অভিযোগ প্রমাণের পর সাময়িক বরখাস্ত কেন ?
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ২০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০৪:০৭ রাত
সাধারণত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে এবং তিনি চাকুরীজীবী হলে, তাকে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার রেওয়াজ রয়েছে। মূলত যতদিন পর্যন্ত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হয় বা অভিযোগ থেকে দায়িমুক্তি দেয়া না হয় ততদিন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত ব্যক্তি চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত থাকেন। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণ হলে তাকে চুড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়। আর প্রমাণিত না হলে তার সাময়িক বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। চাকুরীবিধির স্বীকৃত ও প্রচলিত নিয়ম এটিই।
মূলত ‘দুষ্টের দমন আর শিষ্টের লালন’এর দায়িত রাষ্ট্রের। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের উদাসীনতার কারণেই মানুষ রাষ্ট্রের কল্যাণ থেকে অনেকটাই বঞ্চিত। অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়া আমাদের দেশের রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আর যদি অপরাধীরা ক্ষমতাসীনদের অনুকুল্য পায় তাহলে তো কোন কথায় নেই। এ কারণেই আমাদের দেশে অপরাধ প্রবণতাটা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। অপরাধ যদি বহুল আলোচিত হয়, তখন জনগণের আইওয়াসের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু তা বেশীদিন স্থায়ী হয় না। এক সময়ে তাকে ক্ষমতাসীনদের আনুকুল্যে দায়মুক্তি দেয়া হয়।
আমাদের অবক্ষয়টা বোধ হয় একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সম্প্রতি সরকারি অবকাঠামো নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে। ঘটনার সূত্রপাত দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় হলেও এখন তা সর্বব্যাপী হয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেই এ ধরনের অভিনব খবর পাওয়া যাচ্ছে। জানা গেছে, গাইবান্ধা সদর উপজেলার মেঘডুমুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের ঘটনায় দুদকের হাতে আটক উপ-সহকারী প্রকৌশলী এএসএম আরিফ বিল্লাহ সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ঢাকার প্রধান প্রকৌশলী ওয়ালী উল্লাহ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত পত্র ১৮ এপ্রিল বিকেলে গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য অফিসে এসে পৌঁছায়। এ ঘটনায় নলকুপ মেকানিক সাইফুল ইসলামকেও সাময়িক বরখাস্তের পত্র রংপুর অফিস থেকে গাইবান্ধা অফিসে পৌঁছেছে। গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী পত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করেন।
উল্লেখ্য, গাইবান্ধার মেঘডুমুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণে ঢালাইয়ের কাজে লোহার রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের ঘটনাটি গত ৮ এপ্রিল রাতে স্থানীয়রা ধরে ফেলেন। পরবর্তীতে এ ঘটনায় দুদক গত ১৩ এপ্রিল উপ-সহকারি প্রকৌশলী এএসএম আরেফ বিল্লাহ এবং ঠিকাদার আব্দুল খালেককে আটক করে।
মজার ব্যাপার হলো সরকারি নির্মাণকাজে রডের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহারটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিষয়টি রীতিমত রহস্যজনক। কারণ, অভিযোগ তো পুরোপুরি প্রমাণিত হয়েছে। তাই অভিযুক্তকে চাকুরী থেকে চুড়ান্ত বহিস্কার করাটাই অধিক যৌক্তিক। তাই বিষয়টি দেশের সচেতন মানুষ আইওয়াস হিসাবেই দেখছে। আর এ বিষয়ে অতীত ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় কি-না তা নিয়েও জনমনে সন্দেহ-সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আর এর শেষ কোথায় তা সময়ই বলে দেবে।
বিষয়: বিবিধ
৯৩০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন