এপ্রিল ফুল ও আত্মপ্রতারণা

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৪ এপ্রিল, ২০১৬, ০৬:০২:৩৪ সকাল

বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘ এপ্রিল ফুল’ পালন করা হয়। শুধুই পালন করা হয় না বরং এ নিয়ে মহানন্দে মেতে উঠি আমরা। এমনকি বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনসহ নিকটজনদের ধোকা দিয়ে বোকা বানায় এই দিনে। এতে বেশ পুলকও বোধ করি আমরা। মূলত মুসলমানদের জন্য এ দিনটি পালন করা রীতিমত আত্মপ্রতারণার শামিল। আমরা যে বিষয়টি জানছি না, এমনটাও তো মনে করার কোন কারণ নেই।

প্রতি বছর এপ্রিল মাস আসলেই এর ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখির মাধ্যমে আমাদেরকে আত্মসচেতন করা তোলার চেষ্টা করা হয়। আমার মনে হয় ‘এপ্রিল ফুল’ এর প্রকৃত ইতিহাস জানা নেই এমন লোক সমাজে খুব কমই আছে। তারপরও আমরা কেন এই আত্মপ্রতারণায় লিপ্ত হই, তা সচেতন মানুষের কাছে বোধগম্য বলে মনে হয় না। আর এই আত্মপ্রতারণা একটি জাতি ধ্বংসের জন্য যথেষ্টও হতে পারে। যা আমরা উপলব্ধি করি না।

‘ এপ্রিল ফুল’ তথা এপ্রিলের বোকা ইতিহাসের এক মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। যেদিন খ্রীষ্টান বাহিনী হাজার হাজার মুসলমানকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। নারী, শিশু ও বৃদ্ধের আহাজারীতে স্পেনের গ্রানাডার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল। মূলত অষ্টম শতাব্দীতেই স্পেনে মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন হয়েছিল। যা চলেছিল প্রায় ৮শ বছর। শিল্প, সাহিত্যে, বাণিজ্যে ও অর্থনীতিতে স্পেন হয়েছিল অপ্রতিরোধ্য শক্তি। মুসলিম শাসকরা স্পেনে একটি শক্তিশালী প্রশাসন ও সুশাসন উপহার দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। সকলের জন্য নাগরিক সুবিধাও নিশ্চিত করা হয়েছিল। জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিতেও এক নতুন ধারা সূচিত হয়েছিল।

ফলে মুসলিম শাসনাধীনে স্পেন সকল ক্ষেত্রেই উন্নতির স্বর্ণ শিখর আরহণ করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু খ্রিষ্ট শক্তি মুসলমানদের এই কীর্তিগাথা ও অভাবনীয় সাফল্য কোন ভাবেই সহ্য করতে পারেনি। তাই নানাভারে মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। মুসলিম শাসকরাও বোধহয় ষড়যন্ত্রের এই গভীরতাটা উপলব্ধি করতে পারেন নি। ফলে যা হবার তা-ই হয়েছে। হাজার হাজার আবালবৃদ্ধবনিতার প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে প্রায়াশ্চিত্য করতে হয়েছে।

এদিকে খ্রীষ্ট শক্তি নেপথ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও শক্তি সঞ্চয় অব্যাহত রাখে। সে ধারাবাহিকতায় পর্তুগীজ রাণী ইসাবেল খ্রিষ্টান স¤্রাট ফর্ডিনান্ডকে বিয়ে করেন। ফলে মুসলিম বিরোধী শক্তি আরও জোরালো হয়। এই সম্মিলিত মুসর্লিমবিরোধী শক্তি এক সময় গ্রানাডা আক্রমণ করে বসে। মুসলমানদের সাথে খ্রীষ্ট শক্তির যুদ্ধে জয়ের ইতিহাস অতীতে কখনোই ছিল না। তাই তারা মুসলিম শক্তিকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিভিন্ন অপকৌশল, ষড়যন্ত্র ও ধোকার আশ্রয় নেয়।

অবশেষে ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল সম্মিলিত খ্রীষ্ট্র বাহিনী গ্রানাডা আক্রমণ করে বসে। এর আগে বিভিন্নভাবে মুসলমানদের মতবল ভেঙ্গে দেয়া হয়। সম্মিলিত বাহিনী ঘোষণা দেয় যে, মুসলমানরা যদি গ্রানাডার প্রবেশদ্বার খুলে দেন এবং মসজিদের আশ্রয়গ্রহণ করেন, তাহলে তাদের জন্য পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া হবে। মনোবল হারা মুসলমানরা তখন জীবনরক্ষার্থে মসজিদে আশ্রয় নেন। আর খ্রীষ্টানরা বাহির থেকে মসজিদে তালা দিয়ে অগ্নিসংযোগ করে দানবীয় উল্লাসে মেতে ওঠে। মুসলিম জনতার আহাজারীতে গ্রানাডার আকাশ-বাতাশ ভারী হয়ে আসে। এক সবই নিঃশেষ হয়ে যায়, থেমে যায় সকল মুসলিমের প্রাণস্পন্দন।

এভাবেই ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল মুসলমানদের সাথে প্রতরণা করে, ধোকা দিয়ে বোকা বানিয়ে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হতা করা হয়। আর সে ঘটনার স্মরণেই ইউরোপীয়রা প্রতিবছরের ১ এপ্রিল ‘ এপ্রিল ফুল’ তথা এপ্রিলের বোকা’ দিবস পালন করে আসছে। আমরাও বুঝেই হোক আর না বুঝেই হোক এই দিবসটি পালন করে আসছি যথারীতি। আসলে এটি কী আত্মপ্রতারণা নয় ? তা উপলব্ধি করার সময়টা বোধহয় অনেক আগেই হয়ে গেছে।

বিষয়: বিবিধ

৮৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File