নিজেদের চেহারাও তো আয়নায় দেখ নেয়া দরকার
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১৭ এপ্রিল, ২০১৬, ০৩:৪০:০০ দুপুর
বাংলাদেশে অব্যাহত বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও মানবাধিকার লংঘন নিয়ে দেশীয় আন্তর্জাতিক মহল বেশ সোচ্চার। বিশেষ করে কথিত এনকাউন্টারের নামে যেভাবে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড যেভাবে চলছে, তাতে মনে হয় না যে, আমরা কোন সভ্য সমাজের মানুষ। কেউ কোন অপরাধে জড়িয়ে পরতেই পারে। তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য বিধিসম্মত পন্থাও রয়েছে। রয়েছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচারবিভাগ। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে তা মানা হচ্ছে বলে মন হয় না। পুলিশ বা আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনীর পরিচয়ে মানুষ তুলে নিয়ে যাওয়া হচেছ। পরে তার গুলীবিদ্ধ লাশ পাওয়া যাচ্ছে পরিত্যাক্ত অবস্থায়। এনকাউন্টারের গল্প ফাঁদানো হলেও জনমনে তা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। এসবকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড হিসাবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। যা আমাদের জন্য কোন শুভ আলামত নয়।
এদিকে বিষয়গুলো নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বেশ সোচ্চারই মনে হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অব্যাহত বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিন্তু সরকার বিষয়টি আদ্যপান্ত খতিয়ে না দেখে তার তীব্র সমালোচনা করেছে। এ নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীদেরকে তীর্যক মন্তব্য করতেও দেখা গেছে। বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। ১৫ এপ্রিল রাজধানীর ধানমন্ডির নিজ বাসায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
অপরদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশ, কিছু ভাড়াটিয়া সংগঠনকে অনুরোধ করবো, আয়নায় নিজেদের চেহারা আগে দেখুন। নিজেদের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলুন, তারপর অন্য দেশ নিয়ে রিপোর্ট দিন। কারণ বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ের মত স্কুলে শুটিং করে শিক্ষার্থী হত্যা করা হয় না। ’বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের (একাংশ) মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় শুক্রবার দুপুরে তিনি এসব কথা বলেন।
হাসান মাহমুদ বলেন, ‘নিজেদের দেশের রিপোর্ট প্রকাশ করুন। আর রাজনীতির জন্য মানুষ পুড়িয়ে মারা মানবাধিকার লঙ্ঘন না? রিপোর্টে সেটি বলেন না কেন? দয়া করে রাজনৈতিক রিপোর্ট দিবেন না। তিনি বলেন, ‘চীন যখন অর্থনৈতিক নেতৃত্ব অর্জন করেছে তখন তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হচ্ছে। তেমনি বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। যে দেশগুলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তারাই এখন আমাদের অবদমিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।
সরকারের আলোচনা-সমালোচনা কোন গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য মোটেই নেতিবাচক নয় বরং গঠনমূলত সমালোচনা সরকারকে আগামী দিনের জন্য দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। সমালোচনাটা দেশীয় বা আন্তর্জাতিক যেটাই হোক না কেন, তা খতিয়ে দেখায় হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু কোন সমালোচনাকেই তুরি মেরে উড়িয়ে দেয়ার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই বরং তা নৈতিকভিত্তিটাকে একেবারে দুর্বল করে ফেলে। কথায় কথায় সমালোচকদের একহাত নেয়াও কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের অভিযোগ উঠেছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে, তা নিয়ে সরকারকে অবশ্যই ভেবে দেখার সুযোগ রয়েছে। এতে কোন দোষের ও অমর্যাদার কিছু দেখা যায় না বরং অন্যদেরকে আয়নার চেহারা দেখার নসিহত করার আগে নিজেদের চেহারাটাও তো দেখে নেয়া যেতে পারে।
বিষয়: বিবিধ
৮৪১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন