এমন সহিংস নির্বাচন কাম্য নয়
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১০:১৮:৪২ রাত
সারা দেশেই ইউপি নির্বাচন চলছে। স্থানীয় নির্বাচনগুলো জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে বেশী উৎসব মুখর হয়ে থাকে। কারণ, প্রার্থীরা স্থানীয় পর্যায়ে হওয়ায় মানুষের মধ্যে একটা চাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যায়। প্রার্থীদের সাথে ভোটারদের পারিবারিক, সামাজিক ও আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকে। তাই স্থানীয় নির্বাচনগুলোকে একটা উৎসবের আবহ লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটটা সম্পূর্ণ আলাদা।
কারণ, এবারের নির্বাচনটা উৎসব মুখর হয়ে উঠতে পারেনি বরং হয়েছে সন্ত্রাস ও সহিংসতা কবলিত। মূলত এই প্রথম বারের মত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনটা দলীয়ভাবে হওয়ায় এই বিপত্তিটা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিও নির্বচনী সহিংসতার অন্যমত কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, প্রতিপক্ষের এজেন্ট উপর হামলাসহ ব্যাপক সন্ত্রাস ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ফলে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে ব্যাপকহারে। কিন্তু বিষয়টি সরকার ও নির্বাচন কমিশন একেবারে ভাবলেশহীন। নির্বাচনে ব্যাপক প্রাণহানীর ঘটনা ঘটলেও সরকার ও নির্বাচন কমিশন যুগলকন্ঠেই বলছে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হচ্ছে। আর হতাহতের ঘটনাকে বলা হচ্ছে বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় দফা ইউপি নির্বাচনে সন্ত্রাস ও সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে ৪২ জন। আহত ও পঙ্গু হয়েছে সহস্রাধিক মানুষ।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রথম নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় পুলিশ, বিজিবি ও সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণ ও হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ২৮ জন। দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনের দিনও শাসক পক্ষের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে শিশু, ঢাবির ছাত্র ও মহিলাসহ ১১ জন। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে আরও ৩ জন। গত ২ এপ্রিল মাদারীপুর ও যশোরে ২জন নিহত হয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরও সরকার ও নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হচেছ। বিষয়টি দেশের সচেতন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে।
অবশ্য এসবকে সরকার পক্ষ ও নির্বাচন কমিশন বিরোধী দল ও পরাজিত পক্ষের অপপ্রচার বলতেই বেশ পুলকবোধ করছে। কিন্তু তাদের একথা খুব একটা হালে পানি পাচ্ছে বলে মনে হয় না। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে কেন্দ্র দখলের মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। গত ৩ এপ্রিল বিকালে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকীবউদ্দিন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাত করে তিনি এসব কথা বলেন।
সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনকে আমরা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। এ কারণে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু এই নির্বাচন নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা খুবই করুণ। এ কারণে আজকে তৃতীয় বারের মতো ইসিতে এসে কথা বলছি। ২ দফা নির্বাচন দেখে আমাদের মনে হয়েছে দখলের মহোৎসব চলছে’।
আমাদের প্রার্থীকে বাধা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘প্রার্থীকে মেরে ভুট্টা খেতে ফেলে রাখা হয়েছে। কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটছে চোখের সামনে। আমরা এ ব্যাপারে ইসিকে চিঠি দিয়েছি। আমরা নির্বাচনের শেষ দেখতে চাই। কিন্তু আমাদেরকে যদি আপনারা আশ্বস্ত করতে না পারেন, তাহলে এই নির্বাচন কমিশনের উপর মানুষের আর কোনো আস্থা থাকবে না’।
মূলত বিরোধী দলগুলোর অভিযোগকে সরকার ও নির্বাচন কমিশন অপপ্রচার বলে পার পাওয়ার চেষ্ট করলেও সরকারের শরীক দলের নেতা ও মন্ত্রী রাশেদ খান মেমনের অভিযোগ কোন ভাবেই হালকা মনে করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। নির্বাচন যে অবাধ ও সুষ্ঠু হচ্ছে না সে কথা একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া সকলেই এ বিষয়ে একমত। তাই হয় নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধ করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত অথবা এই প্রাণঘাতি ও আত্মঘাতি নির্বাচনটাই বন্ধ করা দরকার। বিষয়টি যত তাড়াতাড়ি সংশ্লিষ্ট পক্ষ উপলব্ধি করতে ততই কল্যাণ।
ঢাকা- ৪ এপ্রিল/২০১৬ইং।
বিষয়: বিবিধ
৭৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন