আইজিপির উপলব্ধি ও সত্যভাষণ
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৪ এপ্রিল, ২০১৬, ০৮:৪৩:৫৫ সকাল
মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা থাকতেই পারে। তা যে শ্রেণির মানুষই হোক না কেন। কাউকে পেশাগত কারণে যেমন অপরাধী বলার সুযোগ নেই, ঠিক তেমনিভাবে কোন বিশেষ পেশার মানুষকে একেবারে ‘দুধে ধোয়া তুলসী পাতা’ও বলা যাবে না। প্রত্যেক মানুষই ষড়রিপুর বৃত্তে আবদ্ধ। তাই রিপুর তাড়নার মানুষ অনেক কিছুই করতে পারে। যারা ষড়রিপুর উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারেন, তারাই মনুষত্বের বিকাশে সফল হন। কিন্তু যারা রিপুর গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়, তারা পশুত্বে নেমে আসে। ক্ষেত্র বিশেষে আরও নিকৃষ্ট রূপ পরিগ্রহ করে। আর তা সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যেই হতে পারে।
আমাদের দেশের মনুষের মধ্যে একটা খারাপ প্রবণতা প্রচলিত আছে। কোন বিশেষ পেশার মানুষ যদি কোন অপরাধ করে বসেন, তাহলে সে পেশাকে এমননি সে পেশার সকল মানুষকেই দায়ি করা হয়ে থাকে। যা সম্পূর্ণ অন্যায়ই বলতে হবে। ব্যক্তির অপরাধকে ব্যক্তির অপরাধ হিসাবেই গণ্য করতে হবে। কোন একজনের অপরাধের জন্য গোটা পেশাকেই দায়ি করা কোন ভাবেই সঙ্গত হতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে আমাদের সকলকেই সতর্ক থাকা উচিত।
আমাদের দেশের পুলিশ বাহিনী নিয়ে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণাটা বেশ প্রবল। আর এই প্রাবল্যের ক্ষেত্রে যৌক্তিকতাও আছে। একথা মনে রাখতে হবে যে, পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিলেই মানুষ খারাপ হয় না বা সব খারাপ লোকগুলোই পুলিশে যোগ দেয় না। তারাও আর দশজন মানুষের মতই মানুষ। কাম, ক্রোম, লোভ, মোহ, অনুরাগ-বিরাগ, মান-অভিমান সবই তাদের মধ্যেও থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা হলো পুলিশ বাহনী জনগণের জানমালের দায়িত্বে নিয়োজিত। তাই তাদের দ্বারা কোন অপরাধ প্রকাশ পেলে সেটাকে মানুষ বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কারণ, তাদের দায়িত্বই হলো অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা। তাই তাদের অপরাধকে আর দশজন মানুষের মানুষের মত স্বাভাবিক মনে করা হয় না। মূলত বিপত্তিটা সেখানেই।
তবে একথা অনস্বীকার্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ বাহিনীর রাজনৈতিক ব্যবহার ও নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনার কারণে পুলিশ বাহিনীতে অপরাধ প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে অভিযোগ আছে যে, সরকার পুলিশ বাহিনীকে দলীয় ক্যাডার হিসাবে ব্যবহার করছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের পরিবর্তে পুলিশ বাহিনীকে বিরোধী দল দমনের কাজে নামানো হয়েছে। ফলে দেশে অপরাধ ও অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে একশ্রেণির অসৎপ্রবণ পুলিশ সদস্য নানাবিধ অপরাধ প্রবণতায় জড়িয়ে পড়ছেন। আর এসব অভিযোগের যে কোন সত্যতা নেই তা বলার কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না বরং বাস্তবতার বিষয়টিও অনস্বীকার্য।
অভিযোগ আছে যে, ক্ষমতাশালীরা নিজেদেরকে সবসময় আইনের উর্দ্ধে মনে করেন। যদিও আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। কিন্তু একশ্রেণির লোক আইন ভঙ্গ করাকেই মনে হয় কৃতিত্ব মনে করতে ভালবাসেন। এমন অভিযোগ অনেকটা মেঠো পর্যায়ে থাকলেও সম্প্রতি এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের কথায় রীতিমত আত্মস্বীকৃতি মিলেছে। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাই আইন লঙ্ঘন করেন। পুলিশ ইচ্ছা করলেই সব কিছু করতে পারে না। পুলিশের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। গত ২ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন, ভুলত্রুটি পুলিশেরও আছে। পুলিশের সমালোচনা করতে হবে। পুলিশ পরিবর্তনে বিশ্বাসী। গণমাধ্যমের পরামর্শ নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে চাই।
আইজিপি মহোদয়ের বক্তব্য যেমন আমাদেরকে আশান্বিত করেছে, ঠিক তেমনিভাবে একটা হতাশার দিকও আছে তার বক্তব্যের মধ্যে। ক্ষমতাশালীরা যে, সবসময়ই স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নেন তা তার বক্তব্যের মাধ্যমে দিবালোকের মত পরিস্কার হয়ে উঠেছে। পুলিশ বাহিনী যে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে না, তাও ওঠে এসেছে তার বক্তব্যের মাধ্যমে। অনেক হতাশার মধ্যেও আইজিপি মহোদয়ের সত্য ভাষণ আমাদেরকে আশান্বিতই করেছে। কিন্তু একথাও অনস্বীকার্য যে, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদেরকে সেই অপসংস্কৃতির বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। পুলিশ বাহিনীকে সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। আর পুলিশসহ রাষ্ট্রকে সফল করে তোলার দায়িত্ব আপনার, আমার এবং সকলের।
বিষয়: বিবিধ
৭৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন