তদন্ত রিপোর্টের অতীত সুখকর নয়
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ২১ এপ্রিল, ২০১৬, ০৬:৩৬:১১ সকাল
নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে টাকা চুরির ঘটনা দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলে বহুল আলোচিত বিষয়। এ ঘটনার পর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। অর্থমন্ত্রী সাবেক এই গভর্নরকে তুলোধুনো করলেও প্রধানমন্ত্রী তাকে বেশ আনুকুল্যই দিয়েছেন। তিনি ড. আতিউরের পদত্যাগকে সততা ও নিষ্ঠার অনন্য দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাকার রক্ষা করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন সচেতন মানুষ।
রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অশুভ চর্চাটাও কম হয়নি। কোন প্রকার তথ্য-উপাত্ত ও তদন্ত ছাড়াই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলো পরস্পরকে রীতিমত দোষারোপ করেছে। এমন কী খোদ অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী পুত্র ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পদত্যাগী গভর্নরের প্রতিও সন্দেহের তীর নিক্ষেপ করা হয়েছে। আর সরকারি দলের একজন শীর্ষ নেতা তো বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে এ জন্য দায়ি করে বসেছেন। তার এ বক্তব্যের মাত্র একদিন পরই তিনি এ বিষয়ে নতুন তথ্য দিয়ে রীতিমত লোক হাসালেন। তিনি দাবি করলেন, অর্থ চুরির সাথে বিএনপি-জামায়াত জড়িত।
সম্প্রতি রিজার্ভ চুরি তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, এই জঘন্য চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত। এমনকি ঘটনার সাথে কমপক্ষে ২০ জন বিদেশীর সম্পৃক্ততা তারা নাকি খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু দেশের মানুষ এখন কার কথার উপর বিশ্বাস বা আস্থা রাখবেন, তা রীতিমত রহস্যাবৃত। একই বিষয়ে এ ধরনের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য মোটেই কাম্য নয়। আর জাতীয় স্বার্থে জনগণকে বিভ্রান্ত করাও উচিত বলে মনে হয় না।
এ ঘটনার পর রহস্য উদঘাটনে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে বেশ তৎপর বলেই মনে হচ্ছে। এদিকে রিজার্ভ চুরির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে অন্তবর্তীকালীন রিপোর্ট জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। গত ২০ এপ্রিল সন্ধ্যায় সচিবালয়ে কমিটির প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন অন্তবর্তীকালীন প্রতিবেদনটি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাতে তুলে দেন। প্রসঙ্গত, নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরির ঘটনায় সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
আমাদের দেশে কোন অঘটন ঘটার সাথে সাথেই সরকার ও সংশ্লিষ্ট বেশ তৎপর হতে দেখা যায়। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে একের পর এক তদন্ত কমিটি গঠন হতেও দেখেছি। অতিতৎপরতার সাথে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত এবং তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়ার রেকর্ডও রয়েছে আমাদের দেশে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়টা হলো চাঞ্চল্যকর এসব ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন কখনোই আলোর মুখ দেখে না। ফলে ঘটনার রহস্য রহস্যই থেকে যায়।
এর আগে শেয়ার কেলেঙ্কারীসহ বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা হলেও কোনটিই আলোর মূখ দেখেনি। কাগজের কথা কাগজেই থেকে গেছে, তা কোন ভাবেই জনগণের জন্য পঠনযোগ্য হয়নি। তাই রিজার্ভ চুরির বিষয়ে দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে সচেতন মানুষের সন্দেহ-সংশয়টা বেশ ঘনিভূতই হচ্ছে। কারণ, আমাদের দেশের তদন্ত রিপোর্টের অতীতটা মোটেই সুখস্মৃতি বহন করে না। হয়তো অতীতের অনেক ঘটনার মত এ ঘটনাটাও কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে। উদ্ধার হবে না জনগণের চুরি যাওয়া কষ্টার্জিত অর্থ। আর সাধুকে তো সাবধান করা যেতেই পারে।
বিষয়: বিবিধ
৯৫২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ওরে বাবা ! যাদের নাম এসেছিল সেখানে তাদের নাম প্রকাশ পেলে দেশে সমস্যা লেগে যেত !
তদন্ত কমিটি গঠন করাই হয় বিষয়টিকে ধামা চাপা দেওয়া নিশ্চিত করতে ।
৪০০০ কোটি টাকা কোন ব্যাপারই না , ৮০০০০ কোটি টাকা সামান্য টাকা । আর আমরা বাংলাদেশীরা কতটা অকৃতজ্ঞ !! এই সামান্য ক'টা টাকার জন্য এত হাউ কাউ করি !!
পাইছে গা , নিছে গা - বাসসসসসসসসসসসসসসস ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন