তুমি যেমনি নাচাও তেমনি নাচি..পুতুলের কী দোষ ?
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৫ এপ্রিল, ২০১৬, ০৯:৫০:৩০ রাত
দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এখন রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। দেশে চরদখলের নির্বাচন শুরু হয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদেই। এ কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত কোন নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। খোদ নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারই ছিলেন বিতর্কের মূল কেন্দ্র বিন্দুতে।
ফলে কোন নির্বাচনই সরকারি দল ছাড়া কোন মহলেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো নির্বাচন কমিশনকে একহাত নিলেও এসব কমিশন বা কমিশনাররা গায়ে মাখাননি বরং সবকিছুই চলছে অদৃশ্য এক সুতার টানে। নির্বাচন কমিশন সরকারি দলের নেতানেত্রীদের সাথে তাল মিলিয়ে রীতিমত কোরাস গাইছেন। এতে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কবর রচিত হলেও এসব দেখার সময় কমিশনের আছে বলে মনে হয় না।
দেশে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ও শেষ হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের নির্বাচনে ভোটের আগের দিনে সিল মেরে সরকারি দলের প্রার্থীদের পক্ষে বাক্সভর্তির ঘটনাও ঘটেছে। এজন্য কমিশন সাতক্ষীরার এসপিকে কমিশনে তলবও করেছিল। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এসপি মহোদয় নাকি ঘটনার কথা অকাতরে কবুল করে নিয়ে ক্ষমা প্রার্থণা করেছেন। কিন্তু কথা হলো, জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে যারা চৌর্যবৃত্তি ও ডাকাতিতে সহযোগিতা করলেন, সে অপরাধ কী ক্ষমার অযোগ্য নয় ? অপকর্ম করে যদি ক্ষমা চাইলেই ক্ষমা পাওয়া যায়, তাহলে অপরাধ ও অপরাধ প্রবণতার লাগাম ধরবেন কী দিয়ে ? বিষয়টি কী কমিশনের ভারবার বিষয় নয় ?
এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। প্রথম ২ দফার নির্বাচনের প্রায় অর্ধশত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে সহ¯্রাধিক। ভোট ডাকাতি, সরকারি দলের প্রার্থীদের পক্ষে গণহারে সিল মারা, প্রতিপক্ষের পোলিং ্এজেন্টদের মারধর ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ব্যাপক হারে। প্রতিপক্ষের বাড়ী-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনাও ঘটেছে ব্যাপক হারে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও প্রভূত। ফলে নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীদের জয়জয়কার চলছে।
বিরোধী দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচনে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও ভোট ডাকাতির ব্যাপারে সোচ্চার হলেও নির্বাচন কমিশন তা আমলে নিচ্ছে না বরং বলছে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুন্দর হয়েছে। আর অর্ধশত লোকের প্রাণহানির বিষয়ে কমিশনের বক্তব্য হলো এসব নাকি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। যা বিবেকবান মানুষের বিবেককে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। এ ব্যাপারে সোচ্চার দেশের সচেতন মানুষ ও সুশীল সমাজ। কিন্তু কমিশন তো একেবারে ভাবলেশহীন।
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের বিবেক ও লজ্জাবোধ বলতে কিছু নেই। লজ্জা ও বিবেকবোধ থাকলে একটি দিনের জন্যও তিনি এই পদে বহাল থাকতেন না। গত ৫ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এমাজউদ্দীন বলেন, নির্বাচন ঘিরে এত মানুষ মারা গেল। কিন্তু ইসি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আশা করি, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং তারা পদত্যাগ করে অন্যদের ওপর দায়িত্ব দেবে। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনায় আজ হোক কাল হোক এ বিষয়ে মামলা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসির এসব কথা তো অরণ্যে রোদন বৈ কিছু নয়। এ ধরনের কথা বিভিন্ন মহল থেকেই বলা হয়েছে এবং হচ্ছে। বিরোধীদলগুলো তো প্রতিনিয়তই বর্তমান কমিশনের পদত্যাগ দাবি করে আসছে। কিন্তু কমিশন তো আমলেই নিচ্ছে না। আসলে নির্বাচন কমিশন অদৃশ্য এক সুতার টানেই নাচছে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। তাই হয়তো কমিশন এক সময় বলেই ফেলবে, ‘ তুমি যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!’
বিষয়: বিবিধ
১০৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন