চাই বুদ্ধিভিত্তিক জনপ্রতিনিধিত্ব
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ রাশেদুল ইসলাম ২২ মার্চ, ২০১৬, ১০:৩২:৩২ সকাল
মোঃ রাশেদুল ইসলাম ॥
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড- এ কথাটি
সর্বজনস্বীকৃত একটি উক্তি। অথচ
আমাদের দেশে শিক্ষাব্যবস্থার
একি হাল! যেখানে বলা হচ্ছে যে
দেশ যত শিক্ষিত সে দেশ তত
উন্নত। কিন্তু আমাদেরকে
উন্নয়নের স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে
অপরদিকে শিক্ষাব্যবস্থাকে করা
হচ্ছে ধ্বংস।
অর্থের জোরে কেউ নেতৃত্ব পায়,
কেউ রাজনৈতিক কারণে
প্রশাসনিক পর্যায়ে অবস্থান পায়।
অথচ শিক্ষাগত যোগ্যতা এখানে
অনুপস্থিত। ..তারপর রাজনৈতিক
কারণে ক্ষমতা পেলেও অধিকাংশ
হয় নৈতিকতা বিবর্জিত নতুবা
দুর্নীতি গ্রস্থ। আমি বলব না সবাই
খারাপ কিন্তু যারা ভাল/
সুশিক্ষিত তাদেরকে ভাল পদ দেয়া
হয় না। তারা মর্যাদা পায় না।
যার ফলে শিক্ষিত সমাজ
সেখানেও অবহেলিত।
অপরদিকে রাজনৈতিক শিকারে
মেধাবী ছাত্রসমাজ আজ
অবহেলিত, নির্যাতিত, জেল জুলুম,
কারাবন্দী। কাউকে জীবনের জন্য
পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে.. তাছাড়া
গুম হত্যাতো চলছেই।
আমি এর সম্পুর্ন বিরোধী। কেন
ছাত্রসমাজকে রাজনৈতিক
হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা
হবে? কেন এঁদেরকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট
করে দেয়া হবে? অথচ এরাই তো
আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে
ভুমিকা রেখেছিল, এরাইতো
ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছিল আজ
এঁদেরকেই হত্যা করা হচ্ছে টর্চার
করা হচ্ছে তাহলে কি আমাদের
দেশের স্বাধীনতা ধ্বংস করার
জন্য নতুন ভাবে পরিকল্পনা করা
হচ্ছে??
এবার আসছি মূল কথায়, বর্তমান
বিশ্বে চলছে ওহঃবষষবপঃঁধষ ডধৎ
(বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ)। যেখানে
অস্ত্রের জোড়ের চেয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক
কৌশল জরুরি। সেখানে এভাবে
মেধাবী বুদ্ধিজীবীদের নিঃশেষ
করে দেয়ার কোন যৌক্তিকতা
নেই। তাহলে কি যারা এঁদেরকে
ধ্বংস করে দিয়ে আমাদের
স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার কাজে
সহায়তা করছে?
এরাতো কখনোই স্বাধীনতার রক্ষক
হতে পারে না। আশ্চর্য!!
বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধই যে বর্তমান বিশ্ব
শাসণের মুল অস্ত্র তা পশ্চিমা
বিশ্বের দিলে তাকালে সহজেই
অনুমেয়। উচ্চতর জ্ঞান চর্চায়
তাদের বিনিয়োগের দিকে লক্ষ্য
করলে তা সহজেই উপলদ্ধি করা
যায়। চীনারা তো ঘোষণাই
দিয়েছে–
“তুমি যদি শত বছরের পরিকল্পনা
করো তবে গাছ লাগাও, আর যদি
হাজার বছরের পরিকল্পনা করো
তাহলে মানুষ গড়ো”
কি সুন্দর কথা। অর্থাৎ মানুষ গড়তে
পারলেই দেশ গড়া সম্ভব। চীন
আমেরিকা শিক্ষাকে সর্বোচ্চ
গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাদের দেশের
দিকে তাকালেই দেখা যাবে
শিক্ষিত নাগরীকরাই
জনপ্রতিনিধিত্ব করেন। অথচ
আমাদের দেশে শিক্ষাকে মুল্য
দেয়া হয় না। অর্থকেই শুধু মুল্য
দেয়া হয়। যার যত অর্থ আছে সে তত
বড় পদ পদবী পায়। এ যেন আইয়ামে
জাহেলিয়ার মত।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে
তাকালে দেখা যাবে এখানে চলছে
ভর্তি বানিজ্য। অর্থাৎ যার বাবার
অঢেল সম্পদ আছে সেই পড়তে,
শিখতে পারবে। আর যার সামর্থ্য
নাই সে পড়তে পারবে না। বলা
হচ্ছে শিক্ষা সার্বজনীন মৌলিক
অধিকার অথচ চলছে তাতেও
দুর্নীতি।
সর্বত্র প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায়
শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা আজ
নাজুক। প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত
হয়েও পায় না একাডেমীক
মুল্যায়ন। সারাবছর পড়েও করতে
পারে না ভাল রেজাল্ট বা হতে
পারে না ভাল প্রতিষ্টানে ভর্তির
সুযোগ। অপরদিকে কেউ কেউ
শুধুমাত্র ক্ষমতার বলে কিংবা
অর্থের বলে পেয়ে যাচ্ছে
যাবতীয় সুযোগ সুবিধা। ফলাফল যা
হবার তাই হচ্ছে। পাচ্ছে না রাষ্ট্র
যোগ্য প্রতিনিধিত্ব, নেতৃত্ব।
এরপর অযোগ্য, মেধাহীন,
শিক্ষার্থীরা পেয়ে যাচ্ছে
কোটার কারণে ভর্তির সুবিধা।
আমরা আমেরিকার সাথে যখন
পাল্লা দিতে যাই তখন আমরা
দেখেও দেখি না যে, তারা কোন
রকম কোটাব্যবস্থা রেখেছে কিনা
শিক্ষার ক্ষেত্রে। আমি জানি
জনপ্রিয় আলোচিত ব্যক্তি
মালালা ইউসুফজাই ও সেদেশে
ভর্তি হতে
চাইলে তাকে ভর্তি পরীক্ষা
দিতে হয়েছে। অথচ পশ্চিমাদের
পছন্দের তালিকায় তার নাম
রয়েছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট
আব্রাহাম লিঙ্কনের পরিবারকেও
ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে
হয়। কোন রকম মুক্তিযুদ্ধ কোটা,
সংখ্যালঘু কোটা, উপজাতি কোটা
কোনটার ব্যবস্থাই নাই। উন্নত
রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাকালে এটাই
আমরা দেখতে পাই। আমরা
উন্নয়নশীল রাষ্ট্র বাংলাদেশকেও
যদি উন্নয়নের শিখরে আরোহণ
করাতে চাই তাহলে এসব কোটা হয়
সীমিত করতে হবে নচেৎ বাদ
দেয়াই উত্তম হবে। তাহলেই সৎ,
যোগ্য, নেতৃত্ব পাওয়া যাবে।
জাতীয়, স্থানীয় সকল নির্বাচনেই
শিক্ষার গুরুত্বকে আমলে নেয়া হয়
না। ৮ম শ্রেণী পাশ বা খোলা
বাজারের শিল্পী যখন
জনপ্রতিনিধি সাংসদ হয় তখন
শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠাই
স্বাভাবিক।
কোন এক মনিষী বলেছিলেন “যে
দেশে গুনীজনদের কদর করা হয় না,
সেখানে গুনি জন্ম হয় না” কথাটা
আমাদের পরিবেশের সাথে
মিলিয়ে দেখবেন পুরোপুরি বাস্তব
মিলে যাচ্ছে… আমাদের সমাজে
এত গুনীজন আছেন, এত সমাজসেবক,
দেশপ্রেমিক আছেন কিন্তু তাঁদের
কোন মুল্যায়ন আমরা করি না। বরং
কেউ একটু ভাল করলেই আরো দশজন
তার বিরূদ্ধে উঠেপড়ে লেগে যায়…
হিংসার রোষাণলে দগ্ধ হয়ে
নিমিষে প্রতিভা, চেতনা, স্বপ্ন
ধ্বংস হয়ে যায়।
অন্যদিকে দেশের উন্নয়নের কাজে
সহযোগীদেরকে
লাঞ্চিত,অপমানিত, অবহেলিত,
নির্যাতিত হতে হয়। আবার
শিক্ষিত যারাই একটু ভাল সমর্থ্য
থাকে তারাই পাড়ি জমান
বিদেশে। অনেক ইঞ্জিনিয়ার
দেশের বাইরে বিশ্ব দরবারে
অবদান রেখেছেন। অথচ আমরা
দেশের কল্যানে তাদেরকে রাখার
কথা চিন্তাই করি না। তারা
যেখানে সুবিধা পাবে
সেখানেতো যাবেই। তাদের
আমরা খবরও রাখিনা…
আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক ড.
মাহাথির মোহাম্মদ বিদেশ থেকে
প্রযুক্তি এনে নিজের দেশে কাজে
লাগিয়ে আজ এত সমৃদ্ধশালী
করেছে মালয়েশিয়াকে। আমরা
সেদিকে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখি তার
থেকে শিক্ষা নেই না। অথচ তারা
স্বাধীন হয়েছে এইতো সেদিন।
মোটকথা,, আমাদের স্বাধীন..
সোনার বাংলাদেশ কুশিক্ষিত/
অশিক্ষিত নেতৃত্ব দ্বারা শাসিত
হতে থাকলে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে
যাবে। আর যদি বুদ্ধিবৃত্তিক
নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষিত সৎ,
যোগ্য, ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা
যায় (হোক নানা সে যেকোন দলীয়)
তবেই আমাদের প্রাণের দেশ,
উন্নয়নশীল রাষ্ট্র, বিশ্বের বুকে
মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।
তাই আসুন দেশের উন্নয়নে ও
স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায়
বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতিকে “হ্যাঁ”
বলি। খুলে দেই বুদ্ধিবৃত্তিক
রাজনীতি চর্চার সকল পথ। আমরা
ভীনদেশীদের হাতের পুতুল হতে
যাবো কেন? আমাদের রয়েছে
নিজস্ব স্বকীয়তা, সমৃদ্ধ ইতিহাস,
ঐতিহ্য। শুধু বাংলা ভাষাই তো
আমাদেরকে বিশ্বের বুকে
শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন
করেছে। তাই আহ্বান জানাই.. হে,
জাতি… এসোনা জেগে উঠি
সুশিক্ষায় শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে
বিশ্বের দরবারে সব বাঁধার শৃঙ্খল
মাড়িয়ে।
বিষয়: রাজনীতি
৯১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন