টাকশাল দিয়ে আর কী হবে ?

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৭ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:৪৯:৫৪ দুপুর



সম্প্রতি গণমাধ্যমে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবরটি বেশ গুরুত্ব দেয়ার মত। প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড বা টাকশালের এমডি হিসাবে একজন বিতর্কিত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সারাদেশেই আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। ঝড়ের গতি বেশ প্রবল হলেও এ ঘটনাকে তো অভিনব মনে করার কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। দেশের রিজার্ভের টাকা চুরি হচ্ছে, সরকার জনগণের কষ্টার্জিত টাকার কোন বিহীত করতে পারলো না। এমন দায়ি ব্যক্তি ও নেপথ্যের কুশীলবদেরও সনাক্ত করা গেল না। দেশের শেয়ারমার্কেট থেকে লক্ষাধিক কোটি টাকার সাগর চুরির ঘটনা ঘটলো। কিন্তু বর্ষীয়ান অর্থমন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের ফটকাবাজ বলে গাল-মন্দ করে নিজের দায়িত্বটা শেষ করলেন।

চার হাজার কোটি টাকার হলমার্ক কেলেঙ্কারীর ঘটনা ঘটলো। অর্থমন্ত্রী একে অনর্থক ঘটনা বলে আখ্যা দিলেন। বেসিক ব্যাংক, বিসমিল্লাহ গ্রæপ ও ডেসটিনি লোপাট হয়ে গেল। জনতা ব্যাংকের এফডিআর জালিয়াতির ঘটনা ঘটলো, কিন্তু মহাকরিৎকমারা কারো কেশ্রাগ্র স্পর্শ করতে পারলেন না। এখন টাকশালের এমডি পদে বিতর্কিত ব্যক্তিকে নিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে বেশ সমালোচনা শুরু হয়েছে। গোটা টাকশালই যদি চুরি হয়ে যায়, তাহলেও কিছু করার আছে বলে মনে হয় না। সেখানে একজন ব্যক্তির নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা কিছুটা হলেও হাস্যকর বৈ-কী !

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরটা যখন পড়ছিলাম, তখন একটা দুর্ঘটনার কথা আমার মনে পড়ে গেল। গাড়ী চাপায় একজন লোকের পথিমধ্যে মৃত্যু হলে কৌতুহলী জনতা বেশ ভীড় জমিয়েছিল। গাড়ী চাপায় মৃতদেশের বড় অংশই থেতলে গেছে। মাথার পেছনের অংশও থেতলে একেবারে মাথার মগজ বের হয়ে গেছে। একজন মধ্যবসয়ী দর্শনার্থী চিৎকরে বলতে থাকলো, ‘ যাহোক চোখদুটো তো বেঁচেছে’! একথা বলেই তার চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি। কিন্তু সে একবারও ভাবেনি যে, হতভাগা পথচারীর প্রাণপ্রদীপটাই নিভে গেছে। যখন প্রাণস্পন্দনটাই নাই, তখন চোখ দিয়ে আর কী হবে? এ উপলব্ধি শক্তিটাও বোধ হয় তার ছিল না।

প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, টাকা ছাপানোর স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান দ্যা সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বাংলাদেশ বা টাকশালের এমডি হিসেবে বিতর্কিত এক কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু অর্থমন্ত্রণালয় এ প্রস্তাবকে ফিরিয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহি পরিচালক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। বর্তমান এমডির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এমডি পদে বিষ্ণুপদ সাহাকে নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু এক বিতর্কিত কর্মকর্তার নাম অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠায় অর্থমন্ত্রণালয়ে।

জানা গেছে, বিষ্ণুপদ সাহা ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। ২০১০ সালে পদোন্নতি পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে চার জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ডিঙ্গিয়ে বিষ্ণুপদ সাহাকে পদোন্নতি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক করেন রিজার্ভ চুরির ঘটনায় পদত্যাগ করা সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তাকে বদলী করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া অফিসে। এখন তিনি নির্বাহী পরিচালক হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া অফিসে।

জানা গেছে, বিষ্ণুপদ সাহার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। তিনি যখন বাংলাদেশ ব্যাংকে যুগ্ম-পরিচালক ছিলেন, তখন তার বিরুদ্ধে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো (বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন) থেকে একটি চিঠির রেফারেন্স আসে বাংলাদেশ ব্যাংকে। ওই চিঠিতে বিষ্ণুপদ সাহার নামে কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ আসে। বিষ্ণুপদ তখন ব্যাংকগুলোর তদারকিতে নিয়োজিত ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-১ (ডিবিআই-১ নামে অভিহিত) এ যুগ্ম-পরিচালন ছিলেন। এ বিভাগ থেকে ব্যাংকগুলোতে নানা অনিয়ম ধরতে পরিদর্শনে যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

বিষ্ণুর বিরুদ্ধে এমনই একটি ব্যাংকে পরিদর্শনে গিয়ে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ ওঠে। যখন এ অভিযোগ আসে তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন রুমী আলী। দুর্নীতি দমন ব্যুরোর এ চিঠির প্রেক্ষিতে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বদলী করার নির্দেশ দেন রুমী আলী। তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এমনও নির্দেশ দেন, যে বিভাগে মধু নেই ওই বিভাগে তাকে বদলী করতে। রুমী আলীর নির্দেশে তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মানিটারি পলিসি বিভাগে বদলী করা হয়। পরবর্তীতে ডিজিএম করে ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পাঠানো হয়।

জানা গেছে, ঋণ ব্যবস্থাপনা বিভাগেই ডিজিএম থেকে জিএম পদে পদোন্নতি নেন তিনি। রেমিটেন্স ও বিনিয়োগ মেলা আয়োজন তহবিল নাম দিয়ে দুই দেশে যাওয়ার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বুদ্ধিও দেন তিনি। তার পরিকল্পনার আলোকে কর্মকর্তাদের ভ্রমণ খরচ বাবদ ১৬ টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে লন্ডন ও নিউইয়র্কে যাওয়ার জন্য ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জিএম বিষ্ণুপদ সাহাও বিদেশে গিয়েছিলেন। ১৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতিটির কাছ থেকে ৪ লাখ করে টাকা নেওয়া হয়। সে সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে।

মূলত রাষ্ট্রের সকল সেক্টরেই বিতর্কিত, অযোগ্য ও দলবাজ লোকদের বসানো হয়েছে। ফলে কোনভাবেই প্রলয় ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রলয় ঠেকানো যাদের দায়িত্ব, তারাই এখন প্রলয়ে ইন্ধন দিতে ব্যস্ত। তাই চলমান প্রলয় তো যেকোন মহুর্তে মহাপ্রলয়ে রূপ নিতে পারে মনে করছেন সচেতন মহল। যা আমাদের জাতীয় অস্তিত্বকেই বিপন্ন করতে পারে। তাই হতাম মানুষদেরকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘ সবই যখন গেছে, তখন টাকশাল দিয়ে আর কী হবে ’? মরা মানুষের চোখে আর দৃষ্টি ফেরানো যায় না !!!!

বিষয়: বিবিধ

১১৯২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

364926
০৭ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৮:৪৪
শেখের পোলা লিখেছেন : বাংলা দেশের যোগ্যতা নীচের দিক থেকে বিবেচণা করা হয়৷ তাই যে যত অপরাধী সে ততই যোগ্য৷ আর অমুসলীম হলে আলাদা যোগ্যতা যোগ হয়৷ মরা ছেলে নিয়ে কেঁদে আর কি করার৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File