ওলট-পালট করে দে মা লুটে-পুটে খাই
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১১ এপ্রিল, ২০১৬, ১০:৫৫:৩২ রাত
আমাদের সমাজে একটি বহুল প্রচলিত কথা হলো ‘ ওলট-পালট করে দে মা, লুটে-পুটে খাই’। মূলত দুর্নীতি আর অনিয়ম যখন একেবারে লাগাম ছাড়া হয়ে যায়, তখনই একথার সার্থক ব্যবহার করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছি, তাতে মনে হয় না যে, বহুল প্রচলিত কথা দিয়ে তার ভয়াবহতা নির্ণয় করা যাবে। যেহেতু এর চেয়ে কঠিন কথা আপাতত আমার স্মৃতিতে আসছে না, তাই ‘চর্বিত-চর্বন’ ই করতে হলো। এছাড়া উপায় আর কী আছে ?
আমাদের অবক্ষয়টা একেবারে প্রান্তসীমায় এসে পৌঁছেছে। নীচে নামতে নামতে আমরা বোধহয় একেবারে তলানিতে এসে পৌঁছেছে। আর নীচে নামার কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। রাষ্ট্রের সকল সেক্টরেই অবক্ষয়টা অপ্রতিরোধ হয়ে উঠেছে। কোন ভাবেই তা থামানো সম্ভব হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণ যাদের দায়িত্ব তাদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণেই এই বিষবৃক্ষের বিনাশ সাধন করা সম্ভব হচ্ছে না বরং তা আরও পত্র-পল্লবে পল্লবিত হচ্ছে। দুর্নীতি আর অনিয়ম পৌঁছে গেছে আমাদের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে। মূলত দুর্নীতই এখন সুনীতির রূপ পরিগ্রহ করেছে।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি নির্মাণ কাজে রডের পরিবর্তে বাঁশের ফালি ব্যবহারের এক অভিনব অনিয়মের সংবাদ পাওয়া গেছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা দর্শণাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এর আগে সরকারি নির্মাণ কাজে নি¤œমানের রড ও সিমেন্ট এবং সিমেন্টের পরিমাণ কম দেয়ার অভিযোগ ছিল। কিন্তু লৌহজাত দ্রব্যের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের খবর একেবারেই অভিনব বলতে হবে। কিন্তু বাস্তবে তা-ই ঘটেছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, দর্শনায় স্বাস্থ্য বিভাগের ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহারের সত্যতা পাওয়া গেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান গত ১০ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্মাণাধীন ওই ভবনের ঢালাইয়ে রড না দিয়ে বাঁশের ফালি এবং খোয়ার পরিবর্তে পরিত্যক্ত সুরকিসহ নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি ফরোয়ার্ডিংসহ খুলনা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
অধিদপ্তরের ফাইটো স্যানিটারি ক্যাপাসিটি শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকায় ভবনটি নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার ফার্মগেটের জয় ইন্টারন্যাশনাল। ইতিমধ্যে ভবনটির প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ এপ্রিল বিকালে জানা যায় ভবনের গুরুত্বপূর্ণ ঢালাইকাজে রডের বদলে বাঁশের ফালি এবং খোয়ার বদলে সুরকি ব্যবহার করা হয়েছে। এ সময় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে গাঁ ঢাকা দেন প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক ও শ্রমিকরা। পরদিন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আসলে সারা দেশেই খাঁই খাঁই পার্টির উপদ্রপ আশঙ্কাজনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি অর্থে নির্মিত ভবনে রডের পরিবর্তে বাঁশের ফালির ব্যবহার করে ভঙ্গুর অবকাঠামো নির্মাণ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এখানেই শেষ নয়। সম্প্রতি সরকারি নির্মাণকাজে সিমেন্টের পরিবর্তে মাটির ব্যবহারের খবর পাওয়া গেছে। ফলে এসব অবকাঠামো স্বাভাবিকভাবে অতিশয় দুর্বল হবে এবং যেকোন মহুর্তে তা ধ্বসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে। এতে স্বাভাবিকভাবে প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটবে। কিন্তু এসব মানুষরূপী অমানুষদের সেদিকে খেয়াল করার সুযোগ নেই। যেকোনভাবেই তাদের হাতে অর্থ আসলেই হলো। আসলে রাষ্ট্রের নির্লিপ্ততার কারণেই এসব নরপশুরা রীতিমত বেপরোয়া। তাইতো খেদোক্তি করে বলতেই হয়, ‘ ওলট-পালট করে দে মা, লুটে-পুটে খাই’।
বিষয়: বিবিধ
১০১৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন