ডাল মে কুচ কালা হ্যায় !
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১৮ এপ্রিল, ২০১৬, ০৭:৪১:৩২ সন্ধ্যা
আমাদের দেশে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মনে হয় অনিয়মটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রের কোন সেক্টরই নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলছে বলে মনে হয় না। সর্বত্রই চলছে এক অঘোষিত অবক্ষয়ের জয়জয়কার। ক্ষেত্রবিশেষে তা অপ্রতিরোধ্যই হয়ে ওঠেছে বলতে হবে। অবশ্য একথাও অনস্বীকার্য যে, সর্বত্রই যে অনিয়ম ও অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা চলছে বলে মনে হয় না। বরং আমরা বোধ হয় অবক্ষয়ের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিচ্ছি। যাদের দায়িত্ব এসব প্রতিকার করার, রহস্যজনক কারণে তাদেরকেই নিরব মনে হচ্ছে। যাদের হাতে এসব প্রতিরোধের ক্ষমতা নেই, তাদের আহাজারিটা শুধুই নিষ্ফল। সহসাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন সম্ভবনাও দেখা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটেছে। আর এর প্রতিক্রিয়াটাও ‘যথা পূর্বং তথা পরং’ তথা একেবারেই গতানুগতিক। আমাদের দেশে কোন অঘটনা ঘটনা ঘটার পর কিছু গলাবাজকে রীতিমত গলাবাজী করতে শোনা যায়। মনে হয় নিশেষেই কিছু একটা করে ফেলবেন তারা। কিন্তু পরক্ষণেই তা ফুটা বেলুনের মত চুপসে যেতে শুরু করে। এর আগে দেশের শেয়ার মার্কেট, হলামার্ক, বেসিক ব্যাংক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও ডেসটিনি কেলেঙ্কারীর ক্ষেত্রে এমনটিই ঘটেছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি বরং তা রীতিমত হম্বি-তম্বির মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি নিয়ে বেশ নাটকীয়তায় সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দোষারোপের ঘটনাও কম হয়নি। আর তা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। প্রথমে চুরি যাওয়া টাকা সমুদয় উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে প্রচার করা হলেও তা বেশী দিন স্থায়ী হয়নি। পরে বলা হলো সম্ভবনাটা কম। এখন যদিও বলা হচ্ছে টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যে একথার উপর স্থির থাকতে পারবে, তার কোন গ্যারান্টি আছে বলে মনে হয় না। কারণ, ঘটনাটি এখন ভিন্নরূপ নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।
ঘটনার শুরুতেই দায়িত্বশীলদের টাকা উদ্ধারের উপর অধিক গুরুত্ব দিতে দেখা গেলেও এখন পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে। এখন চুরি যাওয়া জিনিষের পরিবর্তে চোর ধরায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। সম্প্রতি প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছেন বলে জানিয়েছে, মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা সিআইডির অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো. শাহ আলম। এছাড়া এ তদন্তে ২০ বিদেশিকে সনাক্ত করছে সিআইডি। এদের অধিকাংশই শ্রীলংকা ও ফিলিপাইনের নাগরিক। ১৮ এপ্রিল মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা সিআইডির অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো. শাহ আলম এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
মজার ব্যাপার হলো চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কথা বলা হলেও এদের কারো নাম প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি যে ২০ জন বিদেশী নাগরিকের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা বলা হচ্ছে এদের নামও উল্লেখ করা হয়নি। ফলে অশরীরি ও বায়বাবীয় অপরাধীদের পেছনে সময় নষ্ট করে টাকা উদ্ধারের মূল কাজটি ব্যাহত হয় কী-না এ নিয়ে জনমনে সন্দেহ-সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আর যত কথায় বলা হোক না কেন ঘটনার সাথে যে রাঘব-বোয়ালরা জড়িত এতে কোন সন্দেহের অবকাশ আছে বলে মনে হয় না। তাইতো কৌতুহলীরা বলছেন, ‘ ডাল মে কুঁচ কালা হ্যায়’। আর এটাই বোধহয় রূঢ় বাস্তবতা!
বিষয়: বিবিধ
৯১৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন