জ্বালানি তেলের দাম যৌক্তিক হওয়া দরকার
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১৮ এপ্রিল, ২০১৬, ০২:২৭:২২ দুপুর
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে যখন বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়, তখন বিশ্ব বাজারে ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ১১০ ডলার। গত দেড় বছরে এই দর কমতে কমতে ২৬ ডলারে এসে ঠেকেছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কমলেও অভ্যন্তরীণ বাজারে যৌক্তিক হারে এর দাম কমেনি, বরং বেড়েছে । আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নামলেও স্থানীয় বাজারে একেবারেই কমেনি । সরকার ইচ্ছা করেই তেলের উচ্চমূল্য ধরে রেখেছে। যার কোন যৌক্তিকতা আছে বলে মনে হয় না।
মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অব্যাহতভাবে কমলেও এর সুফল পাচ্ছেন না দেশের ভোক্তারা । অবশ্য জ্বালানি তেলে দেওয়া সরকারের ভর্তুকি নেমে এসেছে একেবারে শূন্যে। উল্টো সরকার এখন তেল বিক্রি করে মোটা অঙ্কের মুনাফা করছে। এদিকে তেলের উৎপাদন সীমিত করতে কাতারের দোহায় বৈঠকে বসার কথা আন্তর্জাতিক তেল রপ্তানিকারকদের সংগঠন ওপেক ও এর বাইরের উত্তোলক দেশগুলোর । কিন্তু বৈঠকে সত্যিকারে তেল উৎপাদন কমবে কি না বা এর প্রভাব পুরোপুরি ইতিবাচক হবে কি না তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি এজেন্সি (আইইএ)।
সংস্থাটির এপ্রিল মাসের মাসিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তেলের সরবরাহ কমানোর চেয়ে উৎপাদক দেশগুলো যদি উৎপাদন সীমিত করার বিষয়ে একমতে পৌঁছে, তবে সরবরাহের ওপর তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। আর এমনটি হলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দর খুব শিগগির বাড়বে না। ৫০ ডলারের মধ্যেই ঘুরপাক খেতে পারে। এর আগেও সৌদি আরব, রাশিয়া ও কাতার তেলের উৎপাদন সীমিত করার ব্যাপারে একমতে পৌঁছে। কিন্তু তার প্রভাব বাজারে লক্ষ্য করা যায়নি। বাজার পড়ছিল তো পড়ছিলই।
তেলসমৃদ্ধ সৌদি আবর ও রাশিয়ার কথা উল্লেখ করে আইইএ বলেছেন, দেশটিতে রেকর্ড পরিমাণ তেল রয়েছে। তাছাড়া ইরানও তেলের উৎপাদন কমাবে না বলে জানিয়েছে। দেশটি বলেছে, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে তা না উঠানো পর্যন্ত তারা উৎপাদন বাড়াবে। সুতরাং দোহার এই বৈঠক খুব একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে না আইইএ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘দরপতনের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে বাজারে তেলের অতিরিক্ত সরবরাহ। এই মুহূর্তে বাজারে তেলের প্রচুর যোগান রয়েছে। আমেরিকার শেল অয়েলের উৎপাদন বৃদ্ধি যেমন এর একটি কারণ আবার সৌদি আরবসহ ওপেকভুক্ত দেশগুলো উৎপাদন কমায়নি’।
উল্লেখ্য, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে কমানোর পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। একই সঙ্গে তারা টাকার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের সমন্বয় করতে বলেছিলেন। বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হয় না। সম্প্রতি লিটার প্রতি জ্বালানি তেলের দাম ১০ টাকা কমানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তা মোটেই বাস্তবসম্মত নয়।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপকভাবে কমলেও এ থেকে সুবিধা নিতে পারছেন না বাংলাদেশের ভোক্তরা। মূলত সরকারের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর কারণেই জ্বালানি তেলের দাম এখনও স্থিতিশীল রয়েছে। ফলে জনমনে নানা ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অবিলম্বেই জ্বালানি তেলের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে নেমে আনা উচিত। দেশের মানুষ সরকারের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে।
বিষয়: বিবিধ
৮২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন