এটা কী আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক নয় ?
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৪ এপ্রিল, ২০১৬, ০৩:০২:০৯ দুপুর
সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার, আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্যই আমরা অনেক ত্যাগ ও কোরবানীর বিনিময়ে পিন্ডির গোলামীর জিঞ্জির থেকে মুক্ত হতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু স্বাধীনতার ৪ দশক অতিক্রান্ত হলেও আমরা স্বাধীনতার সুফল পুরোপুরি ঘরে তুলতে সক্ষম হয়নি। যে অবস্থা চলছে তাতে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত আছে বলে মনে করার কোন কারণ নেই। দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবণতি হয়েছে। অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। খুন, ধর্ষণ, রাহাজানী চলছে সমান তালে। কিন্তু জনগণ এসবের কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। সব কিছুই চলতে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিতে। চলছে স্বাধীনতার নামে সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতা। নিজের অধীকারের নামে ক্ষুন্ন করা হচ্ছে অন্যের অধিকার। সর্বত্রই অধিকার বঞ্চিত মানুষের আহাজারী। এসব প্রতিকার করা বা দেখার মত কেউ নেই।
যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালে আমরা মরণপণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলাম, সে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আজ হুমকীর মুখোমুখি। জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে পারছে না। দেশের গণমাধ্যমগুলোকেও শৃঙ্খলিত করা হয়েছে। গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র অবাধ বাকস্বাধীনতা হলেও স্বাধীনতার চার দশক পড়েও গণমানুষের সে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় নি। ফলে অধিকারহারা মানুষ আর্তনাদ করলেও তা সংশ্লিষ্টমহলের কর্ণকুহরে প্রবেশ করছে বলে মনে হয় না। ফলে অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে নাগ গলানোর সুযোগ পাচ্ছে দেশের বাইরেই শক্তিগুলো। যা স্বাধীনতার মূল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক।
মূলত দেশের বাইরের পক্ষগুলো আমাদের ব্যর্থতার সুযোগ নিচেছ। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, নাগরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন এবং মানবাধিকার পরিস্থিতিসহ সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচন ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য ঢাকা এসেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলটির সফরকালে বিভিন্ন পর্যায়ে সিরিজ বৈঠকও করবেন। বাংলাদেশের আইনের শাসন, মানবাধিকার, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিসহ সার্বিক প্রেক্ষাপটে ইইউ’র প্রতিনিধি দলের এই সফরকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেবেন ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা।
তারা অভিবাসনের অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষিত নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করবে। সঙ্গত কারণেই সেখানে বাংলাদেশিদের বিষয়টি আসতে পারে। এবার বাংলাদেশের সভাপতিত্বে গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি)’র বছরব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। বছরের সমাপনীতে ঢাকায় জিএফএমডি’র শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ইইউ টিমের সঙ্গে আলোচনায় জিএফএমডি’র বিষয়টি স্থান পাবে।
প্রতিনিধি দলের সফর এবং বাংলাদেশের প্রস্তুতির বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইইউ টিমের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আয়োজনের সূচি নির্ধারিত রয়েছে। সফরকালে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর সঙ্গেও তাদের সাক্ষাৎ হতে পারে।
দ্বিপাক্ষিক বা বহুবাক্ষিক বিষয় নিয়ে বিদেশীদের সাথে আলোচনা করে সমস্যার সমাধানই কাম্য। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বাইরের শক্তির অনাকাঙ্খিত হস্তক্ষেপ কোন ভাবেই কাম্য নয়। আমাদের দেশের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা ও সকল দলের অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচনসহ যেকোন বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী ও দুরদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। ফলে আমরা একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যোগ্যতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পারছি না। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সার্থক ও জাতীয় মর্যাদা রক্ষায় এই অশুভ বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে এসে জাতীয় বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি।
বিষয়: বিবিধ
৮৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন