিচ্ছে। অর্থপাচার আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। ফিলিপাইনের মুদ্রা পাচারবিরোধী সংস্থা এএমএলসির করা মামলায় ব্যবসায়ী কিম অং ও উইলিয়াম গোর ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছেন আদালত। আগামী ২ মে মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। ওই দিনের মধ্যে বাংলাদেশ অর্থের মালিকানা দাবি করলে দ্রুত তা ফেরত পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন ঢাকার আইনজীবীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা দাবি করছেস, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবে মামলার করার ক্ষেত্রে বেশ জটিলতা রয়েছে। হ্যাক করে রিজার্ভ চুরির বিষয়টিকে সাইবার অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে হবে। আবার ঘটনাটিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ বা চুরি হিসেবে দেখলে অন্য আইনে মামলা করতে হবে। সে কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংক মামলায় এখনই আগ্রহী নয়। তবে ‘স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি ইনিশিয়েটিভ (স্টার)’-এর আওতায় চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ দাবির সাথে একমত হতে পারছেন না অভিজ্ঞমহল।

উল্লেখ্য, গত ৪ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ চুরির ঘটনার পর মার্চের প্রথম সপ্তাহে তা জানতে পারে সরকার। এরপর ১৫ মার্চ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিভাবে ওই টাকা উদ্ধার করা যায়, সে বিষয়ে কমিটির কাছে সুপারিশ চায় সরকার। গত ২০ এপ্রিল ওই কমিটি অন্তবর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেতে আরো ৪৪ দিন অবশিষ্ট রয়েছে। অন্যদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনা জানার প্রায় এক মাস পর ওই অর্থ কিভাবে উদ্ধার করা যায়, তা নিয়ে গত ১২ এপ্রিল একটি আন্তসংস্থা টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার। গত ২১ এপ্রিল ওই কমিটি প্রথম সভা করেছে, যেখানে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কিভাবে অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়, কোন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে মাত্র। ফলে সরকারিভাবেও চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সার্বিক পর্যালোচনায় রিজার্ভ চুরির ঘটনায় নাটকীয়তা বেশ জমেই উঠেছে। ঘটনার শুরুতেই বলা হয়েছিল যে, চুরি যাওয়া সমুদয় অর্থ ফেরৎ আনা সম্ভব হবে। কিন্তু পরক্ষণেই বলা হয় বিভিন্ন কথা। ঘটনা তদন্তে একাধিক তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে। এ ধরনের তদন্ত কমিটি গঠনের ঘটনা আমাদের দেশে মোটেই অভিনব নয় বরং এর কোন ইতিবাচক ফল আসলে সেটাকেই অভিনব বলতে হবে। কারণ, অতীতে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ি ব্যবস্থাগ্রহণ তো দুরের কথা বরং প্রতিবেদনগুলো কখনো আলোর মুখই দেখেনি। হালে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে একথা বলা মোটেই অত্যুক্তি হবে না যে, চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারে আমাদের আন্তরিকতার অভাব ও উদাসীনতা রয়েছে। আর আন্তরিকতা না থাকলে হাজার হাজার তদন্ত কমিটি গঠন করে কোন সুফল পাওয়া যাবে না। আমাদের অতীত তো সেদিকেই অঙ্গলী নির্দেশ করে।

বিষয়: বিবিধ

১১১৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

366730
২২ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:০৪
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ভাই লেখাটি কি স্বরচিত?
খুব ভালো লিখেছেন।
366734
২২ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৪৬
সৈয়দ মাসুদ লিখেছেন : কেন ? নকল মনে হচ্ছে ?
366925
২৪ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ১২:৪৯
হতভাগা লিখেছেন : পাইছে গা , নিছে গা - বাসসসসসসসসসসসসসসস

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File