নাবিক থেকে প্রবাসী- পর্ব:০২
লিখেছেন লিখেছেন ক্রুসেড বিজেতা ১৬ নভেম্বর, ২০১৭, ০৭:৫৫:২৩ সন্ধ্যা
প্রথম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন: নাবিক থেকে প্রবাসী- পর্ব:০১
যথারীতি পরের দিন ভোর ০৫ টায় এসআরই'তে জাহাজ কাস্ট আপ (হারবার ত্যাগ) এর ঘোষনা দিয়ে সবাইকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহনের নির্দেশ দেয়া হলো।
কিছুক্ষণ পর এক্সিকিউটিভ অফিসার (XO) শীপের চীফ বোসন মেট, চীফ ইঞ্জিনরুম আর্টিফিশার,চীফ ইলেকট্রিক আর্টিফিশার, এবং সকল বিভাগীয় প্রধানদের জাহাজের ব্রীজে জমায়েত হওয়ার এনাউন্সমেন্ট করলেন। আমার বিভাগীয় প্রধান ছুটিতে থাকায় পরবর্তী সিনিয়র হিসেবে আমাকেও কাস্ট আপ ব্রীফে যেতে হলো। নেভিগেশন অফিসার(NO) আমাকে দেখে মুচকি হাসছিলেন। ব্রীফ শেষে কমান্ডিং অফিসারের (CO) অনুমতিক্রমে ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসার (EO) জাহাজের ইঞ্জিন স্টার্টের নির্দেশ দিলেন।
এসআরই'তে ঘোষনা হলো- এটেনশন অল পজিশন ফর......কাস্টআপ। অল পারসনেল ওয়্যার লাইফ জ্যাকেট এন্ড প্রিপিয়ার ফর কনফিডেন্স চেক!
ইঞ্জিন চেক আপ শেষে এক্সিকিউটিভ অফিসার বললেন- ফক্সেল (FOXL) টেকএন নাম্বার ওয়ান! শীপ কাস্টিং শুরু হলো।
এখানে বলে রাখা উত্তম- প্রতিটি যুদ্ধ জাহাজ কে তিন ভাগে হিসেব করা হয়।
১| সামনের অংশ কে বলা হয়: FOXL.
২| মধ্যেভাগ: MAIN TOP.
৩| পিছনের অংশ: QUARTER DECK.
টেক এন নাম্বার ওয়ান বলতে- সামনের অংশের লোকদের এক নাম্বার রোপ (রশি) খুলে নিতে বলা হয়েছে।
এভাবে পর্যায়ক্রমে সামনের অংশে ৪টা রোপ ও পিছনের অংশের ৪টা রোপ সিস্টেম অনুযায়ী খুলে জাহাজ কাস্টিং করে বোসন পাইপ বাজিয়ে পাশের জাহাজ কে স্যালুট দিয়ে পোতাশ্রয় ত্যাগ করলো।
(বিঃদ্রঃ-জাহাজ হারবারে (পোতাশ্রয়ে) থাকা অবস্থায় আকারভেদে একেক জাহাজ আলাদা নিয়মে রোপ দিয়ে বাঁধা থাকে। এবং জাহাজের নিরাপত্তার জন্যে আবহাওয়া বুঝে মাঝেমধ্যে বেশি রোপ দিয়ে জাহাজ বাঁধা হয়।)
খুলনা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে জাহাজ চলছে। প্রায় সন্ধ্যার দিকে বরিশাল পৌছালাম। সদর ঘাট থেকে সামান্য দূরে বিআইডব্লিউটি(BIWT)এর উদ্ধারকারী জাহাজ 'নির্ভীক' এর পাশে আমাদের জাহাজ বাঁধা হলো।
সবাই ক্লান্ত,, যাদের ডিউটি ওয়াচ নয় তারা ড্রেস,সু,মোজা খুলছে। লোকের চাপে বাথরুমে গোসলের চান্স পাওয়া খুব দুরূহ্। তারপর শীপে ওয়াটার ক্যাপাসিটি ১০ টন,, যে ককোন সসোর্স থেকে পানি লোডের ব্যবস্থা করে পাম্প চালাবে। পাশে সিভিল শীপের ক্রু'রা নদীর জল দিয়ে গোসল করছিলেন। জানতে পারলাম পানি লবনাক্ত নয়। সৌভাগ্যক্রমে আমরা ০৩ ব্যাচমেট একই শীপে ছিলাম। বাকেটে রশি বেঁধে নদী থেকে পানি নিয়ে কোয়ার্টার ডেকে দাঁড়িয়ে গোসল সেরে নিলাম। খাবার খেয়ে কোনমতে শার্ট টা ইন করে গ্যাংওয়েতে( জাহাজে ঢুকা ও বাহির হওয়ার রাস্তা) এসে হাজির।
ওওডি এবং পিওডি'র অনুমতিক্রমে কোয়ার্টার মাষ্টার এর কাছে
- লিবার্টি বুকে (অফিস আওয়ার এবং ডিউটি ওয়াচ ব্যাতীত জাহজের বাহিরে গমনকারীদের নাম রেজিস্টার খাতা) নাম লিখিয়ে জেটি অতিক্রম করে মুক্তিযোদ্ধা পার্কে গিয়ে ঢুকলাম।
জাটকা অপারেশনে এর আগে আরো ২/৩ বার বরিশাল যেতে হয়েছিলো।
তবে এবার বেশ প্রাণবন্ত মুক্তিযোদ্ধা পার্ক। মেলা চলছিলো,, নানা রকমের বাহারি দোকান পাঠ, সার্কাস শো,, এবং একপাশে স্টেজ শো'র নামে অনৈতিক যাত্রার রমরমা ব্যবসা ও অন্যপাশে জুয়ার আসার চলছিলো। অনেকে মোটরবাইক পেতে ২০ টাকা দামের টিকিটে লটারী কিনছিলেন । পার্কের ভিতরের অংশের চেয়ে বাহিরে নদীর পাশে বেশ সুন্দর পরিস্কার পরিবেশ। চমত্কার বসার ব্যাবস্থা ও উপভোগ্য পরিবেশ। শুনেছি প্রয়াত মেয়র হিরন সাহেব এ সংস্কার কাজ করিয়েছেন। আমরা ৩/৪ জন ঢুকতে গেলে টিকিট চেয়ে বসে গেটম্যান। সাথের সহকর্মী পরিচয় দেবার পর বেশ স্ব যত্নে খাতির করে ভেতরে ঢুকতে দিলো।
ঘুরে পুরো মেলা দেখলাম। বিপরীত গেট দিয়ে মেইন রোডে বের হয়ে পাশের চাইনিজ রেস্টুরেন্টে হালকা নাস্তা করে জাহাজে ফিরে আসতে উদ্যত হই।
ঘুমাতে হবে,,, ডিউটি আছে- রাত ০৩ টায় অপারেশন জাটকায় যেতে হবে।
জাহাজে ফিরে কোন প্লাটুনের সাথে যেতে হবে কি কি ক্যারি করতে হবে সব বুঝে নিলাম। কাগজে মার্কার পেন দিয়ে বড় করে লিখলাম- Shake up 02:45 am, খাটের পাশে টেপ দিয়ে লাগিয়ে শুয়ে পড়ি।
রাত ০২:৪৫... পেট্রোল ডিউটি ম্যান বালিশে আস্তে আস্তে টুকানি দিচ্ছে।
চোখ খুলে রেসপন্স করতেই বললো- স্যার সময় রাত ০২:৪৫ । আপনার ডিউটি আছে।
------- (চলবে)।
বিষয়: বিবিধ
১০৬২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন