ঈদ কি? ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে করণীয় সুন্নাত ও মুস্তাহাব সমূহ এবং ঈদের নামাজের নিয়ম ।
লিখেছেন লিখেছেন ক্রুসেড বিজেতা ০৬ জুলাই, ২০১৬, ০৩:১৮:০৭ দুপুর
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর যিনি আমাকে এ লেখার তাওফিক দান করেছেন,, লক্ষ কোটি দুরুদ ও সালাম পেশ করছি দু জাহানের বাদশা আহমদ মুজতবা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর।
---------------------------
ঈদ শব্দটি মূলত ছিল 'আউদ' (আইন-ওয়াও-দাল)।ওয়াও হরফটি ইয়া দ্বারা পরিবর্তিত হয়ে 'ঈদ' (আইন-ইয়া-দাল) হয়েছে । আরবী ক্রিয়াবাচক এই শব্দটির অর্থ হলোঃ ঘুরে আসা,ফিরে আসা।
ঈদের দিনের সুন্নাত ও মুস্তাহাব সমূহঃ
-----------------------------
ক) অন্য সব দিনের তুলনায় সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া।
খ) ঈদের দিন সকালে আহার করা।
গ) আহার্য বস্তুটি খেজুর হওয়া ।
ঘ) বেজোড় সংখ্যক খেজুর খাওয়া, (বিস্তারিতঃ বুখারী শরীফ, ঈদ উল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে খাওয়া সংক্রান্ত হাদীস অধ্যায,, হাদীস নং: 953 ) খেজুরের ব্যবস্থা না থাকলে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া উচিত। (এটা ঈদের নামাজের সুন্নাত নয়,ঈদের দিনের সুন্নাত)
ঙ) মিসওয়াক করা। অযু করা,নামাজ পড়া এবং বড় কোন সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশে মিসওয়াক করা সুন্নাত।
চ) সুন্নাত তরীকায় গোসল করা।
ছ) রঙ বিহীন সু-গন্ধি ব্যবহার করা।শরীরে যেন কোন রঙ না লাগে। পুরুষের জন্য মাথা ও দাড়ি ছাড়া মেহেদি ব্যবহার বৈধ নয়। এলকোহলযুক্ত সেন্ট ব্যবহার করা উচিৎ নয়। আঙ্গুর, খেজুর ও কিসমিস থেকে তৈরি এলকোহলযুক্ত সেন্ট ব্যবহার করা হারাম এবং তা নাপাক।
জ) নিজের সুন্দরতম উত্তম কাপড় পরিধান করা। সুন্নতি পোষাকই হল উত্তম পোষাক। নতুন কাপড় হলে আরো ভাল। সাদা না হয়ে অন্য রং-এর কাপড় হলেও অসুবিধা নেই। তবে সাদা রঙ রাসূলুল্লাহ আল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট অধিক পছন্দনীয়।
ঝ) শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে যথাসাধ্য সুসজ্জিত হওয়া।
ঞ) ফজরের নামায নিজ মহল্লার মসজিদে আদায় করা ।
ট) সাদাকাতুল ফিতর (ওয়াজিব) ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই আদায় শেষ করা।
ঠ) প্রভাতে অর্থাৎ তাড়াতাড়ি ঈদগাহে গমন করা।
ড) ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া।
ঢ) এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে আসা। যাতে করে বিভিন্ন পথে মানুষের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ হয় এবং তাদের খোঁজ খবর নেয়া যায়। হযরত জাবের (রাযি,) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদগাহ থেকে রাস্তা পরিবর্তন করে ফিরতেন। (বুখারি শরিফঃ ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহ থেকে ফেরার পথে রাস্তা পরিবর্তন সংক্রান্ত অধ্যায়, হাদিস নং-৯৮৬)
ণ) ঈদের নামায ঈদ্গাহে গিয়ে পড়া, অর্থাৎ বিনা কারণে মসজিদে না পড়া ।
ত) খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করা।
থ) সাধ্যমত বেশি বেশি দান-খয়রাত করা।
দ) তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম ( আল্লাহ আমাকে ও আপনাকে কবুল করুক) এই জাতীয় বাক্য দ্বারা অপর মুসলমানকে অভ্যর্থনা জানানো।
ধ) ঈদগাহে যেতে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা। (ঈদুল ফিতরে আস্তে আস্তে, ঈদুল আযহায় উচ্চস্বরে) ঘরে-বাইরে সব সময় এই তাকবীর পাঠ করতে কোন অসুবিধা নেই। ঈদ্গাহে পৌঁছে ইমাম সাহেব কর্তৃক ওয়াজ-নসিহত শুরু করার আগ পর্যন্ত তাকবির পড়তে থাকা।
ন) ঈদুল আযহার নামায ঈদুল ফিতরের তুলনায় তাড়াতাড়ি পড়া। কেননা, ঈদুল আযহার পর কুরবানি করতে হয়, আর ঈদুল ফিতরের পূর্বেই ফিতরা আদায় করে শেষ করতে হয়।
ঈদের নামাজের নিয়মঃ
------------------
নিয়তঃ যে কোনো ভাষাতেই নামাজের নিয়ত করা যায়। নিয়ত মনে মনে করাই যথেষ্ট। ঈদের দিন ইমামের পেছনে কিবলামুখী দাঁড়িয়ে মনে এই নিয়ত করে নিবে—‘আমি অতিরিক্ত ছয় তাকবিরসহ এই ইমামের পেছনে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করছি।’
নামাজঃ এরপর উভয় হাত কান বরাবর ওঠিয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বেধে নিবে। হাত বাঁধার পর ছানা অর্থাত্ ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা’ শেষ পর্যন্ত পড়ে নেবে। এরপর আল্লাহু আকবার বলে হাত কান পর্যন্ত ওঠিয়ে ছেড়ে দেবে। দ্বিতীয়বারও একই নিয়মে তাকবির বলে হাত ছেড়ে দেতে হবে। ইমাম সাহেব তৃতীয়বার তাকবির বলে হাত বেঁধে আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ে সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য যে কোনো সূরা তিলাওয়াত করবেন। এ সময় মুক্তাদিরা নীরবে দাঁড়িয়ে থাকবেন। এরপর ইমাম সাহেব নিয়মমত রুকু-সিজদা সেরে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবেন। মুক্তাদিরা ইমাম সাহেবের অনুসরণ করবেন।
দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব প্রথমে সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য সূরা পড়বেন। এরপর আগের মতো তিন তাকবির বলতে হবে। প্রতি তাকবিরের সময়ই উভয় হাত কান পর্যন্ত ওঠিয়ে ছেড়ে দিতে হবে। চতুর্থ তাকবির বলে হাত না ওঠিয়েই রুকুতে চলে যেতে হবে। এরপর অন্যান্য নামাজের নিয়মেই নামাজ শেষ করে সালাম ফেরাতে হবে। ঈদের নামাজ শেষে ইমাম সাহেব খুতবা পাঠ করবেন। জুমার খুতবার মতো এই খুতবা শোনা মুসল্লিদের জন্য ওয়াজিব। খুতবার সময় কথাবার্তা বলা, চলাফেলা করা, নামাজ পড়া সম্পূর্ণরূপে হারাম। কারও ঈদের নামাজ ছুটে গেলে কিংবা যে কোনো কারণে নামাজ নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় একাকী তা আদায় বা কাজা করার কোনো সুযোগ নেই। তবে চার বা তার অধিক লোকের ঈদের নামাজ ছুটে গেলে তাদের জন্য ঈদের নামাজ পড়ে নেয়া ওয়াজিব।
------------------বি:দ্র: এইখানে কোন ফিকহি আলোচনা করা আমার উদ্দেশ্য না। যিনি ভিন্ন সংখ্যার তাকবিরের সাথে বা ভিন্ন নিয়মে পড়তে চান অথবা অন্যান্য ফিকহি বিষয় জানার জন্য অভিজ্ঞ কোন আলেমের সাথে যোগাযোগ করুন।
প্রয়োজনে এ সংক্রান্ত হাদীস ও দলিলের জন্যে: Click this link
বিষয়: বিবিধ
২৩০০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
May Allah bless: Youre day's with happiness, you're weeks with prosperity, Youre month with contentment and you're year with love.
এলকোহল পান হারাম কিন্তু অন্যভাবে ব্যবহার হারাম হওয়ার কোন কারন নেই। পাকস্থলি তে না গেলে অন্যভাবে এটা নেশার সৃষ্টি করে না।
May Allah bless: Youre day's with happiness, you're weeks with prosperity, Youre month with contentment and you're year with love.
May Allah bless: Youre day's with happiness, you're weeks with prosperity, Youre month with contentment and you're year with love.
আপনার সার্বিক কল্যাণ সু স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। ভালো থাকবেন অহর্নিশি ।
পোস্টের শেষে বলে দিয়েছি যে: এখানে কোন ফিকহি আলোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ দ্বীনি আলেম সাহেবদের সাথে যোগাযোগের কথা পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
খুবই সীমিত আমার জ্ঞান, একদম খালি কলসি-সেই কলসীর জল আপনারাই।
ক্ষুদ্র জ্ঞানে আপনার উত্তর: কোন ব্যক্তি প্রথম সাক্ষাত হলে তখন মুআনাকা করা সুন্নাত। তাই ঈদের দিন যদি কারো তা প্রথম সাক্ষাত হয় তাহলে মুআনাকা করতে পারবে। "কিন্তু শুধু ঈদের দিনকে কেন্দ্র করে সকলে মুআনাকা করা বিদআত"। মুআনাকাকারী উভয়ে ডান গলা মিলাবে এবং মুআনাকা শুধু এক দিকেই যথেষ্ট, তিনবার করা জরুরী নয়। সাধারণত দুই অবস্থায় মুআনাকা করা জায়েয নয়। এক. যেখানে নিজের মধ্যে শাহওয়াত (কামভাব) থাকে কিংবা নিজের মধ্যে বা অপর পক্ষের মধ্যে শাহওয়াত (কামভাব) এসে যাওয়ার আশংকা থাকে (তবে বিবির ক্ষেত্রে ভিন্ন বিষয়)। দুই. মুআনাকা করতে গেলে যদি কাউকে কষ্ট দেয়া হয়। (দেখুনঃ আহকামে জিন্দেগী)
মুআনাকা করা সুন্নাত। বড়দের প্রতি আজমত এবং ছোটদের প্রতি শফকত ও মহব্বতের সাথে মুআনাকা করবে। (দেখুনঃ যাওয়াহিরুল ফিকহ্)
মুআনাকা করার সময় এই দুআ পড়বে- اَللّهُمَّ زِدْ مَحَبَّتِيْ لِلّهِ وَرَسُوْلِه উচ্চারণ- আল্লাহুম্মা যিদ মুহাব্বাতী লিল্লাহি ওয়া রাসূলিহী। অর্থ- হে আল্লাহ! আমার মহব্বত বৃদ্ধি কর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের খাতিরে। (দেখুনঃ ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া)
মন্তব্য করতে লগইন করুন