পশ্চিমী বিশ্বে মুসলিম বিদ্বেষ
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১৯ এপ্রিল, ২০১৬, ০৮:২৯:১৬ সকাল
মূলত ৯/১১ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্র টুইন টাওয়ার ধবংসের পর পশ্চিমী বিশ্বে মুসলিম বিদ্বেষ বেশ দানা বেধে ওঠে। এ ঘটনার পর থেকে বিশেষ করে মার্কিন মুলুকে মুসলমানদের নানা প্রতিকুলতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। তারা বিভিন্নভাবেই হয়রানী ও নানাবিধ বৈরিতার শিকার হন। প্রতিনিয়তই মুসলমানদেরকে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় করেই জীবনযাপন করতে হয়েছে।
মনে হয়েছিল হয়তো তাদেরকে সেখান থেকে বিতাড়িত হতে হবে। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও সময়ের প্রয়োজনে পরিস্থিতিটা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। মুসলামানরা তাদের কর্মক্ষেত্রে যোগ্যতা, মেধা ও সততার সাক্ষর রাখেন এবং চরমপন্থার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই একথা প্রমাণ করতেও অনেকটাই সফল হন। ফলে পশ্চিমী বিশ্বে মুসলিম বিদ্বেষটা কিছুটা হলেও সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে।
মুসলমানদের জন্য এমন অনুকুল পরিবেশেটা বেশি দিন স্থায়ী হতে পারেনি। কারণ, পশ্চিমী বিশ্বে একের পর এক উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী হামলা। মূলত যখনই কোন উগ্রবাদী হামলার ঘটনা ঘটে, তখনই কোন প্রকার তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই এজন্য মুসলমানদের দায়ি করা হয়। একশ্রেণির মিডিয়াও বোধহয় এজন্য প্রস্তুতই থাকে। এসব মিডিয়া ইনিয়ে-বিনিয়ে উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী ঘটনার সকল দায়ভার মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেয়। এতে মুসলিম বিদ্বেষটা দ্রুত ছড়িয়ে পরে। এক সময় তা অনেকটাই অপ্রতিরোধ্যই হয়ে ওঠে।
গত বছর প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার পর পশ্চিমী বিশ্বে মুসলিম বিদ্বেষটা নতুন মাত্রা পায়। সে ধারাবাহিকতায় ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অনেক মসজিদে অগ্নিসংযোগের মত ঘৃণ্য ঘটনাও ঘটে। হিজাবধারী মহিলা ও ইসলামী আখলাক-সুরতের মানুষেরা নানাভাবে হয়রানী ও হামলার শিকার হন। মূলত প্যারিস ট্রজেডির পর জ্বালানো আগুনে রীতিমত ঘি ঢেলে দেয়া হয়। আর সে ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত আছে। ফলে পশ্চিমী মুসলিম বিদ্বেষটা এখন অনেকটাই অপ্রতিরোধ্য।
অতিসম্প্রতি মুসলিম বিদ্বেষের ঘটনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, আগের দিন খায়রুলদিন মাকজুমি এক অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতিসংঘ মহাসচিবকে প্রশ্ন করেছেন। আর তারপরের দিনই তাকে সাউথ ওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের বিমান থেকে নামিয়ে এফবিআই এর জেরার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬ বছর বয়সী মুসলিম ছাত্র মাকজুমি এই ঘটনায় রীতিমত বিম্মিত হয়েছেন। এতে স্পষ্টই প্রমাণিত হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম বিদ্বেষ অপমানজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঘটছে নানা অবমাননাকর ঘটনা। যা কাঙ্খিত নয়।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, এই ঘটনাটি আমেরিকার সাউথ ওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের। মাকজুমি লস এঞ্জেলস থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ডে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিমানে আরোহণ করেন। বিমান উড্ডয়নে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় তিনি ফোনে বাগদাদে বসবাসরত তার চাচার সাথে কথা বলছিলেন।
মাকজুমি আরব বংশোদ্ভূত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে তিনি আরবিতে কথা বলছিলেন। আগের দিন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সাথে একটি ডিনার পার্টিতে অংশ নেয়ার কথা তার চাচাকে বলার সময় তিনি কিছুটা উত্তেজিত ও উচ্ছ্বসিতভাবে কথা বলছিলেন।
মাকজুমি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, ‘আমি তার সাথে ওই অনুষ্ঠান নিয়ে কথা বলছিলাম। তিনি আমাকে বলেন অকল্যান্ডে নেমে ফোন দিতে। জবাবে আমি বলি ‘ইনশাআল্লাহ’, আমি ফোন করবো। এসময় এক নারী আমার দিকে বারবার আড় চোখে তাকাচ্ছিল। আমি ভাবলাম হয়তো আমি উচ্চ শব্দে কথা বলছি তাই সে এভাবে দেখছে’। মাকজুমি ওই নারীকে দ্রুত বিমান থেকে নেমে যেতে দেখেন এবং মাত্র ২ মিনিটের মাথায় এফবিআই এসে তাকে বিমান থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়।
বিমান থেকে নামিয়ে এয়ারপোর্টের পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে মাকজুমি জানিয়েছেন। তাকে বারবার প্রশ্ন করা হচ্ছিল তিনি কার সাথে কথা বলেছেন এবং কি বলেছেন। প্রায় দুই ঘণ্টা জেরা করার পর মাকজুমিকে ছেড়ে দেয় এফবিআই। কিন্তু মাকজুমি ওই ফ্লাইটটি মিস করেন। এখন তিনি ওই এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার দাবি করেছেন। প্রসঙ্গত, সাউথ ওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে আরো মুসলিম যাত্রীদের নামিয়ে দেয়ার বা হেনস্তা করার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। ফলে মুসলিম বিদ্বেষটা এখন সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে।
মূলত পশ্চিমী বিশ্বে এখন মুসলমানরা সীমাহীন নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন। বিশেষ করে ইসলামী পোষাক ও নারীদের হিজাব এখন একশ্রেণির লোকের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। ফলে মুসলমানরা এখন প্রতিনিয়ত নানাবিধ হয়রানি ও হামলার শিকার হচ্ছেন। এসব ঘটনা এখন নিত্যদিনের। প্রাপ্ত তথ্যমতে, পাশের যাত্রীকে নিয়ে অস্বস্তি বোধ করায় বিমানে নিজের আসন বদলানোর অনুরোধ করেছিলেন মাত্র। আর এতেই তাকে বিমান থেকে নেমে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। আসলে এমনটা কখনো ভাবতেই পারেননি হাকিমা আব্দুল্লাহ। কিন্তু তেমনটিই হয়েছে বলে দাবি করেছেন এই হিজাবী মহিলা।
জানা গেছে, মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা হাকিমা। গত ১৩ এপ্রিল সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের বিমানে শিকাগো থেকে সিয়াটল যাওয়ার কথা ছিল তার। হাকিমা জানান, ওই দিন সব স্বাভাবিকই ছিল। নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে বিমানেও ওঠেন তিনি। তবে পাশের আসনে বসা ব্যক্তির আচরণে তার অস্বস্তি হতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তিনি বিমানবালাকে ডেকে অনুরোধ করেন, যাতে তাকে অন্য কোনো আসনে বসার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। কিন্তু এতে কোন সুফল পান নি তিনি।
হাকিমা আব্দুল্লাহ জানাচ্ছেন, এর পরেই তাকে বিমান থেকে নেমে আসতে বলা হয়। কেন তাকে নেমে আসতে হচ্ছে তা বারবার জিজ্ঞাসা করলেও বিমানসংস্থার কর্মীরা তার কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। এর পর তাকে টার্মিনালে বসিয়ে রেখে বিমান চলে যায় গন্তব্যে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত নিরাপত্তাকর্মীরাও জিজ্ঞাসা করেন বিমান থেকে ওই মহিলাকে কেন নামিয়ে দেয়া হয়েছে। তাতে সংস্থার কর্মীরা জানান, বিমানে ওই মহিলার অস্বস্তি হচ্ছিল। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও অপমানিত হাকিমার প্রশ্ন, পরনে হিজাব থাকায় ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বলেই কি তার সঙ্গে এমন আচরণ করেছেন ওই বিমানকর্মীরা ? আসলে বিমান কর্তৃপক্ষের বক্তব্যকে শুধুই অজুহাত হিসাবেই মনে করছেন সচেতন মানুষ।
এ দিনের ঘটনা নিয়ে বিমানসংস্থার কোনো যুক্তি মানতে নারাজ কাউন্সিল অব আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স। কাউন্সিলের এক অফিসারও বলেন, হাকিমাকে অযথা হেনস্থা করেছে বিমানসংস্থা। ঘটনার প্রতিবাদে সরব হন হাকিমার স্বামীও। তবে নিজেরা কোন ভুল করেন নি বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন সাউথওয়েস্ট বিমানসংস্থার মুখপাত্র ব্যান্ডি কিংগ। তিনি বলেন, ওই ঘটনা নিয়ে যেটুকু তথ্য পেয়েছি, তাতে নিয়মকানুন মানতেই ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে।
মূলত পশ্চিমী বিশ্বে এখন মুসলিম বিদ্বেষ এখন সকল সময়ের চেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিষয়টি আরও নতুন মাত্রা পেয়েছে। নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্যকেও এজন্য দায়ি করছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ মহল। সার্বিক দিক বিবেচনায় পশ্চিমী বিশ্বের মুসলমানদের এখন ক্রান্তিকাল চলছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের সহসাই কোন রাস্তা দেখছেন না অভিজ্ঞমহল। বিষয় রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষকে।
বিষয়: বিবিধ
৯৮৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর আমেরিকাতে তো আমাদের এক ডাকসাইটে ব্লগার (দ্যা স্লেভ) বেশ ভালই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন । উনি বেশ ভালই আছেন বলে মনে হয় । আমেরিকা যদি তাকে কোন প্যারা দিত তাহলে বেড়ানোর গল্প না করে প্যারানোর গল্প বলতেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন